বিজয় দাস,প্রতিনিধি নেএকোনাঃ একটানা অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে সুমেশ্বরী, উব্দাখালী ধনু ও কংস নদের পানি উপচে নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই নিরুপায় হয়ে ছুটছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ।
জেলা সদরের মেদনি, কালিয়ারা-গাবরাগাতি ও ঠাকুরাকোনা ইউনিয়ন এবং বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর, চিরাম, সিংধা, বাউশী, সাহতা ও আসমা ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটও পানির নিচে। নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ সড়কের বিরামপুর হতে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত হাঁটু পানি। তলিয়ে গেছে মোহনগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। কলমাকান্দায় ৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে চাল, ডাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার অনেকে জানান, কলমাকান্দা উপজেলা সদরের চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ বেশ কিছু এলাকায় এখন হাঁটু থেকে কোমরপানি। মানুষের বাড়িঘর, দোকান-পাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে সকল ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, চান্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, উদয়পুর উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতষ্ঠান বন্যা আশ্রকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতষ্ঠানে কয়েক শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে এই উপজেলার প্রায় তিন হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের সকল এলাকা প্লাবিত। উপজেলার ২ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ পানিবন্দি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি বাড়ছে, মানুষজন আশ্রকেন্দ্রে যাচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ। দুর্গাপুর বাজারসহ বিভিন্ন দপ্তর ও রাস্তাঘাট পানির নিচে। সুমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, দুর্গত এলাকায় বিস্কুট, চিড়া, মুড়ি ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে নৌকা ও ট্রলারের অভাবে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, মোমেশ্বরী, ধনু, উপদাখালীসহ ছোট-বড় সব নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার সকালে উপদাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৪ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, কলমাকান্দার সব এলাকায়ই এখন বন্যার পানি। আক্রান্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উপজেলার ৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি কেন্দ্রে ১ হাজার ২ শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আরো মানুষ আসছে। জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের টাকায় চাল, ডাল, তেল ও শুকনো খাবার কিনে বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ আজ শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। আক্রান্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই এসেছেন। ইউএনওদের কাছে চাল, ডাল ও নগদ টাকা পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।