রাজের সঙ্গে বিচ্ছেদের ইঙ্গিত দিলেন পরীমণি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ক্লিপ ভাইরালের পরই স্বামী ও চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে সংসারজীবনের টানাপড়েনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পরীমণি। এদিকে, নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের সঙ্গে ফাঁস হওয়া ছবি-ভিডিও নিয়ে রাজও কিছুটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে ফেসবুকে রাজের উদ্দেশে নিজের আক্রোশ প্রকাশ করেছেন পরীমণি। নিজের ফেসবুক পোস্টে অনৈতিক সম্পর্ক আর মদ্যপ স্বভাবের জন্য রাজকে ভর্ৎসনা করেছেন এ চিত্রনায়িকা। আজ রোববার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে পরীমণি বলেন, “শরিফুল রাজ, তুমি আমার দেখা নিকৃষ্টতম মানুষ। তোমার ওই নোংরা মুখে কখনও রাজ্যের নাম উচ্চারণের দুঃসাহসও দেখাবে না। আজও মাঝরাতে তোমার মাতলামি মেনে নিয়ে বাচ্চাকে দেখাতে নিয়ে গেছিলাম তোমার কাছে! পশু থেকে আগে তোমার উচিত সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হওয়া। অপেক্ষা করো আর দেখো সুন্দরী প্রেমিকাদের আমি কী করি। এ পৃথিবীর মানুষের অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।” অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সঙ্গে শরিফুল রাজের ফোনালাপের ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে পরীমণি এসব কথা বলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, পরীমণিই ফেসবুকে তিশা, তুষি, সুনেরাহর সঙ্গের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ফাঁস করেছে- জয়ের এমন ধারণায় রাজ সহমত পোষণ করছেন। অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের সঙ্গের ছবি-ভিডিও ফাঁস হওয়া নিয়ে পরীমণিকে দায়ী করেন শাহরিয়ার। এরপর এ অভিনেতা পরীমণিকে বয়কটেরও ঘোষণা দেন। যদিও সঙ্গে এও বলেন, তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলে তিনি পরীমণির কাছে ক্ষমা চাইবেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় পর জয়কে ফোন করেন রাজ। জয় ভেবেছিলেন পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় রাজ হয়তো তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করবেন। তবে ঘটেছে বিপরীত। জয়ের ভাষ্য, রাজ ওই ভিডিওটি পছন্দ করেছেন এবং তার সঙ্গে নিজের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। জয় তার পেজ থেকে রাজের সঙ্গে সেই আলাপের কিছু অংশও পোস্ট করেছেন। ফোনালাপে শরিফুল রাজ বলেন, “আমার মনে হয় না বিয়ের আগের বিষয়গুলো কোনো বড় ব্যাপার। আমি কখনও কাউকে কারও অতীত জীবনের জন্য অসম্মান করিনি। সে ভালো মানুষের সঙ্গে রয়েছেন, যারা তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তার স্বামী হিসাবে দাবি করার কারণে হয়ত আমাকে অভিনয় বন্ধ করতে হবো। আপনি আমাকে নিজের অবস্থান ফিরে পাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেটা করার জন্য বড়সড় ঝামেলা করতে হতে পারে। আমার মনে হয় না এখন এমন কিছু করা উচিত।” এ অভিনেতা আরও বলেন, “আমরা স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলছি, সবই ঠিক আছে। কিন্তু পরদিন সে ফেসবুকে আমার ব্যক্তিগত জিনিস ছেড়ে দেয়। এসব দেখে মাঝেমাঝে আমি ধন্দে পড়ে যাই।” এছাড়া, স্ত্রীর সঙ্গে সাংসারিক ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে সাংবাদিকরা তাকে অনুরোধ জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাজ। রাজ বলেন, “আমি জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি। যখনই আমি ভালো সময় পার করতে যাই, আমাকে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। সংবাদপত্র থেকে পারিবারিক জীবন নিয়ে আমাকে কথা শুনতে হয়।” সুনেরাহ-তিশাকে এখনও নিজের ভালো বন্ধু দাবি করে এ ঢালিউড তারকা বলেন, “সম্প্রতি আমি শুটিংয়ের সময় সুনেরাহর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি নিয়ে হতাশ এবং আমিও একই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি ঠিক আছি নাকি জানার জন্য তারা আমাকে ফোন করেছিল। বিয়ের আগে তাদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। আমি বুঝি না সে আমাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে কেন। সে দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। পর্দায় অভিনেত্রীদের রোমান্টিক দৃশ্য না করতে এখন কি আমাকে অভিনয় থামিয়ে দিতে  বা মেয়েদের মতো বেশভূষা নিতে হবে। ১২ দিন ধরে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।” এদিকে, পরীমণির সঙ্গে রাজের বিবাহিত সম্পর্কে ভাঙনের সুর উঠেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। পরীমণি প্রথম আলোকে বলেন, “গত ২০ মে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে রাজ। এরপর থেকে সে বাসায়ও ফেরেনি, ফোনটাও ধরে না আর। তবে বাসা থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে যাওয়া, ফোন না ধরার যে কথা পরীমনি বলছেন, সেটা ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন রাজ। আর এসব না ছড়ানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।” রাজ বলেন, “আমি বাসা থেকে কেন বেরিয়ে এসেছি, পরী ভালো করে জানে। কীভাবে বেরিয়ে এসেছি, কেন বেরিয়ে এসেছি, তাও সে ভালো করে জানে। ওই দিন বাসায় তার ও আমার পরিচালক গুরু গিয়াস উদ্দিন সেলিম ছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন।” পরীমনির বক্তব্যকে মিথ্যাচার অভিহিত করে রাজ বলেন, “আমি ঢাকায়ই আছি, কাজ করছি। এরইমধ্যে দেয়ালের দেশ, ইনফিনিটি, কাজলরেখা ছবিগুলোর ডাবিং শেষ করছি। সুতরাং আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। এসব মিথ্যাচার করে কী লাভ হচ্ছে, তা আমার জানা নাই। আমি সব সময়ই পরীকে সম্মান দিয়ে কথা বলি। কিন্তু সে কেন এমন করে, বুঝি না।” রাজের বক্তব্যের প্রসঙ্গে পরীমণি বলেন, “রাজ বাইরে ছিল, সেলিম ভাই ও তার বউ তাকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় এসেছিল। সম্ভবত, এটি গত ২০ মের ঘটনা। আসার আগে সেলিম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, আমি রাজকে সঙ্গে করে নিয়ে তোমার বাসায় আসছি। এসে বলেন, রাজ তো তোমার সঙ্গে থাকতে চায় না। বিচ্ছেদের ব্যাপারে চিন্তা করতে পারো। আমি বললাম, ও আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, তাহলে ওই আমাকে ডিভোর্স দিক। আমি কেন দিতে যাব। পরে সেলিম ভাই বললেন, যদি তোমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে বাচ্চাকে দেখভাল করতে কীভাবে কী করবে, চিন্তাভাবনা করে দেখো। এরপর আমি বললাম, বাচ্চা আমার কাছেই থাকবে। তবে বিচ্ছেদ হওয়ার পর অবশ্যই সে বাচ্চা দেখতে আসতে পারবে। তবে শর্ত, সে অস্বাভাবিক সময় বাসায় আসলে বাচ্চাকে দেখতে দেব না। যদি রাত চারটায় আসে, ভোরবেলায় আসে, তাহলে তো বাচ্চা দেখতে দেওয়ার সুযোগই নাই। স্বাভাবিক, সঠিক সময়ে এসে সে বাচ্চা দেখতেই পারে। কোনো সমস্যা নাই।” এ চিত্রনায়িকা আরও বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে ওই রাতে সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক কথা কাটাকাটি হয়। রাজের সঙ্গেও হয়েছে। কারণ, ওই দিন বিভিন্নজনের সঙ্গে মিলিয়ে রাজ আমার চরিত্র নিয়েও অনেক কথা তুলেছিল। একটা পর্যায়ে সেলিম ভাই, তার বউসহ রাজ তার সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর আর আসেনি।” পরীর এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রাজ বলেন, “আমি খুব হতাশ। ঢাকায় আসার পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ে আমি কখনোই এত আপসেট হইনি। আমি এভাবে কখনোই মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি। আমার কাছে আর এসব কথা জানতে চাইবেন না। আমি এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না, কথা বাড়াতে চাই না। আমি একটু নিরিবিলি, শান্তিতে থাকতে চাই।” এর আগে, গত বছর অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের সঙ্গে রাজের সম্পর্ক জড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন পরীমণি। মূলত তখন থেকেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক যাচ্ছিল না স্বীকার করে পরীমণি বলেন,‘দামাল’ ছবির মুক্তির সময় থেকেই আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক যাচ্ছিল না। রাজ আগের মতো নিয়মিত বাসায় থাকত না। সন্তানের প্রতিও তার সে ধরনের দায়িত্ব চোখে পড়েনি। এরপরও সিনেমার বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে দেখা গেছে দুজনকে। এ ব্যাপারে পরীমণি বলেন, এগুলো ছিল রাজের লোকদেখানো। আমার কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সঙ্গে সে যেত। বিশ্বাস করেন, কিছুদিন আগে আমি হাসপাতালে ছিলাম, আমাকে দেখতেও যায়নি সে। আমার সঙ্গে তার এখন শারীরিক, মানসিক কোনো অ্যাটাচমেন্টই নাই। আমি যখন হাসপাতালে, তখনই বাসায় রাজ তার জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছিল। আগেই প্রস্তুত ছিল বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে। সম্পর্ক রাখবে না। এভাবে তো আর সংসার, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বিবাহবিচ্ছেদের প্রসঙ্গে পরীমণি বলেন, ও তো আমাকে ছেড়েই চলে গেছে, বিচ্ছেদ তো হয়েই গেছে। আমি আর কল্পনাতেও ভাবতে চাই না শরীফুল রাজ আমার জামাই। একটা মানুষ চলে গেলে তো আর ধরে রাখা যায় না।” হাসতে হাসতে পরী আরও বলেন, “রাজ এখন বলে কী, আমাদের বিয়ের কাবিননামা নাকি ভুল। আমাদের নাকি ঠিকঠিক বিয়েই হয়নি। যে এভাবে বলতে পারে, সে ভয়ংকর মানুষ। তার সঙ্গে থাকা যাবে না। আমি চাই সে আমাকে তালাক দিয়ে দিক। আমি ওর প্রাক্তন, এটাই শুনতে আমার আরাম লাগবে। আমি রাজের বউ, এটি আর শুনতে চাই না।” ঢালিউড অভিনেত্রী আরও বলেন, “রাজ আমার বাচ্চার বাবা, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আমরা একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য আফসোস হয়ে থাকবে, বাবা-মাকে নিয়ে সুখী জীবন পাঁচ্ছে না আমাদের সন্তান। আর এর জন্য দায়ী রাজ। আমাকে দোষ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। এই সংসার টেকানোর জন্য আমি কী পরিমাণ চেষ্টা করে গেছি, রাজও জানে সেটি।” সন্তানের দিকে তাকিয়ে কিংবা নিজের উপলব্ধি থেকে যদি রাজ আবার ফিরে আসেন, সেক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে পরী বলেন, বিয়ে-সংসার কি মুদিদোকানের মতো কারবার? ফিরে আসার আর সুযোগ নাই। যে মানুষ স্ত্রী, বাচ্চার মার চরিত্র নিয়ে কথা তুলতে পারে, তার সঙ্গে ঘর করার সুযোগ নাই আর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর