হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুসংবাদ হলো, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে; আর দুঃসংবাদ হলো, এবারও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষক।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর দেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে; অর্থাৎ প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। গড় ফলন হেক্টরে ৩ দশমিক ১১৯ টন। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকের তেমন লাভ হবে না বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আমন কাটা ও মাড়াই শুরুর পর মূলত চালকল মালিকরাই ধানের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। বাজারে নতুন ধান ওঠার পর তারা সিন্ডিকেট করে অন্তত দুই সপ্তাহ কোনো ধান কেনেন না। এতে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ধানের দাম পড়ে যায় আর তখন ধান কিনে গুদামজাত করা হয় এবং ওই ধান দিয়ে সারা বছর চাল তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
কৃষক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করলেও দামের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছেন। আমনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বস্তুত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ধানসহ বিভিন্ন ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। এ অবস্থার পরিবর্তনে তথা কৃষককে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সরকারি নীতিমালা থাকা জরুরি।
প্রতিবেশী ভারতে সরকারিভাবে দেশটির মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ ধান ও চাল সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে এ হার অনেক কম; মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ। সরকার মূলত চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর বড় বড় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো চালের বাজার অস্থির করার অপপ্রয়াস চালায়, যা রোধ করা জরুরি।
সরকারিভাবে ২০-২৫ শতাংশ মুনাফা দিয়ে ধানের মূল্য নির্ধারণের পর কৃষকের কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা উচিত। আশা করা যায়, এর ফলে কৃষক লাভবান হবেন। তাদের মুখে হাসি ফুটবে। এজন্য দেশে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ নীতিমালার আওতায় একটি ‘প্রাইজ কমিশন’ গড়ে তোলা দরকার। দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে কৃষক বারবার লোকসানের আশঙ্কায় ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তা ভোক্তার জন্য তো বটেই, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে না।