ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদি আরবের খেজুর বাংলাদেশে চাষ করে বাজিমাত করলেন হানিফা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৬:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২
  • ১৩৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজোয়া নামের খেজুর নিয়ে আসেন হজ করে ফিরে আসার সময়। তারপর চারার জন্য বীজ সংরক্ষণ করেন। ঐ বীজ থেকে মাত্র ১৬টি চারা পান তারপর ৯ শতক জমিতে লাগান। সেখান থেকে টেকে মাত্র ১৩টি গাছ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি গাছে প্রথম ফল ধরে। তারপর গত তিন মাসে সবগুলি গাছে ধরে থোকায় থোকায় খেজুর। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই হবে খাওয়ার উপযোগী।

সৌদি আরবের খেজুর চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার কড়িরহাট এলাকার আমড়া গোহাইল গ্রামের মো. আবু হানিফা। সৌদি খেজুর চাষ করে তিনি এখন স্থানীয়দেরও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ।

হানিফার ফলের বাগানে প্রতিদিন লোকজন আসছেন খেজুরগাছ ও ফল দেখতে। খেজুরের পাশাপাশি তার অন্য ফলদ বাগানের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন ফলের বাগানে তৈরিতে।

অন্যদিকে বগুড়ার মাটিতে  আরবের মরুভূমির খেজুর চাষের নতুন সম্ভাবনাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ।

আবু হানিফা বগুড়া শহরের বিভিন্ন মাদরাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। পরিবারে তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও চার ছেলে রয়েছে। এখন তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে থাকেন। বাড়ির আশপাশে খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের সমন্বিত চাষপদ্ধতিতেই তার সময় কাটে।

উদ্যোক্তা আবু হানিফা বলেন, ২০১৮ সালে তিনি হজ করে সৌদি থেকে আসার সময় আজোয়া খেজুর এনে বীজগুলো সংরক্ষণ করে টবে চারা তৈরি করেন। টবে দেড় বছর রেখে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ১৬টি চারা রোপণ করেন ৯ শতক জমিতে। পাশাপাশি মাল্টা, আপেল কুল, বারোমাসি আম, বারি ফোর, কিউজাই, মিষ্টি তেঁতুল, কামরাঙ্গা, আলুবোখারাগাছও লাগান। পরিচর্যার পর প্রায় প্রতিটি গাছে ফল দিতে শুরু করে। প্রতিটি গাছকে সন্তানের মতো যত্ন করায় আস্তে আস্তে তার বাগান বেড়ে উঠছে এবং গাছে ফল ধরছে।

তার বাগানের প্রথম আজোয়া খেজুর তিনি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীকে খাওয়াতে চান এবং যারা সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছেন, সেই কৃষি বিভাগ ও হর্টিকালচার সেন্টারের সংশ্লিষ্টদেরও উপহার দিতে চান। এরপর তিনি এই চাষপদ্ধতি ও ফল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু করবেন বলে জানান।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেছেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। এই ফসল চাষের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয়। আর এই চাষের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি জরুরি। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে গাছগুলোর বেশির ভাগ স্ত্রী গাছ হবে। চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। যদিও এটা অনেক ব্যয়বহুল ও সব জায়গায় এই ব্যবস্থা নেই। তবে বগুড়ার হর্টিকালচার সেন্টারে টিস্যুকালচার পদ্ধতি চালু করার প্রায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

উপপরিচালক আরও বলেন, বগুড়ার কাহালু শেরপুর ও নন্দীগ্রামে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে খেজুরগাছ লাগিয়েছেন। সফলতাও পেয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি শোনতে পেয়েছি মো. আবু হানিফা নামের এক ব্যক্তি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এখন যদি খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তাহলে এ এলাকার জন্য এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হবে।

সৌদি আরবের খেজুর চাষের এই উদ্যোগ সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সৌদি আরবের খেজুর বাংলাদেশে চাষ করে বাজিমাত করলেন হানিফা

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজোয়া নামের খেজুর নিয়ে আসেন হজ করে ফিরে আসার সময়। তারপর চারার জন্য বীজ সংরক্ষণ করেন। ঐ বীজ থেকে মাত্র ১৬টি চারা পান তারপর ৯ শতক জমিতে লাগান। সেখান থেকে টেকে মাত্র ১৩টি গাছ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি গাছে প্রথম ফল ধরে। তারপর গত তিন মাসে সবগুলি গাছে ধরে থোকায় থোকায় খেজুর। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই হবে খাওয়ার উপযোগী।

সৌদি আরবের খেজুর চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার কড়িরহাট এলাকার আমড়া গোহাইল গ্রামের মো. আবু হানিফা। সৌদি খেজুর চাষ করে তিনি এখন স্থানীয়দেরও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ।

হানিফার ফলের বাগানে প্রতিদিন লোকজন আসছেন খেজুরগাছ ও ফল দেখতে। খেজুরের পাশাপাশি তার অন্য ফলদ বাগানের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন ফলের বাগানে তৈরিতে।

অন্যদিকে বগুড়ার মাটিতে  আরবের মরুভূমির খেজুর চাষের নতুন সম্ভাবনাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ।

আবু হানিফা বগুড়া শহরের বিভিন্ন মাদরাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। পরিবারে তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও চার ছেলে রয়েছে। এখন তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে থাকেন। বাড়ির আশপাশে খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের সমন্বিত চাষপদ্ধতিতেই তার সময় কাটে।

উদ্যোক্তা আবু হানিফা বলেন, ২০১৮ সালে তিনি হজ করে সৌদি থেকে আসার সময় আজোয়া খেজুর এনে বীজগুলো সংরক্ষণ করে টবে চারা তৈরি করেন। টবে দেড় বছর রেখে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ১৬টি চারা রোপণ করেন ৯ শতক জমিতে। পাশাপাশি মাল্টা, আপেল কুল, বারোমাসি আম, বারি ফোর, কিউজাই, মিষ্টি তেঁতুল, কামরাঙ্গা, আলুবোখারাগাছও লাগান। পরিচর্যার পর প্রায় প্রতিটি গাছে ফল দিতে শুরু করে। প্রতিটি গাছকে সন্তানের মতো যত্ন করায় আস্তে আস্তে তার বাগান বেড়ে উঠছে এবং গাছে ফল ধরছে।

তার বাগানের প্রথম আজোয়া খেজুর তিনি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীকে খাওয়াতে চান এবং যারা সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছেন, সেই কৃষি বিভাগ ও হর্টিকালচার সেন্টারের সংশ্লিষ্টদেরও উপহার দিতে চান। এরপর তিনি এই চাষপদ্ধতি ও ফল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু করবেন বলে জানান।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেছেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। এই ফসল চাষের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয়। আর এই চাষের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি জরুরি। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে গাছগুলোর বেশির ভাগ স্ত্রী গাছ হবে। চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। যদিও এটা অনেক ব্যয়বহুল ও সব জায়গায় এই ব্যবস্থা নেই। তবে বগুড়ার হর্টিকালচার সেন্টারে টিস্যুকালচার পদ্ধতি চালু করার প্রায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

উপপরিচালক আরও বলেন, বগুড়ার কাহালু শেরপুর ও নন্দীগ্রামে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে খেজুরগাছ লাগিয়েছেন। সফলতাও পেয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি শোনতে পেয়েছি মো. আবু হানিফা নামের এক ব্যক্তি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এখন যদি খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তাহলে এ এলাকার জন্য এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হবে।

সৌদি আরবের খেজুর চাষের এই উদ্যোগ সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।