হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারির মধ্যে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে এ সময়ে আদায়ের পরিমাণ কমেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ কম থাকলেও খাদ্যপণ্য উত্পাদনের জন্য সরকার কৃষি খাতে প্রণোদনা ঋণসহ স্বাভাবিক ঋণ বিতরণে গুরুত্ব দিয়েছে। অনেকে আবার চাকরি হারিয়ে গ্রামে নতুন করে কৃষি কাজ শুরু করেছেন। এতে বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের চাহিদা ও আদায় দুই-ই বেড়েছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২১ হাজার ৯৭০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার (৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ) কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে ২৫ হাজার ৯৬৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ঋণ বিতরণ ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য গত অর্থবছরে করোনার প্রকোপ থাকায় কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায় কম ছিল। চলতি অর্থবছরে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২৪ হাজার ৬১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন কৃষকেরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এই ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এই সময়ে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা বা ৮৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতে কৃষিঋণের স্থিতি ৪৯ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এদিকে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃ অর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তহবিলের প্রায় পুরো অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়েছে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো। পুনঃ অর্থায়ন স্কিম থেকে জামানতবিহীন সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পেয়েছেন কৃষকেরা। যেসব ব্যাংক পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের এই অর্থ সাধারণ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে সফল বাস্তবায়নকারী ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে প্রশংসাপত্রও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এ এন হামিদুল্লাহ্ কনফারেন্স রুমে একটি সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশংসাপত্র তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। প্রশংসাপত্র পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক।