ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদায় প্রথম আলো, ধন্যবাদ প্রথম আলো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুন ২০১৬
  • ৪০৯ বার

মেহেদি মাসুদ (ফেসবুক স্ট্যাটাস):

১ জুন ২০১৬, বুধবার। আমার জীবনে একটি মনে রাখার মতো তারিখ, মনে রাখার মতো একটি দিন। আজ থেকে আমি আর প্রথম আলোর সঙ্গে থাকছি না। দেশের এই শীর্ষ দৈনিক পত্রিকায় দীর্ঘ ১৮ বছর কাজ করার পর এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে।

কিছুদিন আগেও সকালে দেয়াল ঘড়িতে পৌনে নয়টা বাজলেই আমার অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত। একটা বন্ধের দিন আমার কাছে মনে হত কঠিন যন্ত্রণা। শুরু থেকে অনেক বছর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পর্যন্ত নেইনি। পরপর পাঁচ বছর একদিনও ছুটি না নেওয়ার জন্য অফিস আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। নিজের বিয়ে, বাবার মৃত্যু এমনকি ছোট–বড় নানা সমস্যায়ও একদিন ছুটি নেওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি।
১৯৯৮ সালে প্রথম আলোর যাত্রা শুরুর আগে সিএ ভবনের মিলনায়তনে ‘সুধী সমাবেশ’ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ‘মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৫’সহ প্রায় সব অনুষ্ঠান এবং আয়োজনের সঙ্গে ছিল আমার সম্পৃক্ততা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি যে কোনো অনুষ্ঠানই ছিল আমার কাছে দারুণ আনন্দের। প্রথম আলো এবং প্রথম আলোর কাজ আমার কাছে ছিল তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।

সততা কী, এই ১৮ বছরে তার পরীক্ষা দিয়েছি প্রতি মুহূর্তে। জানিনা এই কাজে কতটা সফল হতে পেরেছি। তবে আমি শতভাগ চেষ্টা করেছি।

বন্ধুরা, আপনারা জানেন, আমাদের পারিবারিক একটি প্রতিষ্ঠান আছে, নাম মাদল। বছর দেড়েক আগে যখন প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়, তখন ভাবতে পারিনি, এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার দুই যুগের (প্রথম আলোর আগে ইত্তেফাক, ইনকিলাব, আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজে কাজ করেছি) সাংবাদিকতা জীবনের কিছুটা বিরতি টানতে হবে। ছেড়ে আসতে হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানের ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। আজকের যে মেহেদী মাসুদকে সবাই জানেন, ভালোবাসেন; তা এই প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি। সম্পাদক মতিউর রহমান, আনিসুল হক, সাজ্জাদ শরীফ, সুমনা শারমীন, জাহীদ রেজা নূর, কবির বকুল, পল্লব মোহাইমেনহ এই প্রতিষ্ঠানের মানুষগুলোর ভালোবাসা, আদর, স্নেহ আর মমতায় গড়া। মনে পড়ছে মনজুর কাদের জিয়াকে। ও কখনো আমাকে সহকর্মী মনে করেনি; বলত, আমি ওর ভাই।

আপাতত সাংবাদিকতা থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিতে হচ্ছে আমাকে। মাদল বড় হচ্ছে। বাড়ছে পরিধি। তাই মাদলকে সময় দিতে হবে। এই মুহূর্তে মাদলের আমাকে খুব প্রয়োজন। কিন্তু এ্ই ২৫ বছরে সাংবাদিকতা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। ইচ্ছে করলেও আমি তা থেকে খুব বেশি দিন দূরে থাকতে পারব না। আজই তা নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না। তবে শিগগিরই হয়ত সাংবাদিক মেহেদী মাসুদকে সবাই দেখতে পাবেন। কোনো পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও কিংবা ক্লাসরুমে।

কখনো ভুলতে পারব না প্রথম আলো, প্রথম আলোর দিনগুলো আর প্রথম আলোর মানুষজনকে। আমার আনন্দের সময়গুলোতে কাছে পেয়েছি প্রথম আলোকে, আর তাতে আমার আনন্দ বেড়ে গেছে শত গুণ। তেমনি আমার কঠিন সময়েও প্রথম আলো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এক মুহূর্তের জন্যও মুষড়ে পরতে দেইনি আমাকে।

আজ দুটি বাক্য লিখতে গিয়ে বারবার আমার হাত থেমে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলতেই হবে, ‘বিদায় প্রথম আলো, ধন্যবাদ প্রথম আলো’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিদায় প্রথম আলো, ধন্যবাদ প্রথম আলো

আপডেট টাইম : ১২:৫৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুন ২০১৬

মেহেদি মাসুদ (ফেসবুক স্ট্যাটাস):

১ জুন ২০১৬, বুধবার। আমার জীবনে একটি মনে রাখার মতো তারিখ, মনে রাখার মতো একটি দিন। আজ থেকে আমি আর প্রথম আলোর সঙ্গে থাকছি না। দেশের এই শীর্ষ দৈনিক পত্রিকায় দীর্ঘ ১৮ বছর কাজ করার পর এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে।

কিছুদিন আগেও সকালে দেয়াল ঘড়িতে পৌনে নয়টা বাজলেই আমার অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত। একটা বন্ধের দিন আমার কাছে মনে হত কঠিন যন্ত্রণা। শুরু থেকে অনেক বছর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পর্যন্ত নেইনি। পরপর পাঁচ বছর একদিনও ছুটি না নেওয়ার জন্য অফিস আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। নিজের বিয়ে, বাবার মৃত্যু এমনকি ছোট–বড় নানা সমস্যায়ও একদিন ছুটি নেওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি।
১৯৯৮ সালে প্রথম আলোর যাত্রা শুরুর আগে সিএ ভবনের মিলনায়তনে ‘সুধী সমাবেশ’ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ‘মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৫’সহ প্রায় সব অনুষ্ঠান এবং আয়োজনের সঙ্গে ছিল আমার সম্পৃক্ততা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি যে কোনো অনুষ্ঠানই ছিল আমার কাছে দারুণ আনন্দের। প্রথম আলো এবং প্রথম আলোর কাজ আমার কাছে ছিল তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।

সততা কী, এই ১৮ বছরে তার পরীক্ষা দিয়েছি প্রতি মুহূর্তে। জানিনা এই কাজে কতটা সফল হতে পেরেছি। তবে আমি শতভাগ চেষ্টা করেছি।

বন্ধুরা, আপনারা জানেন, আমাদের পারিবারিক একটি প্রতিষ্ঠান আছে, নাম মাদল। বছর দেড়েক আগে যখন প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়, তখন ভাবতে পারিনি, এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার দুই যুগের (প্রথম আলোর আগে ইত্তেফাক, ইনকিলাব, আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজে কাজ করেছি) সাংবাদিকতা জীবনের কিছুটা বিরতি টানতে হবে। ছেড়ে আসতে হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানের ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। আজকের যে মেহেদী মাসুদকে সবাই জানেন, ভালোবাসেন; তা এই প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি। সম্পাদক মতিউর রহমান, আনিসুল হক, সাজ্জাদ শরীফ, সুমনা শারমীন, জাহীদ রেজা নূর, কবির বকুল, পল্লব মোহাইমেনহ এই প্রতিষ্ঠানের মানুষগুলোর ভালোবাসা, আদর, স্নেহ আর মমতায় গড়া। মনে পড়ছে মনজুর কাদের জিয়াকে। ও কখনো আমাকে সহকর্মী মনে করেনি; বলত, আমি ওর ভাই।

আপাতত সাংবাদিকতা থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিতে হচ্ছে আমাকে। মাদল বড় হচ্ছে। বাড়ছে পরিধি। তাই মাদলকে সময় দিতে হবে। এই মুহূর্তে মাদলের আমাকে খুব প্রয়োজন। কিন্তু এ্ই ২৫ বছরে সাংবাদিকতা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। ইচ্ছে করলেও আমি তা থেকে খুব বেশি দিন দূরে থাকতে পারব না। আজই তা নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না। তবে শিগগিরই হয়ত সাংবাদিক মেহেদী মাসুদকে সবাই দেখতে পাবেন। কোনো পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও কিংবা ক্লাসরুমে।

কখনো ভুলতে পারব না প্রথম আলো, প্রথম আলোর দিনগুলো আর প্রথম আলোর মানুষজনকে। আমার আনন্দের সময়গুলোতে কাছে পেয়েছি প্রথম আলোকে, আর তাতে আমার আনন্দ বেড়ে গেছে শত গুণ। তেমনি আমার কঠিন সময়েও প্রথম আলো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এক মুহূর্তের জন্যও মুষড়ে পরতে দেইনি আমাকে।

আজ দুটি বাক্য লিখতে গিয়ে বারবার আমার হাত থেমে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলতেই হবে, ‘বিদায় প্রথম আলো, ধন্যবাদ প্রথম আলো’।