রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি কবির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও অন্তহীন ভালবাসা। কাজী নজরুল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একজন কালজয়ী কবি। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সা¤্রাজ্যবাদ, শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির গান। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগরাগিণী ও গজল সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তাঁর লেখার ভঙ্গি ছিল প্রচলিত ধারা থেকে আলাদা, তাতে সার্থক সংমিশ্রণ ঘটে সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি শব্দের। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, কবি, সংগীতজ্ঞ, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও নায়ক।
নজরুলের ক্ষুরধার লেখনীর স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়েছে তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমীয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙাালির হৃদয়কে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির গগণভেদী উচ্চারণ, “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ-তূর্য”। তিনি প্রেমের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। কবি ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও সৃজনশীল কর্ম আমাদের অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস। নজরুলের কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও অমূল্য সম্পদ।
পরাধীন ব্রিটিশ আমলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন: বাংলা বাঙালির হোক! বাংলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা অনিঃশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন প্রজন্ম নজরুল চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে অর্থবহ অবদান রাখবে।
আমি সাম্য ও মানবতার চিরঞ্জীব কবি কাজী নজরুলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।