নারায়ণগঞ্জ-৫ অাসনের এমপি সেলিম ওসমানকে কান ধরে উঠবস করার আহ্বান জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমাবেশের মধ্য থেকে এই অহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে হাজী পিয়ার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক নির্যাতন ও জনসন্মুখে কান ধরে উঠবস করানোর প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে এর আগে এ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেই সেলিম ওসমান এখন একজন শিক্ষককে অপদস্ত করে পুরো জাতিকে অপদস্ত করেছে। তাই তার শাস্তি প্রয়োজন।
সমাবাশে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ বলেছেন, ‘ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে নাটক করেছে ওসমান পরিবার। সেলিম ওসমান নাটক করেছে। এই সেলিম ওসমান সেই পিস্তল সেলিম ওসমান। যিনি কিনা পিস্তল নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বোস কেবিনে একজনকে মারতে গিয়ে ছিলেন। আজ সেই পিস্তল সেলিম ওসমান এমপি হয়ে দানবের মতো কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের ২৭টি হিন্দু পরিবারে জায়গা জমি দখল করেছে। ওসমান পরিবার একটি সাম্প্রদায়িক পরিবার।
জাতীয় সংসদের উদ্দেশ্যে হালিম আজাদ বলেন, ‘আজকেই সেলিম ওসমানকে সংসদ থেকে বহিস্কার করতে হবে। তাকে যেন সংসদে প্রবেশ করতে না দেয়া হয়। প্রবেশ করতে চাইলে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে সংসদ থেকে বের করে দিবেন।’
নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশ্যে হালিম আজাদ বলেন,
‘এ সেলিম ওসমান যদি সাংবাদিকদের কাছে আসে তবে আপনারা তার কোন সহযোগিতা করবেন না। যদি করেন তবে আপনরাও জন্তু দানবের সহযোগি। এরা অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে। অসংখ্য সন্তানকে হত্যা করেছে।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘বাবুরাইল এলাকায় ৫খুন হয় দেখতে যায় নাই, সাত খুন হয় দেখাতে যায় না। বন্দরে একটা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সমস্যা সমাধানের জন্য চলে গেলেন সেলিম ওসমান। এসব নারায়ণগঞ্জবাসী বুঝে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন ওসমান পরিবারের অনুগত বাহিনীতে পরিনত হয়েছে।’
হিন্দু নেতাদের উদ্দেশ্যে রফিউর রাব্বি বলেন,‘নারায়ণগঞ্জের হিন্দু নেতারা সেলিম ওসামনের পক্ষে ওই শিক্ষকে বলাতে চান যে সেলিম ওসমানের কারণে তিনি প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন। এসব হিন্দু নেতাদের চরিত্র নারায়ণগঞ্জবাসী জানে।
সিপিবির জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। সারা শিক্ষক সমাজকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে। তাই যারা রাস্তায় চাপাতিদিয়ে মানুষ কোপিয়ে হত্যা করে ও সংসদ সদস্য সমান অপরাধী। দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘জাতির বিবেক আজ ভুলণ্ঠিত। জাতির কাছে মাফ চাইতে হবে। এ অপরাধের জন্য মাফ চাইলে হবে না। তাকেও কাণ ধরে উঠবস করে এর মাফ চাওয়া প্রয়োজন।’
বাসদের জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জ মৃত্যুর উপত্যকায় ছিল। যেটা দেশবাসী তথ্য সমগ্র পৃথিবী জেনেছে। তেমনি আবার শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করে পৃথিবীকে ও শিক্ষক জাতিকে অপমান করা হয়েছে। এটা বন্যপ্রানীদের কাজ ছাড়া কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। সুষ্ঠু বিচার চাই।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তাদের বিশ্বাসের অবস্থান হারিয়ে ফেলেছে। এ তদন্ত কমিটি বাতিল করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শামীম ওসমানের মতো সেলিম ওসমানের পক্ষে দাঁড়াবেন না । আর দাঁড়ালে আবারো ভুল করবেন।
দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘সেলিম ওসমান বিভিন্ন সমাবেশে বলেন তিনি বাস চালক, মুরগী বিক্রেতা ছিলেন। আর সেলিম ওসমান বাসের ড্রাইভারের মোত আচরণ করেছেন। দুই ভাইয়ের সময় শেষ। সেলিম ওসমানকে ১০০ বার নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় কান ধরে উঠবস করতে হবে।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশন জেলার সহ সভাপতি আরিফ হোসেন নয়নের সভাপতিত্বে এবং জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি সজিব শরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর জেলা সভাপতি সুলতানা আক্তার এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর আহ্বায়ক শুকদেব পাল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সোবাহান। সূত্র : নিউজ না.গঞ্জ