গ্রামে লাগামহীন লোডশেডিং, নেই কোনো শিডিউল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার বাইরে লোডশেডিংয়ের কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। শিডিউল ভেঙে দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রামে লাগামহীন লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রামের কোথাও শিডিউল মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অভিযোগের তির পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর দিকে। সরকার ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বললেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ৭০টি সমিতির কেউ এটা মানছে না। প্রতিদিন এসব সমিতির আওতাধীন এলাকায় গড়ে চার থেকে ৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিস্তর সমালোচনা। এ কারণে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পমালিকরা বিপাকে পড়ছেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা কারখানা চালাতে পারছেন না। ফলে শিল্পোৎপাদনে ধস নেমেছে। দিনের বেলায় বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয় সামাল দিতে পারছে না। গ্রামে গ্রামে ডিজেল সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সেচসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

বর্তমানে সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৭০টি সমিতি রয়েছে। এছাড়া পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) আওতায় ৪টি অফগ্রিড এলাকায় ও পার্বত্য অঞ্চলের ২৬টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে কাজ করছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, রংপুর রাজশাহী অঞ্চলে আছে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। আরইবির সমিতিগুলোর অভিযোগ, তারা প্রতিদিন চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এ কারণে তারা সরকারি শিডিউল মানতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য, সাধারণ সময়েও সমিতিগুলো গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করে থাকে। এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে গিয়ে তাদের প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গরম বাড়লে এ লোডশেডিং আরও ১-২ ঘণ্টা বেড়ে যায়। এছাড়া নানা কারণে প্রতিদিন একাধিকবার লাইন ট্রিপ হয়। গ্রাহকরা সেটাকেও লোডশেডিং বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। রোববার সারা দিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হালকা বৃষ্টির কারণে লোডশেডিং কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও গড়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল ঢাকার বাইরের গ্রামগুলো।

রোববার বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের বিভিন্ন ফিডারগুলোতে সর্বনিম্ন ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করার শিডিউল দিলেও বাস্তবে ছিল আরও বেশি। সমিতির এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রোববার পিক আওয়ারে তারা অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পেয়েছেন। ফলে তাদের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। গরম বেশি হলে এটা আরও বাড়াত। শাকপালা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, শনিবার রাত থেকে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত গড়ে ৬ বার লোডশেডিং করেছে এ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রতিবারই লোডশেডিংয়ের স্থায়িত্ব ছিল ১ ঘণ্টা। রোববার সকাল ৮টা থেকে ৯টা, বিকাল ৪টা থেকে ৫টা, রাত ৯টা থেকে ১০টা এবং রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিডিউল দিলেও দিনের বেলায়ই তা ভেঙে ফেলেছিল সমিতি। তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা শিডিউল মানতে পারেননি। বিশেষ করে জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজের সময় চাহিদা বেড়ে গেলে লাইন ট্রিপ করে। তখন লাইন মেরামত করতে যে সময় লাগে সেগুলোকে গ্রাহকরা অতিরিক্ত লোডশেডিং হিসাবে ধরে নেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রোববার তারা গড়ে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করেছে দিনের বেলায়। এর মধ্যে ধীনগর, কানপাড়া, আমনুরা, রেল কলোনি, শিমুলতলা, মিশন, ঝিলিকবাজার, কলেজ রোড, কদমতলা এলাকায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল দেওয়া হয়। সকাল ৮টা থেকে ৯টা, দুপুর ১টা থেকে ২টা, বিকাল ৫টা থেকে ৬টা, রাত ৯টা থেকে ১০টা এ সময় বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্ত দুপুর পর্যন্ত ৪ বার লোডশেডিং হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় শিডিউল রক্ষা করতে পারছে না সমিতি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রোববার মাত্র ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছে। অথচ চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট। এ কারণে তারা ৪ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল দিলেও বাস্তবে আরও বেশি করতে হয়।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিদিনের চাহিদা ৫০ থেকে ৭২ মেগাওয়াট। কিন্তু তারা পাচ্ছেন গড়ে ৩৮ মেগাওয়াটের কম। এ কারণে তাদের শিডিউল ভেঙে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পিডিবি জানিয়েছে, সারা দেশে রোববার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা ১২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং হতে পারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট।

সিলেটে পল্লী বিদ্যুতের ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং : সিলেটে শহরের চেয়ে গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রায় দ্বিগুণ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, সব উপজেলাতেই দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। একদিকে দাবদাহ অন্যদিকে লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। সিলেটের ১৩ উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের দুটি সমিতির আওতাভুক্ত। সমিতি ১ এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী রোববার যুগান্তরকে জানান, চাহিদার তুলনায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তারা। সকালে চাহিদা ছিল ৭৭ পেয়েছেন ৫০ মেগাওয়াট। দুপুরের দিকে ৭৯ মেগাওয়াটের বিপরীতে পেয়েছেন ৫৫। তিনি জানান, ৮ উপজেলায় দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যেসব এলাকায় হাসপাতাল ও শিল্পকারখানা রয়েছে সেখানে একটু কম করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর অবস্থা আরও নাজুক। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছে অর্ধেক। মহাব্যবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় যুগান্তরকে জানান, সকালে ২৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীত পেয়েছেন ১২ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে ৪৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছেন ২৫ মেগাওয়াট। সে কারণে প্রায় দিনের অর্ধেক সময়ই ৫ উপজেলায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং : চট্টগ্রামে দুঃসহ গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং থাকার কারণে মানুষের অবস্থা কাহিল। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বিদ্যুৎ বিভাগ অফিসিয়ালি জানালেও বাস্তবে দুই থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। নগরীর চেয়ে উপজেলাগুলোতে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে পিডিবি জানিয়েছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দিনে ও রাতে ১৩০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি সামাল দিতেই প্রতিদিন এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে বলেও বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে সরকারিভাবে পরিচালিত গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিটের মধ্যে একটি মাত্র ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বাকি তিনটি ইউনিটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ। রাউজানে গ্যাসনির্ভর দুটি ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ৪২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে একটি ইউনিট থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। অপর ইউনিটটি প্লেট ভেঙে যাওয়ায় মেরামত কাজ চলছে। এটি মেরামত কাজ শেষ হতে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে। এদিকে শিকলবাহা এলাকায় গ্যাসনির্ভর ২২৫ ও ১৫০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিট চালু রয়েছে। এখানে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দুটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ ।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তারা জানান, তাদের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৬০ মেগাওয়াট। চাহিদা সব সময় একই থাকে না। শনিবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এ বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৪০ মেগাওয়াট। চাহিদা ছিল ১৫০ মেগাওয়াট। রোববার বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২৭ মেগাওয়াট। আর ঘাটতি ছিল ১০ মেগাওয়াট।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, লোডশেডিং ১ ঘণ্টার কথা বলা হলেও বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতির কারণে বেশি সময় নিতে হচ্ছে। আমরা দৈনিক যে পরিবাণ বরাদ্দ পাচ্ছি তা সমভাবে বণ্টনের চেষ্টা করি। রোববার ঘাটতি ছিল ১০ মেগাওয়াট। তবে এই মুহূর্তে শিডিউল ঠিক রাখা কঠিন। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। ঘাটতির পরিমাণ রাতেই বেশি। ঘাটতি সামাল দিতে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

রাজশাহীতে গ্রামের মানুষ ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না : ১৩ জুলাই থেকে রাজশাহীসহ আশপাশের এলাকায় পালা করে চলছে লোডশেডিং। রাজশাহী মহানগরের অনেক এলাকায় দিন-রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে ভিআইপি ব্যবসাকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া কিছুটা কম। ভুক্তভোগী নগরীর বাসিন্দারা বলছেন, সরকারের ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজশাহীতে লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক এলাকায় টানা এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র খরা ও গরমের প্রকোপ চলছে। দিনে-রাতের অনেক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বেড়েছে। আর হাসপাতালেও স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং সীমাহীন দুর্ভোগ তৈরি করেছে। রাজশাহী উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাজশাহী ও নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। গত ৭ দিনে পবিসভুক্ত গ্রামীণ এলাকাগুলোতে দিন-রাতে ১২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রগুলো অচল হয়ে পড়ছে। এতে আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা সদর ও ছয়টি উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ রোববার বলেছেন নেসকোর অধিভুক্ত এলাকায় লোডশেডিং কিছুটা কম। নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, রাজশাহী মহানগরীসহ বিভাগের আটটি জেলা সদর নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এবং ছয়টি উপজেলা সদর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও শেরপুরে নেসকো রাজশাহী থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

শনিবার তাদের অধিভুক্ত এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৭৮ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৩৯১ মেগাওয়াট। ফলে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৪ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিং দিতে হয়েছে।

অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ এলাকা রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায়। রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর এবং নাটোর পবিসের আওতায় বাগমারা, বাঘা ও চারঘাটের কিছু অংশ রয়েছে। এসব এলাকায় দিন-রাতের মধ্যে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) একরামুল হক জানান, রোববার তাদের চাহিদা ছিল ৭০ মেগাওয়াট। পাওয়া গেছে ৩৫ মেগাওয়াট। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হয়েছে। তবে দিনে দিনে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় গ্রামের মুসাহাক আলি বলেন, বিদ্যুৎ একবার গেলে আড়াই-তিন ঘণ্টা আসে না। তিনি আরও জানান, এখন আমন আবাদের ভরা মৌসুম। আকাশে বৃষ্টি নেই। বরেন্দ্রের গভীর নলকূপগুলো বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। সীমিত বিদ্যুতে বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমন আবাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে। মুসার মতো শরিফুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, সেচ এলাকাগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। জেনারেটর চালাতে গিয়ে ডিজেল সংকট দেখা দিয়েছে গ্রামে।

নেত্রকোনার বাসিন্দা ফৌজিয়া সুলতানা জানান, ‘শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার বেলা ৩টা; এই ১৫ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচবার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মেয়াদে বিদ্যুৎ ছিল না। মাগুরা জেলার কুমরুল গ্রামের বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ গুহ বলেন, দিনে সাধারণত বেশ কয়েকবার করেই লোডশেডিং হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়।

রংপুরে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি করা হয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। ১ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ এলেও আধা ঘণ্টা পর আবার চলে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দার।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তালিকা অনুযায়ী কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং হলে তারপর সেখানে দুই ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের পর ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে। তবে বাস্তবে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে না।

নেসকো সূত্র জানায়, রংপুর জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০-১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণে বিভাগীয় জেলায় রোববার সকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের কাচারি বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় চারবার লোডশেডিং হয়েছে।

এ বিষয়ে নেসকোর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় দিন-রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে নানা কারণে সেটিও রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যস্থাপক (জিএম) সন্তোষ কুমার ঘোষ জানান, আমরা যতটা পারছি লোড ম্যানেজমেন্ট করছি। দিনে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। রাতে যা পাচ্ছি তা দিয়ে দুবার দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরি মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বলেন, আমাদের ১৫১ মেগাওয়াটের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পেলেও কোনোমতে চালাতে পারি। শনিবার মুক্তাগাছায় ৪৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৫ মেগাওয়াট দেওয়া হয়েছিল। পরে দুই মেগাওয়াট বাড়ানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর