ঢাকা ০৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি সজনে চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:২৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ অগাস্ট ২০২২
  • ১৪২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি উন্নত জাতের সজনে চাষ শুরু হয়েছে। উদ্যেক্তোর মুখে হাসি ফুটছে, অনেকেই অনুপ্রাণিত।

বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেনেগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু এক বিঘা জমিতে সজনে চাষ শুরু করেছেন। আট মাস আগে লাগানো ওডিসি-৩ জাতের এই সজনে গাছে ফুলও এসেছে। প্রথম বছরেই বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন মালয়েশিয়া ফেরত আব্দুল আজিজ টিটু। তার সফলতা দেখে স্থানীয় আরও অনেকে সজনে চাষের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করি। সবজির চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ, দাম ও বিক্রয় কৌশল নিয়ে আগ্রহ থাকায় নিয়মিত কৃষি বিষয়ক ভিডিও দেখি। ইউটিউবে ওডিসি-৩ জাতের সজনের ব্যাপক ফলনের কথা জানতে পারি। এরপর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও বিভিন্ন ভিডিও দেখে ওডিসি-৩ জাতের চাষ কৌশল আয়ত্বে আনি। পরে ২০২১ সালের শেষের দিকে ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে বীজ আনি। এরপর জমি প্রস্তুত করে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বীজ লাগিয়ে দেই। খুব দ্রুত বড় হয়েছে গাছগুলো। মাত্র আট মাসে আমার গাছে ফুল এসেছে। গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভাল। আশা করি অনেক ফল হবে এবার।

 

বীজ ক্রয়, বপন ও পরিচর্যার ব্যয় বিষয়ে টিটু বলেন, এক বিঘা (৫২ শতক) জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও রোপন করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। পরিচর্যা ও আগাছা পরিষ্কার করতে আরও ১০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। যেভাবে ফুল এসেছে আশা করি এবার এক থেকে দেড় লাখ টাকার সজনে বিক্রি করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, এই সজনে ক্ষেতকে আমি মাদার ক্ষেত হিসেবে তৈরি করব। এখানে উৎপাদিত সজনে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি, বীজ উৎপাদন করব। বীজ থেকে চারা তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্থানীয় রুহুল আমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা প্রচুর সবজি চাষ করি। সবজি ক্ষেতের পাশে দুই-একটা সজনে গাছও থাকে। কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিক চাষের কথা কখনও চিন্তা করিনি। সারা বছর সজনে হয় এটাও জানা ছিল না। আব্দুল আজিজ টিটুর ক্ষেত দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বীজের ব্যাপারে আজিজের সঙ্গে কথা বলেছি। জানুয়ারি মাসের দিকে চাষ শুরু করব।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, সজনে একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি। বাজারে সজনের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। এরপরেও বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ নেই বললেই চলে। সদর উপজেলার বেনেগাতি এলাকার মালয়েশিয়া ফেরত কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু বাণিজ্যিকভাবে সজনের চাষ করেছেন। তার গাছে ফলও এসেছে। আশা করি ফলও ভালো হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাকে সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

আব্দুল আজিজ টিটু ভাগ্য বদলের আশায় গিয়েছিলেন মালয়েশিয়া। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেননি। ২০১১ সালে নিজের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। এখন তিনি সফল চাষি। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে সজনেসহ মোট দশ বিঘা জমিতে সবজি ও ফলের চাষ করছেন। তার ক্ষেতে পেঁপে, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, ধুন্দল, কুশি, ঝিঙ্গে, ডাটা, কুমড়া, লেবু, চুইঝালসহ নানা জাতের সবজি রয়েছে। বসত ঘরের সামনে রয়েছে শতাধিক প্রকার চারার ছোট নার্সারি। সবজি ক্ষেত ও নার্সারি থেকে প্রতিবছর ৫ লাখ টাকার বেশি আয় রয়েছে টিটুর। টিটুর কৃষি ক্ষেতে সারা বছর ৪ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সফল কৃষক হিসেবে পুরস্কার পান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি সজনে চাষ

আপডেট টাইম : ০৮:২৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ অগাস্ট ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি উন্নত জাতের সজনে চাষ শুরু হয়েছে। উদ্যেক্তোর মুখে হাসি ফুটছে, অনেকেই অনুপ্রাণিত।

বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেনেগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু এক বিঘা জমিতে সজনে চাষ শুরু করেছেন। আট মাস আগে লাগানো ওডিসি-৩ জাতের এই সজনে গাছে ফুলও এসেছে। প্রথম বছরেই বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন মালয়েশিয়া ফেরত আব্দুল আজিজ টিটু। তার সফলতা দেখে স্থানীয় আরও অনেকে সজনে চাষের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করি। সবজির চাষ পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ, দাম ও বিক্রয় কৌশল নিয়ে আগ্রহ থাকায় নিয়মিত কৃষি বিষয়ক ভিডিও দেখি। ইউটিউবে ওডিসি-৩ জাতের সজনের ব্যাপক ফলনের কথা জানতে পারি। এরপর স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও বিভিন্ন ভিডিও দেখে ওডিসি-৩ জাতের চাষ কৌশল আয়ত্বে আনি। পরে ২০২১ সালের শেষের দিকে ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে বীজ আনি। এরপর জমি প্রস্তুত করে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বীজ লাগিয়ে দেই। খুব দ্রুত বড় হয়েছে গাছগুলো। মাত্র আট মাসে আমার গাছে ফুল এসেছে। গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভাল। আশা করি অনেক ফল হবে এবার।

 

বীজ ক্রয়, বপন ও পরিচর্যার ব্যয় বিষয়ে টিটু বলেন, এক বিঘা (৫২ শতক) জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও রোপন করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। পরিচর্যা ও আগাছা পরিষ্কার করতে আরও ১০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। যেভাবে ফুল এসেছে আশা করি এবার এক থেকে দেড় লাখ টাকার সজনে বিক্রি করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, এই সজনে ক্ষেতকে আমি মাদার ক্ষেত হিসেবে তৈরি করব। এখানে উৎপাদিত সজনে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি, বীজ উৎপাদন করব। বীজ থেকে চারা তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্থানীয় রুহুল আমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা প্রচুর সবজি চাষ করি। সবজি ক্ষেতের পাশে দুই-একটা সজনে গাছও থাকে। কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিক চাষের কথা কখনও চিন্তা করিনি। সারা বছর সজনে হয় এটাও জানা ছিল না। আব্দুল আজিজ টিটুর ক্ষেত দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বীজের ব্যাপারে আজিজের সঙ্গে কথা বলেছি। জানুয়ারি মাসের দিকে চাষ শুরু করব।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, সজনে একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি। বাজারে সজনের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। এরপরেও বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ নেই বললেই চলে। সদর উপজেলার বেনেগাতি এলাকার মালয়েশিয়া ফেরত কৃষক আব্দুল আজিজ টিটু বাণিজ্যিকভাবে সজনের চাষ করেছেন। তার গাছে ফলও এসেছে। আশা করি ফলও ভালো হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাকে সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

আব্দুল আজিজ টিটু ভাগ্য বদলের আশায় গিয়েছিলেন মালয়েশিয়া। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেননি। ২০১১ সালে নিজের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। এখন তিনি সফল চাষি। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে সজনেসহ মোট দশ বিঘা জমিতে সবজি ও ফলের চাষ করছেন। তার ক্ষেতে পেঁপে, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, ধুন্দল, কুশি, ঝিঙ্গে, ডাটা, কুমড়া, লেবু, চুইঝালসহ নানা জাতের সবজি রয়েছে। বসত ঘরের সামনে রয়েছে শতাধিক প্রকার চারার ছোট নার্সারি। সবজি ক্ষেত ও নার্সারি থেকে প্রতিবছর ৫ লাখ টাকার বেশি আয় রয়েছে টিটুর। টিটুর কৃষি ক্ষেতে সারা বছর ৪ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সফল কৃষক হিসেবে পুরস্কার পান তিনি।