ঢাকা ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আকাশের ঠিকানায়’ বাংলাদেশের চিঠি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২২
  • ১০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও তাদের নামটি বারবারই উচ্চারিত হয়। যেমন আজ থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। আয়োজক স্বত্ত্ব শ্রীলঙ্কার হাতে থাকলেও ১৫তম এই আসরের ভেন্যু কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের অত্যাধুনিক মাঠগুলোই। ভাগ্যের ছোঁয়ায় পাওয়া ছয় দেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিজেরা বাদ পড়ে গেলেও আসরের সঙ্গে মিশে আছে দেশটি। যেন ঘুমিয়ে থেকেও সদা জাগ্রত।
এশিয়া কাপ এক হিসেবে এশিয়ার বিশ^কাপ। দ্বিতীয়ত আসন্ন বিশ^কাপের প্রস্তুতির দারুণ একটি মঞ্চ। এশিয়ার সেরা কে, তা প্রমাণের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম এটি। নিজেদের উজার করে দিতে এবারের আসরে মাঠে নামছে ছয়টি দল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের সাথে রয়েছে গত আসরের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাছাইপর্ব উতরে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পাওয়া হংকং। টুর্নামেন্টের প্রথম দিনই মাঠে নামছে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

এশিয়ার দলগুলোর কাছে বিশ্বকাপের মতই গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া কাপ। এশিয়ার সেরা হতে এই এশিয়া কাপেই নিজেদের লড়াইয়ে শামিল করে দলগুলো। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়াই প্রধান লক্ষ্য দলগুলো। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ১৪টি আসরে সর্বোচ্চ সাতবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছে ভারত। পাঁচবার শিরোপা জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে শ্রীলঙ্কা। দুইবার এই মর্যাদার ট্রফি ঘরে তুলেছে পাকিস্তানও। আর বাংলাদেশের এখ নপর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্জণ ফাইনালে খেলা। এশিয়া কাপে সবশেষ চার আসরের তিনটিতেই ফাইনালে উঠেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
তবে সবশেষ চার আসরের তিনটিতে ফাইনাল খেলা দলটি এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘সার্কসের বাঘ’। তার উপরে সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে অবস্থা আরও শোচনীয়। বাংলাদেশ টানা হারতে থাকলে কোন দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেয়? ক্রিকেট সম্পর্কে যার বিন্দু পরিমাণ জ্ঞান কিংবা আগ্রহ নেই তিনিও এই প্রশ্নের জবাবে জিম্বাবুয়ের নামই উচ্চারন করবেন। অথচ এই দলটির বিপক্ষেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে মাথা নিচু করে ফিরেছে ক্রিকেট দল। তার আগে উইন্ডিজের বিপক্ষেও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবশেষ ৫ ম্যাচে চারটিতেই হারের লজ্জার ভাগিদার হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। দলের ব্যর্থতার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছ্বাচারিতা, কর্তৃত্ব। কোচিং-স্টাফ প্যানেলও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। তবে আজ আলোচ্য বিষয় শুধুই মাঠের ক্রিকেট। বিসিবি ইস্যু ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক।
অন্যদিকে এশিয়ার বিশ^কাপে অন্যান্য প্রতিপক্ষের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স যেন হাজার ওয়াটের আলোর মতোই উজ্জ্বল। সবশেষ ৫ ম্যাচে দুটি দলই জিতেছে ৪টি করে ম্যাচ। এমনটি বাছাইপর্ব পেরিয়ের আসা হংকংয়ের পরিসংখ্যানও ঠিক একই রকম। এশিয়ার উদীয়মান শক্তির দেশ আফগানিস্তান সবশেষ ৫ ম্যাচে জিতেছে ২টি ম্যাচ। বাকি তিনটিতে হার দেখেছে রশিদ-মুজিবেরা। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে শ্রীলঙ্কা আছে বাংলাদেশের কাতারে। তারা সবশেষ ৫ ম্যাচের চার হারের বিপরীতে জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচে। তবে পরিসংখ্যান সবসময় হয়তো সত্য দিক নির্দেশনা দেয় না। লঙ্কানদের সবশেষ ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ ছিল বর্তমান বিশ^চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও বর্তমান এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত।

এবার আসি একনজরে এশিয়া কাপের ছয়টি দলের র‌্যাংকিংয়ে। বর্তমানে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষস্থানে আছে ভারত। তিনে তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিন্তান। এরপর আটে শ্রীলঙ্কা, নয়ে বাংলাদেশ, দশে আফগানিন্তান। হংকংয়ের অবস্থান ২৩ নম্বরে। র‌্যাংকিং বলছে, বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে আফগানিস্তান ও হংকংয়ের চেয়ে ভালো দল। তবে এটা কি ঠিক? আসুন পরিসংখ্যান দিয়েই যাচাই করে নিই। পরিসংখ্যানের পাতার সঙ্গে স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে দেখা যায়, হংকংয়ের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত এই পরিসরে একটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে কিন্তু জয় পেয়েছিল এই হংকং। সে সময় দলটি ক্রিকেট খেলে কি-না, এমন জিজ্ঞাসাও ছিল অনেকের।

এরপর আফগানিস্তান। কথার যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও দলটির বিপক্ষে ৮ ম্যাচে মাত্র তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে রাসেল ডোমিঙ্গোর ছাত্ররা। বাকি ৫টিতেই পেয়েছে হারের লজ্জা। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের অর্জন ৪ ম্যাচ জয়। বাকি ৮টিতে হার। তাতে কী! ভারতের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে হার ১০টিতে। একটিতে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে ১৩ হারের বিপরীতে হার দুটিতে।

তবুও আমরা আশা দেখি, আশাহত হই। স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নভ্রষ্ট হয় আমাদের। আমাদের আশা, স্বপ্ন বারবার ভেঙে গেলেও দ্বিগুণ শক্তিতে আশা বাঁধি, স্বপ্ন দেখি। অন্যদিকে হারলেও কি, জিতলেও কি? সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পেলেই চলে ক্রিকেটারদের। তারা দিনে হারে, রাতে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখে। সে চিঠির জবার কি মেলে?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আকাশের ঠিকানায়’ বাংলাদেশের চিঠি

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও তাদের নামটি বারবারই উচ্চারিত হয়। যেমন আজ থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। আয়োজক স্বত্ত্ব শ্রীলঙ্কার হাতে থাকলেও ১৫তম এই আসরের ভেন্যু কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের অত্যাধুনিক মাঠগুলোই। ভাগ্যের ছোঁয়ায় পাওয়া ছয় দেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিজেরা বাদ পড়ে গেলেও আসরের সঙ্গে মিশে আছে দেশটি। যেন ঘুমিয়ে থেকেও সদা জাগ্রত।
এশিয়া কাপ এক হিসেবে এশিয়ার বিশ^কাপ। দ্বিতীয়ত আসন্ন বিশ^কাপের প্রস্তুতির দারুণ একটি মঞ্চ। এশিয়ার সেরা কে, তা প্রমাণের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম এটি। নিজেদের উজার করে দিতে এবারের আসরে মাঠে নামছে ছয়টি দল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের সাথে রয়েছে গত আসরের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাছাইপর্ব উতরে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পাওয়া হংকং। টুর্নামেন্টের প্রথম দিনই মাঠে নামছে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

এশিয়ার দলগুলোর কাছে বিশ্বকাপের মতই গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া কাপ। এশিয়ার সেরা হতে এই এশিয়া কাপেই নিজেদের লড়াইয়ে শামিল করে দলগুলো। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়াই প্রধান লক্ষ্য দলগুলো। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ১৪টি আসরে সর্বোচ্চ সাতবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছে ভারত। পাঁচবার শিরোপা জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে শ্রীলঙ্কা। দুইবার এই মর্যাদার ট্রফি ঘরে তুলেছে পাকিস্তানও। আর বাংলাদেশের এখ নপর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্জণ ফাইনালে খেলা। এশিয়া কাপে সবশেষ চার আসরের তিনটিতেই ফাইনালে উঠেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
তবে সবশেষ চার আসরের তিনটিতে ফাইনাল খেলা দলটি এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘সার্কসের বাঘ’। তার উপরে সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে অবস্থা আরও শোচনীয়। বাংলাদেশ টানা হারতে থাকলে কোন দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেয়? ক্রিকেট সম্পর্কে যার বিন্দু পরিমাণ জ্ঞান কিংবা আগ্রহ নেই তিনিও এই প্রশ্নের জবাবে জিম্বাবুয়ের নামই উচ্চারন করবেন। অথচ এই দলটির বিপক্ষেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে মাথা নিচু করে ফিরেছে ক্রিকেট দল। তার আগে উইন্ডিজের বিপক্ষেও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবশেষ ৫ ম্যাচে চারটিতেই হারের লজ্জার ভাগিদার হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। দলের ব্যর্থতার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছ্বাচারিতা, কর্তৃত্ব। কোচিং-স্টাফ প্যানেলও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। তবে আজ আলোচ্য বিষয় শুধুই মাঠের ক্রিকেট। বিসিবি ইস্যু ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক।
অন্যদিকে এশিয়ার বিশ^কাপে অন্যান্য প্রতিপক্ষের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স যেন হাজার ওয়াটের আলোর মতোই উজ্জ্বল। সবশেষ ৫ ম্যাচে দুটি দলই জিতেছে ৪টি করে ম্যাচ। এমনটি বাছাইপর্ব পেরিয়ের আসা হংকংয়ের পরিসংখ্যানও ঠিক একই রকম। এশিয়ার উদীয়মান শক্তির দেশ আফগানিস্তান সবশেষ ৫ ম্যাচে জিতেছে ২টি ম্যাচ। বাকি তিনটিতে হার দেখেছে রশিদ-মুজিবেরা। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে শ্রীলঙ্কা আছে বাংলাদেশের কাতারে। তারা সবশেষ ৫ ম্যাচের চার হারের বিপরীতে জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচে। তবে পরিসংখ্যান সবসময় হয়তো সত্য দিক নির্দেশনা দেয় না। লঙ্কানদের সবশেষ ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ ছিল বর্তমান বিশ^চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও বর্তমান এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত।

এবার আসি একনজরে এশিয়া কাপের ছয়টি দলের র‌্যাংকিংয়ে। বর্তমানে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষস্থানে আছে ভারত। তিনে তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিন্তান। এরপর আটে শ্রীলঙ্কা, নয়ে বাংলাদেশ, দশে আফগানিন্তান। হংকংয়ের অবস্থান ২৩ নম্বরে। র‌্যাংকিং বলছে, বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে আফগানিস্তান ও হংকংয়ের চেয়ে ভালো দল। তবে এটা কি ঠিক? আসুন পরিসংখ্যান দিয়েই যাচাই করে নিই। পরিসংখ্যানের পাতার সঙ্গে স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে দেখা যায়, হংকংয়ের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত এই পরিসরে একটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে কিন্তু জয় পেয়েছিল এই হংকং। সে সময় দলটি ক্রিকেট খেলে কি-না, এমন জিজ্ঞাসাও ছিল অনেকের।

এরপর আফগানিস্তান। কথার যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও দলটির বিপক্ষে ৮ ম্যাচে মাত্র তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে রাসেল ডোমিঙ্গোর ছাত্ররা। বাকি ৫টিতেই পেয়েছে হারের লজ্জা। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের অর্জন ৪ ম্যাচ জয়। বাকি ৮টিতে হার। তাতে কী! ভারতের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে হার ১০টিতে। একটিতে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে ১৩ হারের বিপরীতে হার দুটিতে।

তবুও আমরা আশা দেখি, আশাহত হই। স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নভ্রষ্ট হয় আমাদের। আমাদের আশা, স্বপ্ন বারবার ভেঙে গেলেও দ্বিগুণ শক্তিতে আশা বাঁধি, স্বপ্ন দেখি। অন্যদিকে হারলেও কি, জিতলেও কি? সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পেলেই চলে ক্রিকেটারদের। তারা দিনে হারে, রাতে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখে। সে চিঠির জবার কি মেলে?