কৃষি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অঞ্চলভেদে উন্নয়ন সহায়তায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে দেশের কৃষি বিভাগ। ২০২০ ও ২০২৫ মেয়াদে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তায় ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষি যন্ত্র বিতরণের জন্য ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

ফলে বোরো মৌসুমে স্বল্প জীবনকালীন ধানের অধিক ফলনশীল ধানের জাত উৎপাদনে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত সহিষ্ণু ধানের জাত চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়ায় বেড়েছে ধান উৎপাদন। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমি যেমন : পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকল ও রেলপথের জমিতে কৃষি চাষাবাদের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ। মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় কমিশনারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে অব্যবহৃত জমিতে চাষাবাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আসন্ন বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি ঋণ সহজে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিশেষ তদারকি শুরু করেছে। কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস ও বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৪ টি কৃষি অঞ্চলে বিশেষ কর্মশালা করে উৎপাদন বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বৈশ্বিক যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গেল এক যুগে কৃষি ভর্তুকি বৃদ্ধি ও বিশেষ তত্তাবধানের ফলে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ২০২১ ও ২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালের চেয়ে বর্তমানে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেলবীজ ২ গুণ, সবজি ৭ গুণ ও পেঁয়াজ ৫ গুণ। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও ধারাবাহিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিগত ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল, চরাঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চল, হাওর, সিলেট অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চল সমূহকে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করায় ২০২১ ২২ অর্থবছরের উৎপাদন ৩৬ দশমিক ৪১ লাখ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে। যা ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২৩ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন। রপ্তানিমুখী ফসল যেমন : কাজুবাদাম, কফি ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রকল্প। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৭৬টি প্রতিকূলতা সহনশীল কৃষিজাত উদ্বোধন করেছে যা প্রাকৃতিক যে কোন প্রতিবন্ধকতায় কৃষ উৎপাদনের হার গতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।

কৃষকের উৎপাদন খরচ নিম্নপর্যায়ে রাখতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সার, সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ইক্ষু চাষ ইত্যাদি খাতে উন্নয়ন সহায়তা বাবদ ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় বলছে, আসছে বাজেটে বিশ্ববাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বরাদ্দ আরো বেশি চাওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর