পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ময়মনসিংহে আসছেন। তার এই আগমন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে ময়মনসিংহ নগরী। রংবেরঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলি। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে স্বাগত জানাতে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সবমিলে ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে এখন উৎসবের আমেজ।
ইতোমধ্যে বিভাগীয় সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতি তদারকি করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা দুদিন ধরে ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বর্ধিত সভা করেছে। নগরীর প্রতিটি সড়কে চলছে মাইকিং।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। নিরাপত্তায় পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অসংখ্য তোরণ, বিলবোর্ড এবং ব্যানার টানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ তৈরি করছেন।
সমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা আশা করছেন সমাবেশে ১০-১৫ লাখ লোক হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ময়মনসিংহের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
ময়মনসিংহ জেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক মোহিত-উর-রহমান শান্ত বলেন, ‘ময়মনসিংহবাসীর প্রত্যাশা পূরণে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে তিনি ময়মনসিংহকে বদলে দিয়েছেন। এ কৃতজ্ঞতা থেকেই সভানেত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা সর্বোচ্চটা করছি। আশা করছি জনসভায় ১০ থেকে ১৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমনে এই অঞ্চলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম জানান, নেত্রীর আগমনের খবরে উচ্ছ্বসিত গোটা ময়মনসিংহবাসী। এবারও নৌকার আদলে সমাবেশের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। মঞ্চের কাজ প্রায় শেষ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার চলছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী কী কী উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও পুলিশ সদস্য আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ মঞ্চের প্রথম সারিতে নিরাপত্তায় থাকবে এপিবিএন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেব না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষবারের মতো জনসভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই নগরীতে আবার আসছেন তিনি।
নেত্রকোনায় ব্যাপক প্রস্তুতি: নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, সমাবেশে যোগ দিতে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরা চারটি স্পেশাল ট্রেন ছাড়াও ময়মনসিংহগামী কমিউটার, আন্তঃনগর হাওর, মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান (ভিপি লিটন) বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে আমরা এক মাস ধরে উপজেলা ও ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেছি। ৪টি ট্রেন ও ২২৫টি বাসে করে ৩০-৩৫ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে যোগ দেবেন।