দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটির প্রতিবাদে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করবেন বা করতে যাচ্ছেন; এমন খবর এখন চাউর হয়ে গেছে বেশ ভালোভাবেই। আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রে বসে প্রধান নির্বাচক পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন ফারুক আহমেদ। পত্র-পত্রিকা, টিভি এবং অনলাইন মিডিয়ায় ফারুক আহমেদের সরে দাঁড়ানোর খবর ফলাও করে প্রচারও হয়েছে।
ঢাকায় ফারুক আহমেদের ঘনিষ্ঠ মহলও নিশ্চিত করছে, তিনি সম্ভবত প্রধান নির্বাচকের পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। বিসিবিও ধরে নিয়েছে ফারুক আহমেদ হয়ত আর প্রধান নির্বাচক থাকছেন না। বিকেএসপিতে আবাহনী-রূপগঞ্জের খেলা দেখতে গিয়ে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন যা বলেছেন, তা শুনে মনে হলো, ফারুক পদত্যাগ পত্র জমা দিলেই বোর্ড তা গ্রহণ করবে।
সোমবার বিকেএসপিতে আবাহনী ও লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ ম্যাচ দেখতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ফারুককে প্রধান নির্বাচক ধরেই দ্বি-স্তরের নির্বাচক কমিটির রূপ রেখা তৈরি হয়েছে। ফারুকই মনোনীত প্রধান নির্বাচক। এখন শোনা যাচ্ছে ফারুক নাকি থাকতে চাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে কী আর করা!’
উপরের মন্তব্যে পরিষ্কার, বিসিবি নীতিগতভাবে ফারুকের পদত্যাগ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফারুক আহমেদ সত্যিই সরে দাঁড়ালে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন কে? মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে কী প্রধান নির্বাচক করা হবে; না কি ফারুকের জায়গায় যিনি আসবেন, তাকেই প্রধান নির্বাচক মনোনীত করা হবে?
সোমবার সকাল থেকে ক্রিকেট পাড়ায় মহামূল্যবান এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সবার কৌতুহলি প্রশ্ন একটাই, ফারুক সরে দাঁড়ালে কে হবেন প্রধান নির্বাচক ? মিনহাজুল আবেদিন নান্নু? না অন্য কেউ? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই অন্য কেউটা তাহলে কে? জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভেতরের খবর।
সেই ভেতরের খবর হলো, ফারুকের বিকল্প হিসেবে বোর্ডের প্রথম পছন্দ আতহার আলী খান। সোমবার বোর্ডের বিভিন্ন মহলে কথা বলে জানা গেছে, বোর্ড ফারুকের আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ পত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত কিছুই জানাবে না। তবে ভেতরে ভেতরে মনোনয়ন একরকম চূড়ান্ত। ফারুক সরে দাঁড়ালে তার জায়গায় আসবেন আরেক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার আতহার আলী।
প্রসঙ্গত, এর আগে ফারুকের সঙ্গে নির্বাচক কমিটিতে ছিলেন আতহার। এখন প্রশ্ন হলো, ফারুকের জায়গায় আতহারের অন্তর্ভুক্তি ঘটলেও প্রধান নির্বাচক হবেন কে? যেহেতু আরেক নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন বয়সে নবীন। জাতীয় দলের নির্বাচক কমিটিতে এই প্রথম জায়গা পেলেন। তাই তার প্রধান নির্বাচক হবার প্রশ্নই আসে না। সে ক্ষেত্রে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সম্ভাবনাই খালি চোখে বেশি বলে মনে হচ্ছে।
তবে ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন, হাবিবুল বাশার সুমনকে শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে মূল নির্বাচক কমিটিতে থেকে সরিয়ে যে ভাবে নারী দলের প্রধান নির্বাচক করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মনোনয়নেও শেষ পর্যন্ত একটা বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট এক পক্ষের কথা, কে জানে আতহার আলী শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচক হয়েও যেতে পারেন। তবে অন্য সমীকরণে সেটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর প্রধান নির্বাচক হবার সম্ভাবনাই বেশি।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন যাকে চাইবেন, তিনিই হবেন প্রধান নির্বাচক; কিন্তু ভেতরের খবর হলো, হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যাকে চাইবেন, বা যার নাম প্রস্তাব করবেন- তিনিই হবেন প্রধান নির্বাচক। কারণ দল সাজানো নিয়ে প্রধান নির্বাচক ফারুকের সঙ্গে মত পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব থেকেই হাথুরুসিংহে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন। তার সাজানো ফর্মুলা মেনেই আসলে দ্বিস্তর বিশিষ্ট নির্বাচক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে বিসিবি।
আগের নির্বাচক কমিটির অন্য দুই সদস্য ফারুক আহমেদ ও হাবিবুল বাশারের তুলনায় মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে বেশি পছন্দ কোচ হাতুরাসিংহের। এর একটা বড় কারণও আছে। হাথুরু যখন মোহামেডানের হয়ে ঢাকা লিগ খেলতে এসেছিলেন, তখন মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নুই। তাই তার সঙ্গে পূর্ব সখ্য বেশি।
কোচ হিসেবে বাংলাদেশে আসার পর দু’জনের কথা-বার্তাও হয় বেশি। মোদ্দা কথা মিনহাজুলের প্রতি একটা অন্যরকম দূর্বলতা রয়েছে হাথুরুর। তার বিশ্বাস, বর্তমান নির্বাচক কমিটিতে মিনহাজুলই তার বিশ্বস্ত মানুষ। কাজেই আতহার আলী নয়, বোর্ড প্রধানের কাছে হাথুরুসিংহে প্রধান নির্বাচক হিসেবে মিনহাজুলের নাম প্রস্তাব করবেন- তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
ওদিকে ক্রিকেট পাড়ায় আতহার আলী আবার ফারুক আহমেদের খুব কাছের জন হিসেবে পরিচিত। ক্ষেত্রে আতহারকে নির্বাচক করা হলেও প্রধান নির্বাচক করার আগে একবার নয় দশবার ভাববে বোর্ড। সে কারণেই ভাবা হচ্ছে বোর্ড হাথুরুর প্রস্তাব মেনে নেবে সন্দেহাতীতভাবে। সে ক্ষেত্রে সাজ্জাদ আহমেদ শিপনের সাথে আতহার আলী আরেক নির্বাচক হলেও মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর প্রধান নির্বাচক হবার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।