ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুম থেকে উঠে মুমিনের ভাবনা-১

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০২২
  • ১৯৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করি; যেমন পানাহার, চলাফেরা, ঘুম ইত্যাদি, এগুলো যদি আমরা নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী করি, সকল কাজের শুরু- শেষের মাসনূন দুআগুলো পড়ি তাহলে এ কাজগুলোও নেকী অর্জনের মাধ্যম হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা অগণিত নেকী লাভ করতে পারব এবং আমলের খাতা সমৃদ্ধ করতে পারব।

নিয়ত ও সুন্নাহসম্মত কর্মপন্থা গ্রহণের দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের এসব আদত-অভ্যাস ও কর্মই হয়ে যায় নেকী অর্জনের মাধ্যম। তাই মুমিন যখন খাওয়া ও ঘুমের মতো অভ্যাসগত কাজগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী করে এর দ্বারা মুমিন অজস্র নেকী লাভ করে।

দৈনন্দিন কাজের শুরু ও শেষের মাসনূন দুআগুলো মুসলিম উম্মাহর এক মহা সম্পদ। উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহামূল্যবান তোহফা। এগুলোর অর্থ ও মর্ম এবং ভাব ও আবেদন অনেক গভীর। এগুলোর শব্দে শব্দে ফুটে উঠেছে রাব্বে কারীমের সামনে বিনীত বান্দার হৃদয়ের আকুতি।

বান্দা কীভাবে তার মালিককে সম্বোধন করবে, কীভাবে তাঁর সামনে নিজেকে পেশ করবে, কীভাবে রাব্বে কারীমের হামদ-শোকর ও প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা আদায় করবেÑ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এসব দুআ। এতে যেমন আছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ তেমনি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝার শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা। এগুলো বান্দাকে ভাবতে শেখায়, জীবনের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে সহায়তা করে।

সব কাজে মুমিনের ভাবনা কেমন হবে, মুমিনের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, চাওয়া-পাওয়া কেমন হওয়া উচিতÑ তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে উল্লেখিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পঠিত বিভিন্ন দুআয়। যদি প্রতিটি কাজের আগে-পরের দুআগুলো গুরুত্বের সাথে পড়া হয় এবং এর অর্থ ও মর্ম নিজের মাঝে ধারণের চেষ্টা করা হয়; তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর ভালোবাসা ও মজবুত সম্পর্কের সেতুবন্ধন।

এ দুআগুলোর শব্দে শব্দে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব, তুচ্ছতা ও অসহায়ত্ব এবং তার হৃদয়ের ব্যাকুলতার প্রকাশ ঘটে। এসব দুআর মাধ্যমে মহান সত্তার সামনে নিজের দুর্বলতা ও অযোগ্যতার এবং তার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের গভীর প্রকাশ ঘটে। এ কারণেই এগুলো মুমিন বান্দার অন্তরে সৃষ্টি করে শোকরগোযার ও বিনয়াবনত হওয়ার অনুপম শিক্ষা। আর বান্দা যখন এ অনুভূতি নিয়ে মহান মালিকের দরবারে দুআ নিবেদন করতে পারে তখন তার দেহ-মন তথা গোটা সত্তা লাভ করে অনাবিল আনন্দ ও জান্নাতী প্রশান্তি।

তাই তো রাসূলে কারীম (সা.) সব কাজেই দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। এসব দুআর একটি হলো, ঘুম থেকে উঠে আমরা যে দুআ পড়ি : ‘আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আহয়ানা বা’অদানা আমাতান, ওয়া ইলাইহিন নুশুর’। অর্থ : প্রশংসা সব আল্লাহর, যিনি আমাদের (ঘুম নামক) মৃত্যু দেয়ার পর আবার জীবিত করেছেন। আর তাঁর কাছেই আমাদের পুনরুত্থান হবে (ফিরে যেতে হবে)। (সহীহ বুখারী : ৭৩৯৪)।

ঘুমালে মানুষ জীবন ও জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাগ্রত হওয়ার পর শরীরে কিছুটা জড়তা থাকে। ঘুম ঘুম ভাব থাকে। আড়মোড়া দিয়ে ধীরে ধীরে সজাগ হয় একজন মানুষ। আবার জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে যুক্ত হয়; ঘুমানোর কারণে যা থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এ যেন জীবনের নতুন সূচনা! এসময়ও বান্দা যেন তার মালিককে না ভোলে। দীর্ঘক্ষণ ঘুমের গাফলত যেন তাকে গাফেল না করে দেয় এবং আল্লাহ যে তাকে আবার জীবন ও জগতের সাথে যুক্ত হওয়ার তাওফীক দিলেনÑ এর কৃতজ্ঞতা যেন বান্দা আদায় করে। এ উদ্দেশ্যেই রাসূলে কারীম (সা.) দুআ শিখিয়েছেন : ‘আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আহয়ানা ………।

এ শব্দগুলোর উচ্চারণ এবং একটু ভাবনা আমাকে নিয়ে যেতে পারে মালিকের খুব সন্নিকটে, যার নৈকট্য লাভ মুমিন-জীবনের সাধনা-কামনা। পাশাপাশি এ দুআ সুন্দরভাবে দিনটি শুরু করে নতুনভাবে সুন্দর একটি জীবন গড়ে তোলার প্রতি উদ্যমী করে তোলে। সাথে সাথে বান্দা যেন আখেরাত না ভোলে এবং এ মৃত্যু থেকে জীবন লাভের সময় আসল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনকে ভুলে না যায়Ñ এ দুআ ও তার শব্দ-মর্ম আমাদের সামনে এ শিক্ষাকেও খুব স্পষ্টভাবে মেলে ধরে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঘুম থেকে উঠে মুমিনের ভাবনা-১

আপডেট টাইম : ০৯:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করি; যেমন পানাহার, চলাফেরা, ঘুম ইত্যাদি, এগুলো যদি আমরা নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী করি, সকল কাজের শুরু- শেষের মাসনূন দুআগুলো পড়ি তাহলে এ কাজগুলোও নেকী অর্জনের মাধ্যম হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা অগণিত নেকী লাভ করতে পারব এবং আমলের খাতা সমৃদ্ধ করতে পারব।

নিয়ত ও সুন্নাহসম্মত কর্মপন্থা গ্রহণের দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের এসব আদত-অভ্যাস ও কর্মই হয়ে যায় নেকী অর্জনের মাধ্যম। তাই মুমিন যখন খাওয়া ও ঘুমের মতো অভ্যাসগত কাজগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী করে এর দ্বারা মুমিন অজস্র নেকী লাভ করে।

দৈনন্দিন কাজের শুরু ও শেষের মাসনূন দুআগুলো মুসলিম উম্মাহর এক মহা সম্পদ। উম্মাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহামূল্যবান তোহফা। এগুলোর অর্থ ও মর্ম এবং ভাব ও আবেদন অনেক গভীর। এগুলোর শব্দে শব্দে ফুটে উঠেছে রাব্বে কারীমের সামনে বিনীত বান্দার হৃদয়ের আকুতি।

বান্দা কীভাবে তার মালিককে সম্বোধন করবে, কীভাবে তাঁর সামনে নিজেকে পেশ করবে, কীভাবে রাব্বে কারীমের হামদ-শোকর ও প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা আদায় করবেÑ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এসব দুআ। এতে যেমন আছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ তেমনি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝার শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা। এগুলো বান্দাকে ভাবতে শেখায়, জীবনের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে সহায়তা করে।

সব কাজে মুমিনের ভাবনা কেমন হবে, মুমিনের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, চাওয়া-পাওয়া কেমন হওয়া উচিতÑ তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে উল্লেখিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পঠিত বিভিন্ন দুআয়। যদি প্রতিটি কাজের আগে-পরের দুআগুলো গুরুত্বের সাথে পড়া হয় এবং এর অর্থ ও মর্ম নিজের মাঝে ধারণের চেষ্টা করা হয়; তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর ভালোবাসা ও মজবুত সম্পর্কের সেতুবন্ধন।

এ দুআগুলোর শব্দে শব্দে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব, তুচ্ছতা ও অসহায়ত্ব এবং তার হৃদয়ের ব্যাকুলতার প্রকাশ ঘটে। এসব দুআর মাধ্যমে মহান সত্তার সামনে নিজের দুর্বলতা ও অযোগ্যতার এবং তার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের গভীর প্রকাশ ঘটে। এ কারণেই এগুলো মুমিন বান্দার অন্তরে সৃষ্টি করে শোকরগোযার ও বিনয়াবনত হওয়ার অনুপম শিক্ষা। আর বান্দা যখন এ অনুভূতি নিয়ে মহান মালিকের দরবারে দুআ নিবেদন করতে পারে তখন তার দেহ-মন তথা গোটা সত্তা লাভ করে অনাবিল আনন্দ ও জান্নাতী প্রশান্তি।

তাই তো রাসূলে কারীম (সা.) সব কাজেই দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। এসব দুআর একটি হলো, ঘুম থেকে উঠে আমরা যে দুআ পড়ি : ‘আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আহয়ানা বা’অদানা আমাতান, ওয়া ইলাইহিন নুশুর’। অর্থ : প্রশংসা সব আল্লাহর, যিনি আমাদের (ঘুম নামক) মৃত্যু দেয়ার পর আবার জীবিত করেছেন। আর তাঁর কাছেই আমাদের পুনরুত্থান হবে (ফিরে যেতে হবে)। (সহীহ বুখারী : ৭৩৯৪)।

ঘুমালে মানুষ জীবন ও জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাগ্রত হওয়ার পর শরীরে কিছুটা জড়তা থাকে। ঘুম ঘুম ভাব থাকে। আড়মোড়া দিয়ে ধীরে ধীরে সজাগ হয় একজন মানুষ। আবার জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে যুক্ত হয়; ঘুমানোর কারণে যা থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এ যেন জীবনের নতুন সূচনা! এসময়ও বান্দা যেন তার মালিককে না ভোলে। দীর্ঘক্ষণ ঘুমের গাফলত যেন তাকে গাফেল না করে দেয় এবং আল্লাহ যে তাকে আবার জীবন ও জগতের সাথে যুক্ত হওয়ার তাওফীক দিলেনÑ এর কৃতজ্ঞতা যেন বান্দা আদায় করে। এ উদ্দেশ্যেই রাসূলে কারীম (সা.) দুআ শিখিয়েছেন : ‘আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আহয়ানা ………।

এ শব্দগুলোর উচ্চারণ এবং একটু ভাবনা আমাকে নিয়ে যেতে পারে মালিকের খুব সন্নিকটে, যার নৈকট্য লাভ মুমিন-জীবনের সাধনা-কামনা। পাশাপাশি এ দুআ সুন্দরভাবে দিনটি শুরু করে নতুনভাবে সুন্দর একটি জীবন গড়ে তোলার প্রতি উদ্যমী করে তোলে। সাথে সাথে বান্দা যেন আখেরাত না ভোলে এবং এ মৃত্যু থেকে জীবন লাভের সময় আসল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনকে ভুলে না যায়Ñ এ দুআ ও তার শব্দ-মর্ম আমাদের সামনে এ শিক্ষাকেও খুব স্পষ্টভাবে মেলে ধরে।