ঢাকা ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন ৬০০ কোটি টাকার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
  • ১৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। এপ্রিল-মে মাসে মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স আসার পর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সেই গতি আরও বেড়েছে। এই মাসের ৯ দিনে ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

টাকার অবমূল্যায়নের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে। এখন প্রবাসীরা ১ ডলার দেশে পাঠালে প্রণোদনাসহ ৯৫-৯৬ টাকার মতো তুলতে পারছেন স্বজনরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে আরও একটু বেশি পাাচ্ছেন। এই ব্যাংকটি সরকারি প্রণোদনার ২ দশমিক ৫০ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করে মোট ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।

আর সে কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। এপ্রিল-মে মাসে মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স আসার পর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সেই গতি আরও বেড়েছে। এই মাসের ৯ দিনে ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯২ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৬০৭ কোটি টাকা।

সামনে ঈদুল আজহা। এই উৎসব সামনে রেখে দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপন হয়েছে। তখন ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

প্রতি বছর দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। এবার তেমনটি হয়নি। এপ্রিলের পর মে মাসেও ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

৯ অথবা ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার।

ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছে যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে; ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। রোজার ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরের মাসেও ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

আগামী ৩০ জুন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর।

নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন মাসের এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দুই মাসে এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন। আমার বিবেচনায় এই গতি বেশ ভালো। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এটা আরও বাড়বে।’

করোনা মহামারির মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির এই সূচকে ভাটার টান লক্ষ করা যায়। প্রতি মাসেই কমতে থাকে; তবে তিন মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ সংকট কাটাতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেশ কয়েক দফা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহের সবশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি জুন মাসের ৯ দিনে (১ থেকে ৯ জুন) ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলারের যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ১২ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ডলারের একটু বেশি। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ কোটি ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাস ৯ দিনে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৯ জুন) ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৪১ লাখ (১৯.৭৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো দশমিক কম।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কোনো প্রবাসী এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে পাঠাচ্ছেন তিনি ১০২ টাকা ৫০ পয়সা তুলতে পারছেন।

অগ্রণী ব্যাংক পহেলা বৈশাখ থেকে (১৪ এপ্রিল) থেকে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি আরও দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করে ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় হুন্ডির প্রবোণতা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনাসহ যে টাকা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধমে পাঠালে প্রায় একই রকম পাওয়া যায়। সে কারণে সবাই এখন ব্যাংকিং চ্যানেলেই দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।’

রোববার খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯৬ টাকা ৭০ পয়সায় ডলার কেনাবেচা হয়েছে। প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠালে স্বজনরা কার্ব মার্কেটের রেটে টাকা পেয়ে থাকেন।

রেমিট্যান্স বাড়াতে বাজেটে পদক্ষেপ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন, দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ের ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এছাড়া নতুন অর্থবছরে ৮ লাখ ১০ হাজার লোক বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। ৫ লাখ ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশের প্রবাস আয়ে রেকর্ড ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। তবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের শুরু হতেই প্রবাস আয় কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করায় বৈধ পথে প্রবাস আয় প্রেরণকে অধিকতর উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে আমরা এ খাতে প্রণোদনার হার দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জানুয়ারি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করেছি।

‘ইতোপূর্বে ৫ হাজার মার্কিন ডলারের অধিক প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে উক্ত প্রণোদনার জন্য প্রেরণকারীর কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা ছিল, যা সম্প্রতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

‘এসব পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাস আয়ের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায় যে, অতিসত্ত্বর প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরে আসবে। আমি আগামী অর্থবছরেও এ খাতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’ সূত্র : নিউজবাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিদিন ৬০০ কোটি টাকার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা

আপডেট টাইম : ১০:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। এপ্রিল-মে মাসে মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স আসার পর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সেই গতি আরও বেড়েছে। এই মাসের ৯ দিনে ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

টাকার অবমূল্যায়নের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে। এখন প্রবাসীরা ১ ডলার দেশে পাঠালে প্রণোদনাসহ ৯৫-৯৬ টাকার মতো তুলতে পারছেন স্বজনরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে আরও একটু বেশি পাাচ্ছেন। এই ব্যাংকটি সরকারি প্রণোদনার ২ দশমিক ৫০ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করে মোট ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।

আর সে কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। এপ্রিল-মে মাসে মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স আসার পর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সেই গতি আরও বেড়েছে। এই মাসের ৯ দিনে ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯২ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৬০৭ কোটি টাকা।

সামনে ঈদুল আজহা। এই উৎসব সামনে রেখে দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপন হয়েছে। তখন ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

প্রতি বছর দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। এবার তেমনটি হয়নি। এপ্রিলের পর মে মাসেও ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

৯ অথবা ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার।

ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছে যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে; ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। রোজার ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরের মাসেও ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

আগামী ৩০ জুন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর।

নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন মাসের এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দুই মাসে এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন। আমার বিবেচনায় এই গতি বেশ ভালো। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এটা আরও বাড়বে।’

করোনা মহামারির মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির এই সূচকে ভাটার টান লক্ষ করা যায়। প্রতি মাসেই কমতে থাকে; তবে তিন মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ সংকট কাটাতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেশ কয়েক দফা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহের সবশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি জুন মাসের ৯ দিনে (১ থেকে ৯ জুন) ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ডলারের যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ১২ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ডলারের একটু বেশি। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ কোটি ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাস ৯ দিনে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৯ জুন) ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৪১ লাখ (১৯.৭৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো দশমিক কম।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কোনো প্রবাসী এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে পাঠাচ্ছেন তিনি ১০২ টাকা ৫০ পয়সা তুলতে পারছেন।

অগ্রণী ব্যাংক পহেলা বৈশাখ থেকে (১৪ এপ্রিল) থেকে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি আরও দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করে ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় হুন্ডির প্রবোণতা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনাসহ যে টাকা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধমে পাঠালে প্রায় একই রকম পাওয়া যায়। সে কারণে সবাই এখন ব্যাংকিং চ্যানেলেই দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।’

রোববার খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯৬ টাকা ৭০ পয়সায় ডলার কেনাবেচা হয়েছে। প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠালে স্বজনরা কার্ব মার্কেটের রেটে টাকা পেয়ে থাকেন।

রেমিট্যান্স বাড়াতে বাজেটে পদক্ষেপ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন, দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ের ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এছাড়া নতুন অর্থবছরে ৮ লাখ ১০ হাজার লোক বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। ৫ লাখ ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশের প্রবাস আয়ে রেকর্ড ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। তবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের শুরু হতেই প্রবাস আয় কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করায় বৈধ পথে প্রবাস আয় প্রেরণকে অধিকতর উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে আমরা এ খাতে প্রণোদনার হার দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জানুয়ারি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করেছি।

‘ইতোপূর্বে ৫ হাজার মার্কিন ডলারের অধিক প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে উক্ত প্রণোদনার জন্য প্রেরণকারীর কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা ছিল, যা সম্প্রতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

‘এসব পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাস আয়ের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায় যে, অতিসত্ত্বর প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরে আসবে। আমি আগামী অর্থবছরেও এ খাতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’ সূত্র : নিউজবাংলা