ঢাকা ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

ঢাকা রাজধানীর অধিকাংশ ভবনই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
  • ৮৩ বার

বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঘনবসতিপূর্ণ শহরটির ঝুঁকি কমাতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা-এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। আর তীব্র কিংবা মাঝারি ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যেতে পারে রাজধানীর ৮৫ শতাংশ ভবন। মহাদুর্যোগের পর নগরে স্বাভাবিকতা ফিরতে সময় লাগবে বহু বছর। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে করা এক যৌথ জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। এর আগে ২০১৫ সালে নেপালে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার। সেই সিদ্ধান্তও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া ওই বৈঠকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এনডিএমআইএস) নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এটিও আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে চারশ’ বছরের পুরোনা রাজধানীতে তৈরি হচ্ছে লাখ লাখ ভবন। এসব বাড়িঘর আর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে বেশ ক’বার পরিবর্তন হয়েছে বিধিমালা। ১৯৫২ সালে তৈরি করা নিয়ম বদলে গেলেও শুধু বদলায়নি ঢাকা। এর অন্যতম কারণ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ। আর এসবের জন্য রাজউকের দুর্বল তদারকিকেই দায়ি করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকার ৮৫ শতাংশ দালানকোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পরে যে তীব্রতা অনুভূত হবে সেই তীব্রতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-ওয়াসার লাইন থেকে বড় ধরনের বিপদ সংঘটিত হতে পারে। নগরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অবশ্য রাজউক বলছে ভিন্ন কথা। প্রতিষ্ঠানের দাবি, নিয়ম পরিবর্তনের ফলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বেহাল অবস্থা। জিপিএস বসিয়ে পুরোনো পদ্ধতির আমূল সংস্কার করতে চায় তারা।  রাজউক প্রধান প্রকৌশলী উজ্বল মল্লিক বলেন, নতুন নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাত যাতে ঝুঁকিপূর্ণ না হয় সেজন্য জিপিএসের ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্যাসের লাইন যদি চিহ্নিত করা না থাকে তবে ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতায় ভোগান্তি পেতে হবে। যেসব ইউটিলিউসগুলো আছে সেগুলো জিপিএস দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। অনুমোদিত নকশার বাইরে তৈরি ভবনগুলো এখনই ভাঙার পক্ষে মত দেন তিনি। জানা গেছে, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ওই কম্পন হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা।  সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তীব্র কম্পন অনুভূত হতে পারে, যা এই শহরের দুর্বল ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ঢাকার সম্প্রসারিত বা নতুন নতুন আবাসিক এলাকার মাটি নরম ও দুর্বল। এ ধরনের মাটিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বহুতল ভবন হলে তা মাঝারি মাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। লালমাটির এলাকায় যেসব এক থেকে তিনতলা ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।  এদিকে ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার  বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ঢাকার ভবনগুলোর বেশিরভাগই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ভূমিরূপ মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৫ শতাংশ মূলত লাল মাটির ওপরে গড়ে ওঠা। এই মাটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। বাকি ৬৫ শতাংশ এলাকা মূলত নদীর তীরবর্তী কাদামাটি ও বালুমাটির এলাকা। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পূর্বাচল নতুন শহর এ ধরনের মাটির। বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে।  এরকম আইন না মেনে এবং নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা না হলে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ঢাকা রাজধানীর অধিকাংশ ভবনই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

আপডেট টাইম : ০৯:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঘনবসতিপূর্ণ শহরটির ঝুঁকি কমাতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা-এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। আর তীব্র কিংবা মাঝারি ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যেতে পারে রাজধানীর ৮৫ শতাংশ ভবন। মহাদুর্যোগের পর নগরে স্বাভাবিকতা ফিরতে সময় লাগবে বহু বছর। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে করা এক যৌথ জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। এর আগে ২০১৫ সালে নেপালে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার। সেই সিদ্ধান্তও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া ওই বৈঠকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এনডিএমআইএস) নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এটিও আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে চারশ’ বছরের পুরোনা রাজধানীতে তৈরি হচ্ছে লাখ লাখ ভবন। এসব বাড়িঘর আর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে বেশ ক’বার পরিবর্তন হয়েছে বিধিমালা। ১৯৫২ সালে তৈরি করা নিয়ম বদলে গেলেও শুধু বদলায়নি ঢাকা। এর অন্যতম কারণ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ। আর এসবের জন্য রাজউকের দুর্বল তদারকিকেই দায়ি করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকার ৮৫ শতাংশ দালানকোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পরে যে তীব্রতা অনুভূত হবে সেই তীব্রতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-ওয়াসার লাইন থেকে বড় ধরনের বিপদ সংঘটিত হতে পারে। নগরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অবশ্য রাজউক বলছে ভিন্ন কথা। প্রতিষ্ঠানের দাবি, নিয়ম পরিবর্তনের ফলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বেহাল অবস্থা। জিপিএস বসিয়ে পুরোনো পদ্ধতির আমূল সংস্কার করতে চায় তারা।  রাজউক প্রধান প্রকৌশলী উজ্বল মল্লিক বলেন, নতুন নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাত যাতে ঝুঁকিপূর্ণ না হয় সেজন্য জিপিএসের ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্যাসের লাইন যদি চিহ্নিত করা না থাকে তবে ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতায় ভোগান্তি পেতে হবে। যেসব ইউটিলিউসগুলো আছে সেগুলো জিপিএস দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। অনুমোদিত নকশার বাইরে তৈরি ভবনগুলো এখনই ভাঙার পক্ষে মত দেন তিনি। জানা গেছে, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ওই কম্পন হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা।  সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তীব্র কম্পন অনুভূত হতে পারে, যা এই শহরের দুর্বল ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ঢাকার সম্প্রসারিত বা নতুন নতুন আবাসিক এলাকার মাটি নরম ও দুর্বল। এ ধরনের মাটিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বহুতল ভবন হলে তা মাঝারি মাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। লালমাটির এলাকায় যেসব এক থেকে তিনতলা ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।  এদিকে ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার  বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ঢাকার ভবনগুলোর বেশিরভাগই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ভূমিরূপ মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৫ শতাংশ মূলত লাল মাটির ওপরে গড়ে ওঠা। এই মাটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। বাকি ৬৫ শতাংশ এলাকা মূলত নদীর তীরবর্তী কাদামাটি ও বালুমাটির এলাকা। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পূর্বাচল নতুন শহর এ ধরনের মাটির। বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে।  এরকম আইন না মেনে এবং নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা না হলে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।