সাকিবের ম্যাচে লজ্জার হার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৭ সালের এই দিনে সাকিব আল হাসানের ৫০তম টেস্ট শেষ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। ৫ বছর পর ঠিক সেই দিনেই সাকিব নেমেছিলেন তার শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলতে। তবে মাইলফলকটি রাঙানো তো গেলই না, উল্টো আফগানিস্তানের কাছে লজ্জার এক হারে এশিয়া কাপ মিশন শুরু করল ‘নতুন’ বাংলাদেশ। গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি ৭ উইকেটে হেরে গেছে সাকিবের দল। আগে ব্যাট করে দেয়া ১২৮ রানের লক্ষ্য ৯ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট খুইয়েই জয়ের বন্দরে তরী ভেরায় মোহাম্মদ নবীর দল। অথচ দু’দিন আগেই বিরাট কোহলির একই উপলক্ষ্য চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে উদযাপন করেছিল ভারত।

শারজায় সাদামাটা লক্ষ্য তাড়ায় শেষ ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তোলা আফগানিস্তানের দরকার ছিল ৬৩ রান। অর্থাৎ প্রায় একই পরিমাণ রান দলটিকে করতে হতো আগের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক ওভারে। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে কেবল ২৯ রান তুলতে পারে আফগানরা। সেটিও মূলত সাকিবের নৈপুণ্যে। ১০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৮ রান। তাতে পরের ১০ ওভারে ৮০ রান প্রয়োজন পড়ে তাদের। সেই চাপের মুখে জ্বলে উঠে ছয়ের ফুলঝুরি ছোটালেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন ইব্রাহিম জাদরান। তাতে আঁটসাঁট বোলিংয়ের ধারা বজায় রাখতে পারল না বাংলাদেশ। তাদেরকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে এবারের এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠল আফগানরা। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আসরের ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেয় এশিয়ার নতুন পরাশক্তি।
যদিও ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার সাকিবের বলে লং-অনে রহমানউল্লাহ গুরবাজের ক্যাচ ফেলে দেন মাহমুদউল্লাহ। তখন ৬ রানে ছিলেন তিনি। তবে সেজন্য বড় মূল্য দিতে হয়নি টাইগারদের। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে সাকিবের বলেই স্টাম্পড হন গুরবাজ। ১৮ বলে তার রান ১১। আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই অনেক সময় ক্রিজে থাকলেও আক্রমণাত্মক হতে পারেননি। অফ স্পিনার মোসাদ্দেকের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও বদল আসেনি সিদ্ধান্তে। ২৬ বলে ২৩ রান আসে জাজাইয়ের ব্যাট থেকে। এতে ভাঙে ৩১ বলে ৩০ রানের জুটি। আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি বিদায় নেন দ্রুত। তাকে এলবিডব্লিউ করেন ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তিনি করেন ৮ বলে ৯ রান। ১৩তম ওভারে ৬২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আফগানরা এরপর দুই জাদরানের দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে পৌঁছায় লক্ষ্যে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। বল হাতে বরাবরের মতো ভেলকি দেখান আফগান স্পিনাররা। ৪ ওভারের কোটা পূরণ করে অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান ৩ উইকেট নেন ১৬ রানে। সমানসংখ্যক উইকেট পেতে তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানের খরচা ২২ রান। প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট খুইয়ে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৮ রান জমা করতে পারে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও এনামুল হক বিজয়ের উদ্বোধনী জুটি কার্যকর হয়নি। দুই অভিজ্ঞ সাকিব আর মুশফিকুর রহিমও টিকতে পারেননি। তারা চারজনই ফেরেন এক অঙ্কের রানে। আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে।
মোসাদ্দেক খেলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। সাত নম্বরে ক্রিজে গিয়ে ৩১ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ১ ছক্কা। অন্য ব্যাটাররা যখন খাবি খাচ্ছিলেন, তখন মোসাদ্দেক করেন টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিং। ফলে শেষ ৫ ওভারে আসে ৪০ রান। তার কল্যাণে বাংলাদেশের পুঁজি নেয় ভদ্রস্থ রূপ। তবে শেষরক্ষা হয়নি। আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি এখন বাঁচামরার লড়াই দুই দলের জন্যই। জয়ী দল গ্রুপ ‘বি’ থেকে আফগানদের সঙ্গী হবে সুপার ফোরে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর