হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করেন ইংল্যান্ডের। পরে এই দেশটির হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলতে চাওয়ার কথা বলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরি। তবে সেই ভাবনা বাস্তবায়নের দিকে যায়নি খুব একটা। আরও দুটি দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ আছে ২৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। এর মধ্যে একটু এগিয়ে বাংলাদেশ। এমনকি তাকে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরাও। সেকারণে হয়তো কোনো একদিন মায়ের দেশের হয়ে খেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না হামজা।
বাংলাদেশি মা ও গ্রানাডিয়ান বাবার সন্তান হামজার জন্ম, বেড়ে ওঠা, ফুটবল আঙিনায় পা রাখা; সবই ইংল্যান্ডে। ১৬ বছর বয়সে যোগ দেন লেস্টার সিটির একাডেমিতে। এই ক্লাবের হয়েই শুরু হয় তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার। বনে যান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা একমাত্র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফুটবলার। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে অভিষেক হয় তার।
ইংল্যান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও গ্রানাডার হয়েও আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার সুযোগ আছে তার। তবে সুযোগ পেলে ইংল্যান্ডের হয়েই খেলতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন। পারফরম্যান্স দিয়ে এখনও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হয়ে খেলার দাবি জানাতে পারেননি তিনি। এখন তাকিয়ে বাংলাদেশের দিকে।
ইংলিশ পেশাদার ফুটবল খেলা প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি আনোয়ার উদ্দিনের সঙ্গে সমপ্রতি নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন হামজা। সেই সাক্ষাৎকারেই তিনি এবার বললেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারা তার জন্য হবে গর্বের ও সম্মানের, ‘হ্যাঁ, আমি অবশ্যই তেমনটা (বাংলাদেশের হয়ে খেলা) চিন্তা করি। আগামী কয়েক বছরে (এখানে) আমি কতটা ভালো করতে পারি সেটা দেখতে চাই। তবে আমি আরও বেশি গর্বিত ও সম্মানিত হব বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলে ।’
এদিনই ওয়াটফোর্ডের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে মুসলিম ক্রীড়াবিদদের গ্রæপ নুজুম স্পোর্টসের দূত করা হয়েছে লেস্টার সিটি থেকে ধারে এই ক্লাবটিতে যোগ দেওয়া হামজাকে। আনোয়ার উদ্দিনকে তিনি বললেন, তার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশে যে প্রভাব পড়ত তা চমকে দিত তাকেও, ‘আমি আসলে বুঝতে পারিনি এর প্রভাব কতটা হতে পারে, যতক্ষণ না পর্যন্ত একের পর এক বার্তা আসতে শুরু করল। আমার মা প্রায়ই সারা রাত জেগে থাকতেন, কারণ বাংলাদেশ থেকে আমার খালা ও কাজিনরা কল করত। একজন পেশাদার ফুটবলার, বিশেষ করে একজন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলার হিসেবে কতটা সমর্থন পাচ্ছি, এসব বিষয়ে আমার চোখ খুলে দিয়েছে।’
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে অনেক সম্ভাবনা দেখেন বলে জানিয়েছেন হামজা, ‘বাংলাদেশেরর সমর্থকদের ভালোবাসা সত্যিই আমার চোখ খুলে দিয়েছে একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আপনার কতটা সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে একজন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলার হিসেবে।
আমি একটি শক্তিশালী সংযোগ অনুভব করি এবং ব্যবহার করতে চাই। আমার অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের ফুটবলে কাজে লাগাতে চাই।’
বাংলাদেশে হামজার শেকড় সিলেটে। এই অঞ্চলের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ অনুভব করেন বলে জানান তিনি। সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন এই ফুটবলার। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরেই সেটি হতে পারে বলে জানালেন এ মিডফিল্ডার, ‘হয়তো আমি শীতের ছুটিতে বাংলাদেশে ফিরে যাব, আমাকে দেখতে হবে কত দিন ছুটি পাব (কাতার বিশ্বকাপের কারণে)। আমি আমার বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই, কারণ আমি তাদের কিছুটা দিতে চাই। আমার শৈশবের কথা। আমার এক বছর বয়স থেকে আমরা প্রায়ই বাংলাদেশে যেতাম, যা ছিল ভিন্ন এক অনুভ‚তি।’