হাওর বার্তা ডেস্কঃ লর্ডসে শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট। বৃহস্পতিবার খেলা চলাকালিন ৩৮তম অভারে ফিল্ডিং করতে নামলেন এক তরুণ।
কিন্তু তার জার্সিতে ছিল না কোনও নাম, ছিল না কোন নম্বর। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তার নাম ‘রবিন জেমস দাস’।
তিনি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ শহরের সুপরিচিত মুখ, সাবেক ক্রীড়াবিদ মৃদুল কান্তি দাসের ছেলে।
রবিন দাসের বাবা মৃদুল দাস টেমস নদীর পাড়ে মেমসাহেব নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন। ছেলের এই অর্জনে সুনামগঞ্জে এক সময়ের বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ মৃদুল কান্তি দাস বলেন, ‘অবশ্যই খুশি তবে তার আরও অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ আছে।’
রবিন অতিরিক্তি ফিল্ডার হিসেবে লর্ডসের মাঠে নেমেছিলেন বৃহস্পতিবার। যদিও মাত্র চারটি ডেলিভারির সময় মাঠে ছিলেন তিনি। রবিন যখন মাঠে নামেন তখন লর্ডস টেস্টে প্রথম একাদেশে সুযোগ না পাওয়া হ্যারি ব্রুক এবং গ্রেগ ওভারটন অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে ছিলেন। বাইরে গিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
তারপর ম্যাটি পটস চোট পাওয়ায় তৃতীয় একজন ক্রিকেটার দরকার ছিল। তার জায়গাতেই ফিল্ডিং করেন রবিন। পটসের অসমাপ্ত ওভার শেষ করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। সেই ওভার শেষ হতেই মূল দলের ব্রড মাঠে ফেরেন এবং রবিন উঠে যান।
নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ইংল্যান্ডের ১৩ জনের যে দল ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই দলে রবিনের নাম ছিল না। কিন্তু আপৎকালিন পরিস্থিতিতে তাকে মাঠে নামতে বলে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই কয়েক মুহূর্তের জন্য মাঠে নেমেই আলোচনায় উঠে আসনে রবিন দাস।
নিউজিল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সুনাামগঞ্জের বংশোদ্ভূত তরুণকে দেখে উল্লসিত হয়েছেন সুনামগঞ্জের ক্রিকেটমোদীরা। অনেকে নিজের ফেসবুক আইডিতেও গর্ববোধ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
লিখেছেন, ‘রবিন দাসকে নিয়ে আমরা গর্বিত। ছেলেটির বাবা (মৃদুল দাস) সুনামগঞ্জের মাঠের ক্রিকেটার ছিলেন।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘রবিনের বাবা মৃদুল দাসও একজন ভালো ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জ ফ্যান্টম গ্রুপের সংগঠক ছিলেন।
রবিনের বড় ভাই জোনাথন দাস জনিও সুনামগঞ্জ মাঠে টুর্নামেন্টে কয়েক বছর আগেও এসে খেলেছে। আমরা বাংলাদেশের সীমান্ত শহর সুনামগঞ্জের মানুষ রবিনকে ইংল্যান্ডের মূল একাদশে দেখার প্রত্যাশায় থাকবো।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বললেন, ‘রবিনের নামের সঙ্গে বাংলাদেশ এসেছে, এসেছে সুনামগঞ্জের নামও আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।’
রবিনের জেঠা মিলন দাস বলেন, ‘আমরা খুশি, আমরা একসময় মনে করতাম রবিনের বড় ভাই জোনাথন দাস পেশাদার ক্রিকেটার হবে, এখন সে বড় চাকুরি করছে, রবিন তার স্থান নিয়েছে, আমাদের পরিবারের সকলেরই ক্রিকেটের প্রতি আলাদা ভালোবাসা রয়েছে।’
রবিনের জন্ম ইংল্যান্ডের লেটনস্টোন সিটিতে। কিন্ত তার শিকড় বাংলাদেশে। বাবা মৃদুল কান্তি দাসের জন্ম সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায়। মৃদুল কান্তি দাস একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জেলা পর্যায়ে ভাল একজন খেলোয়ার ছিলেন। রবিন ব্রেন্টউড স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। রবিনের বর্তমান বয়স ২০ বছর। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেন এসেক্সের হয়ে। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন রবিন।
২০২০ সালে সেই ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৭ রান। তবে ২০১৮ সালে এসেক্সের অনুর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে ২০০ রান করেছিলেন এই বাঙ্গালি খেলোয়ার। এসেক্স দ্বিতীয় একাদশের হয়েও খেলেছিলেন তিনি।
বস্তুত, তিনি লর্ডসে ফিল্ডিং করতে নামার পর এসেক্স কাউন্টি দল তাদের টুইটার পেইজে রবিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ইংল্যান্ডের হয়ে ‘টুয়েলফথ ম্যান ডিউটি’ করার জন্য রবিন ও তার সতীর্থ নিখিল গোরান্টাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
এসেক্স ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর জাওয়ার আলী বলেছেন, ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে দেখে আশা করছি ভবিষ্যতে রবিন ইংল্যান্ডের হয়েও খেলবে।’