বিজয় দাস, প্রর্তিনিধি নেত্রকোনাঃ নেত্রকোনায় বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি কমছে আর বাড়ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সতর্কতা অবলম্বন না করলে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী , জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়াও পেটের পীড়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ, জ্বর, মাথাব্যথাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া বলেন, “জেলার বন্যাকবলিত অঞ্চলে এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৫৩৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৩ জন। অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকলকে বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
জেলার ১০ উপজেলার ৭৬ ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় হাওর সংলগ্ন উপজেলা খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জ। অগণিত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়। পানি নামার পর মানুষ বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরলেও ডায়রিয়াসহ নানা রোগের কবলে পড়ে।মারা গেছেন অনেকেই।
কলমাকান্দা উপজেলার পাগলা এলাকার মধ্যবয়সী কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, “বন্যার পরে অহন পানি নামতাছে। অসুখ-বিসুখ অইতাছে। আমরার ঘরে দুই পোলাপানসহ বউয়ের জ্বর, চুলকানি অইছে।”
আমারও পেটটা ভালা না। সরকারি মেডিকেল টিমের লোকজনের দেহা পাইছি না। ফার্মেসি থেইক্যা আইন্যা ওষুধ কাইতাছি। অহন ভালার দিকে।”
উপজেলা খালিয়াজুরীর সরকারহাটি গ্রামের বাসিন্দা টুকটুকি সরকার (৩২) বলেন, “পাতলা পায়খানা অইতাছিল। পরে সরকারি ওষুধ পাইছি। ডাক্তারও দেহাইতাম পারছি। অহন ভালাই আছি।”
বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছেন উপজেলার আদমপুর গ্রামের যুবক সাগর সরকার। তিনি বলেন, “বানের পানিতে হাতে পাওয়ে চর্মরোগ অইছিলো। অহন কিছুটা ভাল অইছি।”
তবে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ নাগাদ দেড় লাখ ওআরএস স্যালাইন ও দেড় লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। মোট ৯৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে দুর্গত এলাকায়। জেলার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় সেনা সদস্যরাও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া জানান, জেলা স্বাস্থ্যবিভাগে দুই লাখ ৫২ হাজার (খাবার স্যালাইন) ওআরএস স্যালাইন, ১০০০ এমএলের এক হাজার ৪৯৮ ব্যাগ, ৫০০ এমএলের এক হাজার ১৭৬ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন মজুদ রয়েছে। তাছাড়া ৬৮ হাজার ৯০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সাপের বিষ প্রতিরোধক ৩৭০ ভায়েল ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রয়েছে। জেলার দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিমের সদস্যরা রাত-দিন কাজ করছে। তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ দিচ্ছেন।”
কেউ যদি তাৎক্ষণিক মেডিকেল টিমের সদস্যদের না পান তাহলে ঘরে বসে না থেকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার আহ্বান জানান সিভিল সার্জন।
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও দুর্গত এলাকার বানভাসি মানুষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুন রাতে হানা দেওয়া বানের পানিতে নেত্রকোণার ১০ উপজেলার ৭৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন মানুষ ।
বন্যা শুরুর দুই দিনের মাথায় জেলা প্রশাসকের আহ্বানে খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যার্তদের উদ্ধার ও সেবায় কাজ শুরু করেন সেনা সদস্যরা। পরে সেনা সদস্যরা আরো তিনটি উপজেলায় কাজ শুরু করেন।এরমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৯৮ মেট্রিক টন জিআর চাল, শিশু ও গোখাদ্যসহ নগদ ৫৮ লাখ টাকা, সাত হাজার ১১৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বন্যায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। দেখভাল করছে প্রশাসন।রোগে আক্রান্তদের জন্য মেডিকেল টিম কাজ করছে।যারা বেশি আক্রান্ত হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।