হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেনীতে ফলের বাজারে দৈনিক লেনদেন হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। বৃহৎ এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।
জেলা শহরের মহিপালে রয়েছে অত্র অঞ্চলের বৃহত্তর পাইকারি ফলের বাজার।
ফল ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বাজারে দেশি-বিদেশি ফল বিক্রির মাধ্যমে এই বিশাল অংকের লেনদেন হয়।
ফল বাজারটির দৈনিক বিক্রির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মহিপাল ফল ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন জানান, অত্র অঞ্চলের বৃহত্তর ফলের বাজারটি হলো মহিপাল ফলের আড়ত। যেখানে ভরা মৌসুমে অনেক ব্যবসায়ী দৈনিক এক কোটি টাকারও ফল বিক্রি করেন। আর প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে চার লাখ টাকা লেনদেন করেন।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, ভরা মৌসুমে এ বাজারে বিদেশি ফলের মধ্যে দৈনিক ৪৫০ টন কমলা, ২৪০ টন মাল্টা, ১১৮ টন আপেল, ২১ টন নাসপাতি ও ১০৫ টন আঙ্গুর বিক্রি হয়। এছাড়া মৌসুমি ফলের মধ্যে দৈনিক সাড়ে ৩০০ টন আম, সাত লাখ টাকার আনারস, ১৭ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়। তবে কাঁঠাল, জাম, বড়ই ও পেয়ারা বিক্রির আলাদাভাবে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
ফল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মো. জসিম বলেন, জেলায় ফলের চাহিদার সবটুকু এ বাজার থেকেই যোগান দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে অল্পকিছু অংশ পাশের কয়েকটি জেলা থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়।
নাহিদ ফ্রুট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মুরশিদ আলম বলেন, এখনও মৌসুমি ফলের বাজার পুরোদমে জমে উঠেনি। ভরা মৌসুমে শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়ে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লেনদেনও বাড়ে।
ফিরোজ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আরও এক সপ্তাহ পর আমের বাজার পুরোদমে জমে উঠবে। আমের মৌসুম শুরু হলে ব্যবসায়ীরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া এখন বিদেশি ফলের চাহিদাও তুলনামূলক কম রয়েছে।
ব্যবসায়ী সমিতির সূত্র জানায়, মহিপাল ফল আড়তে দুইশ’র বেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন। এ বাজারকে কেন্দ্র করে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সোহেল ফ্রুট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় বাজারে বিক্রয়ের পরিমাণ কিছুটা কম-বেশি হলেও মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে প্রায় সব ব্যবসায়ীর বিক্রি অনেক ভালো অবস্থানে থাকে।
এদিকে পরশুরাম উপজেলার খুচরা ফল ব্যবসায়ী শরীফ উদ্দিন বলেন, মহিপাল ফল আড়ত থেকেই সবসময় ফল সংগ্রহ করি। দামও অন্যান্য স্থান থেকে তুলনামূলক কমে পাওয়া যায়। এছাড়া মাঝে মধ্যে রামগড় এবং খাগড়াছড়ি থেকে কিছু মৌসুমি ফল কেনা হয়।
ফেনীর মহিপাল ফল আড়তে চাহিদার প্রায় পুরো অংশই আমদানি নির্ভর বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন বলেন, বাজারে বিদেশি ফলগুলো শতভাগ আমদানি নির্ভর। তবে মৌসুমি ফল এবং লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে অল্পকিছু স্থানীয়ভাবে যোগান দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ী আরমান উদ্দিন বলেন, মৌসুমি ফল চাহিদা অনুযায়ী রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়। তবে বিদেশি ফলগুলো মধ্যস্থতাকারী বা এজেন্টের মাধ্যমে কেনা হয়।
রাকিবুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তরমুজের মৌসুমে বড় একটি অংশ জেলার সোনাগাজী উপজেলা থেকে আসে। মৌসুমের শেষের দিকে তরমুজ অন্য জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়।
জেলায় ফলের আবাদ পরিসংখ্যান তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি বলেন, এ জেলায় পরশুরাম ও সোনাগাজী উপজেলায় কয়েকজন ব্যক্তি উদ্যোগে আম বাগান করেছেন। তবে বৃহৎভাবে তেমন বাজারজাতকরণ করছে না। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় লেবু জাতীয় ফলের ২৪০টির মতো ছোট-বড় বাগান রয়েছে।
মহিপাল ফল বাজার প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীসহ পাঁচ হাজার মানুষের বেশি জড়িত রয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন জানান, তালিকাভুক্ত ২০০টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই ম্যানেজারসহ তিন থেকে ১০ জনের মতো কর্মচারী আছেন। এছাড়া পরিবহনে নিয়োজিত ভ্যানচালকসহ অন্যান্য কর্মচারীও রয়েছে।
ন্যাশনাল ফ্রুট এজেন্সিতে কর্মরত খুলনার স্বপন নামে এক কর্মচারী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এ বাজারে কাজ করছি। এখানের দৈনিক আয় দিয়েই পরিবারের খরচ চলে।
ফল ব্যবসায়ী মতিন বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে তিন জন করে কর্মচারী নিয়মিত কাজ করেন। এছাড়াও প্রয়োজনে অতিরিক্ত কর্মচারীও রাখা হয়।
রিজোয়ান নামে এক ভ্যানচালক বলেন, এখানে সকাল-বিকেল নিয়মিত ভাড়া থাকে। বর্তমানে দৈনিক আয় কম হলেও পুরো ফল মৌসুম শুরু হলে দৈনিক এক হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মহিপালে অবস্থিত বৃহত্তর নোয়াখালীর বড় ফলের আড়ত।
ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, এখান থেকে দৈনিক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফল কিনেন পাইকার-খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী বলেন, ফেনী থেকে প্রতিদিন মৌসুমি ও বিদেশি মিলে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়। এগুলো সীতাকুণ্ড, রামগতি, লক্ষ্মীপুর, আরেকজেন্ডার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর, দেবিদ্বার, ইলিইটগঞ্জ ও গৌরিপুর যাচ্ছে। এছাড়াও বিভাগীয় জেলা খুলনা, বরিশাল ও মোংলার ব্যবসায়ীরা মহিপাল ফল আড়ত থেকে ফল কেনেন।
হাজীগঞ্জ থেকে ফল কিনতে আসা জামাল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে মহিপাল ফল আড়ত থেকে ফল কিনছি। দাম ও মান এবং অন্যান্য খরচ বিবেচনায় সুবিধাজনক হওয়ায় অন্যদিক থেকে ফল কেনা হয় না।
আশরাফুল ইসলাম সৃজন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও জেলার ছয় উপজেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ফল সংগ্রহ করেন