হাওর বার্তা ডেস্কঃ সদ্য সমাপ্ত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের অপরাজিত শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নারী ফুটবলারদের এমন কৃতিত্বে গর্বিত পুরো জাতি। তাই তো ইতিহাসগড়া মেয়েরা ঢাকায় ফেরার পর দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছে। বুধবার চ্যাম্পিয়ন সাবিনা খাতুন বাহিনী নেপাল থেকে দেশে ফিরলে তাদেরকে ছাদখোলা বাসে চড়িয়ে বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে নিয়ে আসা হয়। এমন বিরল সংবর্ধনায় অভিভূত নারী ফুটবলারা। শুধু তাই নয়, সাফজয়ী মেয়েরা দেশে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, তমা গ্রুপ ও এনভয় গ্রুপ তাদের জন্য ৫০ লাখ করে মোট দেড় কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এবার চ্যাম্পিয়নরা পাচ্ছে ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছ থেকে পুরস্কার। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দলকে পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী। দলের সবাইকে নগদ অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি যাদের ঘর দরকার তাদের ঘর দিবেন তিনি। এ তথ্য গতকাল নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি জানান, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের যেসব ফুটবলারদের ঘর দরকার, তাদের ঘর দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কার বাড়ির প্রয়োজন সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রসঙ্গে তারাকা ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি ঘরের জন্য সহযোগিতা করবেন, এরচেয়ে খুশীর খবর আর কি হতে পারে।’ আরেক ফরোয়ার্ড রিতুপর্ণা চাকমা বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। আমরাও উনার কাছ থেকে পুরস্কার নিতে চাই।’
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দলের অনেক সদস্যদের বাড়ির অবস্থা খুবই জীর্ণশীর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা ডিফেন্ডার আঁখি খাতুনকে জমি দিয়েছেন।
নানা জটিলতা শেষে কিছু দিন আগেসেই জমি বুঝে পেয়েছেন আঁখি। সেই জমির বিষয়ে আঁখির পরিবার হুমকিও পেয়েছিল। এ বিষয়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমরা সেভাবে জানি না। আঁখির সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’ আগের দিন দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। অথচ এর পুরোপুরি উল্টো চিত্র দেখা যায় বাফুফে ভবন। চ্যাম্পিয়নদের জন্য ভবনের নিচে একটি বোর্ড ও উপরে একটা ব্যানার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পুরো বাফুফে ভবন জুড়ে আলোকসজ্জ্বা তো দূরের কথা সাবিনার যে গেট দিয়ে ভবনে প্রবেশ করেছেন সেখানে ছিল না বৈদ্যুতিক আলো। তবে দেরিতে হলেও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার কর্তারা। এ ব্যাপারে সোহাগ বলেন, ‘আমরা আজই (গতকাল) ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ শুরু করেছি। আগামীকালের (আজ) মধ্যে বাফুফে ভবনে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’ এদিকে সহসাই বাড়ছে নারী ফুটবলারদের বেতনসহ অন্যান্য সযোগ-সুবিধা। এ তথ্য কাল নিশ্চিত করেন সাফজয়ী জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এদিন সাবিনা বাহিনী বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে বাফুফে বস মেয়েদেরবেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। বাফুফে সভাপতির সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাবিনা বলেন, ‘আজ আমরা সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরা আমাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো জানিয়েছি। তিনি তা পূরণ করার কথা দিয়েছেন।’ তিনি যোগ করেন,‘আমাদের তো চাওয়ার শেষ নেই। এরপরও মূলত প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ ও সম্মানীর বিষয়ে কথা বলেছি। সভাপতি স্যার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন শিগগির আমাদের বেতন বাড়ানো হবে।’ বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা মাসিক সম্মানী পান তিন ক্যাটাগরিতে। কেউ ৮ হাজার, কেউ ১০ আবার কেউ ১২ হাজার টাকা করে পান। বেতন বাড়লে তা কতটা বাড়ানো হবে? এ বিষয়ে সাবিনা বলেন,‘আমরা একটা অঙ্ক বলেছি, সভাপতি স্যার বলেছেন সেটা দেখবেন। তবে সম্মানজনক একটি অবস্থানে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।’ বেতন-ভাতার আওতায় থাকার কারণে নিজেদের সৌভাগ্যবতী বলেও মেনে নিয়েছেন সাবিনারা। নারী দলের অধিনায়ক বলেন, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ক্রিকেট এবং ফুটবল ছাড়া অন্য কোনো নারী দলের খেলোয়াড়রা বেতন পান না। আমরা সেদিক থেকে নিজেদের ভাগ্যবতী মনে করি আমরা।’ সাফ মিশন শেষ হয়েছে। এবার বাড়ি যাবেন সাবিনারা। তাই ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দিন ছুটি পাবেন তারা। ছুটি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাফুফে ভবনেই থাকবেন সাফজয়ী নারী ফুটবলাররা।