ঢাকা ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্যদেশের বিরোধিতা বা সমর্থন নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৪:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬
  • ২৮১ বার

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার পর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর কিছু অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই।

ফাঁসি কার্যকরের পর এর নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব পাশ করা হয়। এরই মধ্যে দেশটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে আপত্তি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ এই নেতার ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে তুরস্ক ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরুপ মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর ফাঁসি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি তার দেশের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অন্যদেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কতটা যৌক্তিক এবং দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এর কতোটা প্রভাব পড়তে পারে, তা জানতে পূর্বপশ্চিম কথা বলেছে দেশের চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে।

ভারতের সমর্থন দেয়ার দরকার ছিল না
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ
(সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী)

মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের বিচার হচ্ছে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান এর বিরোধীতা করবে এটা খুব স্বাভাবিক। কারণ তাদের পক্ষে করার সময় তারা অপরাধগুলো করেছে। তাই পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক কিছু না। আর তুরস্কের ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক বোধগম্য নয়। বর্তমানে দেশটি ওআইসির নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকে তারা হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমার মনে হয়, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আর এটা আমাদের দেশের সাথে বিশ্বের ‍কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশী প্রভাব ফেলবে না। পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ভারত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকরে সমর্থন জানিয়েছে। ভারতের এই সমর্থন দেয়ার কোন দরকার ছিল না। কারণ এটা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যপার ।

বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জতিক অঙ্গনে চক্রান্ত চলছে
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
(সভাপতি, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব দুইটা ভাগে ভাগ হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তানসহ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আরেকদিকে ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়াসহ সমাজতন্ত্রিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানায় এবং সাহায্য-সহযোগিতা করে। আমাদের অাদর্শবিচ্যুত রাজনৈতিক দুর্বলতা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পূনর্বাসিত করে। তারা এখনও নানা কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নীতিগতভাবেই পাকিস্তান মেনে নিতে পারবে না, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আর তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের নীতি-আদর্শ অনেকটাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলে যায়, তাই তাদের বিরোধীতাও স্বাভাবিক। তবে আমি বলবো বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জতিক অঙ্গনে যেসব চক্রান্ত চলছে মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষের মানুষকে এক হয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।

অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই ভারতের এই সমর্থন
অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন
(চেয়ারম্যান, প্রত্নতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই তিক্ত। তারা এ বিষযে বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ, তারপরও তাদের বিরোধিতা খুব বেশী আমাদের দেশের কূটনীতিতে বা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সেভাবে নেই। একটা সময় পরে এসব ঠিক হয়ে যাবে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাকিস্তান বিরোধীতা করছে তাই ভারত সমর্থন করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এই সমর্থনের আরেকটা কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অনেক অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই ভারতের এই সমর্থন। আর ভারত কখনো চায় না, তার পার্শ্ববর্তী দেশে মৌলবাদী কোন শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠুক।

পাকিস্তানের বিরোধিতাই প্রমাণ করে অপরাধীরা তাদের দোসর
জোনায়েদ সাকি
(আহবায়ক, গণসংহতি আন্দোলন)

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। এ বিষয়ে কে বিরোধিতা করলো কে সমর্থন করলো সেটা বড় বিষয় না। পাকিস্তানের বিরোধীতা আবারও প্রমাণ করে এই অপরাধিরা তাদের দোসর এবং তারা তাদের ছায়া হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে। আর ভারতের সমর্থন দেয়ায় কোন কিছু যায় আসে না। কারণ এই বিচার বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি মনে করি, অন্যদেশের বিরোধিতা বা সমর্থন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অন্যদেশের বিরোধিতা বা সমর্থন নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই

আপডেট টাইম : ১২:৫৪:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার পর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর কিছু অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই।

ফাঁসি কার্যকরের পর এর নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব পাশ করা হয়। এরই মধ্যে দেশটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে আপত্তি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ এই নেতার ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে তুরস্ক ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরুপ মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর ফাঁসি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি তার দেশের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অন্যদেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কতটা যৌক্তিক এবং দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এর কতোটা প্রভাব পড়তে পারে, তা জানতে পূর্বপশ্চিম কথা বলেছে দেশের চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে।

ভারতের সমর্থন দেয়ার দরকার ছিল না
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ
(সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী)

মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের বিচার হচ্ছে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান এর বিরোধীতা করবে এটা খুব স্বাভাবিক। কারণ তাদের পক্ষে করার সময় তারা অপরাধগুলো করেছে। তাই পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক কিছু না। আর তুরস্কের ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক বোধগম্য নয়। বর্তমানে দেশটি ওআইসির নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকে তারা হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমার মনে হয়, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আর এটা আমাদের দেশের সাথে বিশ্বের ‍কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশী প্রভাব ফেলবে না। পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ভারত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকরে সমর্থন জানিয়েছে। ভারতের এই সমর্থন দেয়ার কোন দরকার ছিল না। কারণ এটা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যপার ।

বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জতিক অঙ্গনে চক্রান্ত চলছে
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
(সভাপতি, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব দুইটা ভাগে ভাগ হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তানসহ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আরেকদিকে ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়াসহ সমাজতন্ত্রিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানায় এবং সাহায্য-সহযোগিতা করে। আমাদের অাদর্শবিচ্যুত রাজনৈতিক দুর্বলতা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পূনর্বাসিত করে। তারা এখনও নানা কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নীতিগতভাবেই পাকিস্তান মেনে নিতে পারবে না, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আর তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের নীতি-আদর্শ অনেকটাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলে যায়, তাই তাদের বিরোধীতাও স্বাভাবিক। তবে আমি বলবো বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জতিক অঙ্গনে যেসব চক্রান্ত চলছে মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষের মানুষকে এক হয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।

অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই ভারতের এই সমর্থন
অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন
(চেয়ারম্যান, প্রত্নতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই তিক্ত। তারা এ বিষযে বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ, তারপরও তাদের বিরোধিতা খুব বেশী আমাদের দেশের কূটনীতিতে বা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সেভাবে নেই। একটা সময় পরে এসব ঠিক হয়ে যাবে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাকিস্তান বিরোধীতা করছে তাই ভারত সমর্থন করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এই সমর্থনের আরেকটা কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অনেক অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই ভারতের এই সমর্থন। আর ভারত কখনো চায় না, তার পার্শ্ববর্তী দেশে মৌলবাদী কোন শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠুক।

পাকিস্তানের বিরোধিতাই প্রমাণ করে অপরাধীরা তাদের দোসর
জোনায়েদ সাকি
(আহবায়ক, গণসংহতি আন্দোলন)

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। এ বিষয়ে কে বিরোধিতা করলো কে সমর্থন করলো সেটা বড় বিষয় না। পাকিস্তানের বিরোধীতা আবারও প্রমাণ করে এই অপরাধিরা তাদের দোসর এবং তারা তাদের ছায়া হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে। আর ভারতের সমর্থন দেয়ায় কোন কিছু যায় আসে না। কারণ এই বিচার বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি মনে করি, অন্যদেশের বিরোধিতা বা সমর্থন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।