হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাছ প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্য খায়। এ ছাড়াও নালা-নর্দমার পচা পানির উচ্ছিষ্টাংশ ভক্ষণ করে। এরা উদ্ভিদ কণা ও প্রাণিকণা খেতে পছন্দ করে। এগুলো খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না। তবে, মাছ চাষে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির কৌশল জানা না থাকলে শুধুমাত্র বাইরের খাবার দিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব না।
প্রাকৃতিক খাদ্য জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। তবে বেশি পরিমাণে জন্মানোর জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। পুকুর প্রস্তুতির সময় ও ১৫ দিন পর সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি করতে হয় ।
পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রতি শতাংশে ৬-৭ কেজি গোবর সার, কম্পোস্ট সার ৮-৯ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, একটি পাত্রে পানির সাথে ভালোভাবে গুলে সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হয়।
মাছের পোনা পুকুরে ছাড়ার ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে গোবর সার ১ কেজি, ইউরিয়া ৪০ গ্রাম ও টিএসপি ২০ গ্রাম হারে পানিতে দিতে হয় । এতে সম্পূরক খাদ্য না দিলে বা কম দিলেও হয়।
প্রাকৃতিক খাদ্যের গুরুত্ব
প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়া উৎপাদিত মাছ দ্রত বড় হয়। মাছ খেতে সুস্বাদু। মাছের সম্পূরক খাদ্য খরচ লাগে না । মাছের উৎপাদন খরচ কমে। পুকুরে গ্যাস তৈরি হয় না। পানির পরিবেশ ভালো থাকে। উদ্ভিদ কণা অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। এতে পুকুরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি না হলে বা কম হলে সুষম সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। এজন্য পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা:
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য বোঝার পদ্ধতি যেমন:-
(১) কাঁচের গ্লাসে পুকুরের স্বচ্ছ পানি নিয়ে সূর্যের আলোর দিকে ধরলে যদি গ্লাসে ৮-১০টি কণা দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
(২) হাত কুনুই পর্যন্ত পুকুরের পানিতে ডুবালে যদি হাতের তালু দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য নাই।
(৩) পুকুরের পানির রঙ হালকা সবুজ বা বাদামি দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
(৪) প্লাঙ্কটন নেটের ভেতর দিয়ে ২০ লিটার পানি ঢাললে ২ সেমি. সবুজ কণা জমা হলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
(৫) সেক্কি ডিস্ক জলাশয়ে ৩০ সেমি. ডুবালে সাদা কালো রং দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য নেই। প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও মজুদ মাছের মোট ওজনের ২-৫% সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়।
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির কৌশল লিখেছেন কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল।