সিলেটে হোটেল কক্ষে আটকে দুই তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট নগরের একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণীকে আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে ১০/১২ জন বখাটে। রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণের পর তাদের কাছ থেকে মোবাইল এবং বিকাশে থাকা টাকা তুলে নেয়।

পরে বখাটেরা ওই দুই তরুণীর সঙ্গে কিছু ঘটেনি বলে স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়।

জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে ভুক্তভোগী দুই তরুণী দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মহানগরীর জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেছেন। মামলা (নং-২৯ ও ৩১ (৮)’২২)।

গত ২৩ আগস্ট দিনগত রাত ১১টা ৫০ মিনিট থেকে পরদিন ২৪ আগস্ট বেলা ১টা পর্যন্ত নগরের পাঠানটুলাস্থ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন গ্রিন হিল আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটে।

মামলার আসমিরা হলেন- গণধর্ষণে সহায়তাকারী সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দবির মিয়ার মেয়ে, নগরের উপশহর এইচ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের আলী ভিলা ৫ম তলার বাসিন্দা বিউটি পার্লার কর্মী তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫), সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নগরের খাসদবির ৪২/সি আছদ্দর ভিলার বাসিন্দা মোহাইমিন রহমান রাহি (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিগন্দগঞ্জ নয়াবাজার (লোকেশ্বর) গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে নগরের করেরপাড়া মোহনা ২১/১ বাসার জুবেল (৩১), নগরের পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু (৩৫), সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিনাপাটি গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৭/১০ বাসার বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নাবিল রাজা চৌধুরী (৩৫) ও সুজন (৩৫) এবং অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, আইএলটিএস পড়ার জন্য বালাগঞ্জ উপজেলার এক তরুণী (১৮) নগরের উপশহরে এক নাট্যশিল্পী তরুণীর (২৫) সঙ্গে শাহজালাল উপশহরের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এক মাস আগে উপশহর স্নেহা বিউটি পার্লারের তানজিনা আক্তার তানিয়ার (২৫) সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের।

পরিচয়ের একপর্যায়ে আইএলটিএস করতে আসা তরুণীর তানজিনা আক্তার তানিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে আইইএলটিএস শিখতে আসা তরুণীকে বলে- তার ভাইয়ের জন্য এবি পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন। ওই তরুণীর এবি পজেটিভ রক্ত হওয়ায় রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে যেতে অনুরোধ করে। ফোন পেয়ে ওই ১৮ বছরের তরুণী তার রুমমেট নাট্যশিল্পী বান্ধবীকে নিয়ে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যান। সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, সে বলে, রক্ত দেওয়ার আগে তার এক কাজিনের বাসায় একটু প্রয়োজন আছে। কাজ শেষ করে তারা হাসপাতালে যাবেন।

এ কথা বলে কৌশলে ওই দুই তরুণীকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় নিয়ে যান তানিয়া। তাদের দুজনকে ৩০১ ও ৩০৩ নম্বর কক্ষে বসিয়ে রাখে। এসময় তানিয়ার সহযোগী ১০/১২ জন যুবক ৩০২ নম্বর কক্ষে নেশা করছিল। তানিয়া গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে। এরপর ওই দুই তরুণীকে দুই কক্ষে তারা আটকে রাখেন। রাত সাড়ে ১১টার থেকে একের পর এক ১০-১২ জন যুবক তাদের দুজনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এছাড়াও ১৮ বছরের ভিকটিমের কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা জোরপূর্বক নিয়ে যান তানিয়া ও ধর্ষকরা। পরদিন (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে ভিকটিম দুই তরুণীকে এক কক্ষে নিয়ে তাদের কাছ থেকে ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি’ মর্মে স্বীকারোক্তি নেয় এবং এ কথাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে তাদের ছেড়ে দেন তানিয়া ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পর জিম্মি দশা থেকে ছাড়া পেয়ে দুই ভিকটিম তরুণী জালালাবাদ থানায় দলবদ্ধ ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগে পৃথক মামলা দায়ের করেন।

তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে এসএমপি জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, দুই ভিকটিমের মামলা নেওয়া হয়েছে। যেহেতু তারা নিজেরাই বাদী তাই ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দির প্রয়োজন হয়নি। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর