ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শত বছরে চা শ্রমিকদের মজুরী মাত্র ১২০ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ মে ২০২২
  • ১২০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে বিগত সময়ে বিভিন্ন খাতে অনেক পরিবর্তন হলেও ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় ২০ লাখ চা জনগোষ্ঠীর জীবনমানের তেমন উন্নয়ন হয়নি। তাদের জীবিকার অন্যতম হচ্ছে চা বাগানে কাজ করা। যেখানে দেশের সব শ্রেণীর শ্রমিকের মজুরী কিংবা বেতন বাড়ছে সেখানে চা শ্রমিকদের মজুরী বাড়ছে না।

গত ১৫ বছরে চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরী বেড়েছে মাত্র ৮৮ টাকা। আর বর্তমান সরকারের ১৪ বছরের হিসেবে তা মাত্র ৭২ টাকা। বাগানের বাইরে যেখানে শ্রমিকের মজুরী ৩শ থেকে প্রকারভেদে ৮শ টাকা, সেখানে চা শ্রমিকের মজুরী মাত্র ১২০ টাকা।

এ অবস্থায় দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে চা শ্রমিকদের ভূমিকা রাখার কোন সুযোগ নেই। বরং একটি জনগোষ্ঠী পিছিযে থেকে দেশের উন্নয়ন তো কল্পনাই করা যায়না।

২০ মে চা শ্রমিক দিবস। যুগ যুগ ধরে চা শ্রমিকরা দিবসটি পালন করে আসছে এবং তাদের দাবি ধাওয়া তুলে ধরছে। এবারও ভ্যালীর সকল চা বাগানে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এর মধ্যে দেউন্দি চা বাগানে দুদিন ব্যাপী চা শ্রমিক দিবসের নানা কর্মসূচি রযেছে। সেখানে কেন্দ্রীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই অতিথি হিসেবে আসবেন।

চা শ্রমিকরা এবার ভূমি অধিকার ও চা শ্রমিক দিবসের স্বীকৃতি, মজুরী বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। বাস্তবে এসব দাবি মালিকপক্ষ কতটুকু পালন করেন, দৈনিক ১২০টাকা হাজিরাই তা প্রমাণ করে।

চা বাগানের মজুরী দৈনিক ১২০ টাকা হলেও বাগানের বাইরে তারা কাজ করে পান ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা। একই শ্রমিকের মজুরী দু’জায়গায় দুরকম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরী নিয়েও রয়েছে নানা বৈষম্য। প্রশ্ন জাগে চা শ্রমিকরা আর কতকাল এ বঞ্চনার শিকার হবেন?

এ অবস্থা যুগ যুগ ধরেই চলে আসায় মালিকের শোষন থেকে মুক্ত হতে পারছেন না ভূমি অধিকার না থাকার কারণে। এহেন অবস্থায় চা শ্রমিকরা নতুন করে দাবি তুলেছে তাদের ভূমি অধিকার নিয়ে।

সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ৭টি ভ্যালীতে ১ লাখ ২৪ হাজার চা শ্রমিক কাজ করছে। চা শ্রমিকরা চা বাগানের অভ্যন্তরে ও বাইরে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

নানা আন্দোলনের পর ২০০৫ সালে প্রথম চা শ্রমিকের মজুরী ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা করা হয়। এর পর ২০১২ সালে বর্তমান এসে তা বাড়িয়ে করে ৬৫ টাকা। ২০১৫ সালে এসে শ্রমিকদের মজুরী দাড়ায় ৭৯ টাকায়। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে শ্রমিকদের মজুরী বেড়ে দাড়ায় ৮৫ টাকায়।

২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে শ্রমিকদের মজুরী বেড়ে দাড়ায় ১০২ টাকা। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ১২০ টাকা। যা বর্তমানে শ্রমিকরা পাচ্ছে।

চা শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন আর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার তাদের দুটি বোনাস দিয়েছে। দূর্গাপুজা এবং দোল পুর্নিমা (দুল প্রজা বা ফাগুয়া উৎসব) তাদের দুটি বোনাস হিসেবে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার ২শ ৫০ টাকা। তাও সঠিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে। তারা এ বোনাস বাড়ানোরও দাবি জানিয়ে আসছে।

চা বাগান সুত্রে জানা যায়, চা শ্রমিকদের মজুরী আর বোনাসের বাইরে শ্রমিকদের আবাসন এবং মেডিকেল ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতি সপ্তাহে ৩ কেজি ২শ ৭০ গ্রাম করে চাল কিংবা আটা দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য তা ব্রিটিশ সরকারের নিয়মেই প্রতি কেজি ১ টাকা করে কাটা হচ্ছে।

আজও ভ্যালীর চা বাগানগুলোর চা শ্রমিক দিবসের নানা আয়োজন রয়েছে। চা শ্রমিক দিবস আসে, যায়, কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়না। এসব শ্রমিক চা শিল্পে অবদান রাখলেও তারা বরাবরই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নুপেন পাল জানান, চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা দিয়ে এখন আর চলতে পারছে না। তারা মজুরী দৈনিক ৩শ টাকা দাবি করেছেন। মজুরী বৃদ্ধির বিষয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে বলেও তিনি জানান।

চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও আদিবাসী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, চা শ্রমিকরা চিরকালই নির্যাতিত ও নিপীরিত। বাগান মালিকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও আমাদের শ্রমিকরা ভাঙ্গা ঘরেই বাস করে। ৩ বেলা আহারও পায়না। চা বাগান কর্তৃপক্ষ সব সময়ই আমাদের নির্যাতন করে আসছে। আমরা এবার ভূমি অধিকারের দাবী তুলেছি।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করে লস্করপুর ভ্যালীর একজন বাগান ব্যবস্থাপক জানান, চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার, চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিকদের সংগঠনগুলো আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এর বাইরে কোন বাগান ব্যবস্থাপকই কিছু বলতে নারাজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শত বছরে চা শ্রমিকদের মজুরী মাত্র ১২০ টাকা

আপডেট টাইম : ১০:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে বিগত সময়ে বিভিন্ন খাতে অনেক পরিবর্তন হলেও ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় ২০ লাখ চা জনগোষ্ঠীর জীবনমানের তেমন উন্নয়ন হয়নি। তাদের জীবিকার অন্যতম হচ্ছে চা বাগানে কাজ করা। যেখানে দেশের সব শ্রেণীর শ্রমিকের মজুরী কিংবা বেতন বাড়ছে সেখানে চা শ্রমিকদের মজুরী বাড়ছে না।

গত ১৫ বছরে চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরী বেড়েছে মাত্র ৮৮ টাকা। আর বর্তমান সরকারের ১৪ বছরের হিসেবে তা মাত্র ৭২ টাকা। বাগানের বাইরে যেখানে শ্রমিকের মজুরী ৩শ থেকে প্রকারভেদে ৮শ টাকা, সেখানে চা শ্রমিকের মজুরী মাত্র ১২০ টাকা।

এ অবস্থায় দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে চা শ্রমিকদের ভূমিকা রাখার কোন সুযোগ নেই। বরং একটি জনগোষ্ঠী পিছিযে থেকে দেশের উন্নয়ন তো কল্পনাই করা যায়না।

২০ মে চা শ্রমিক দিবস। যুগ যুগ ধরে চা শ্রমিকরা দিবসটি পালন করে আসছে এবং তাদের দাবি ধাওয়া তুলে ধরছে। এবারও ভ্যালীর সকল চা বাগানে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এর মধ্যে দেউন্দি চা বাগানে দুদিন ব্যাপী চা শ্রমিক দিবসের নানা কর্মসূচি রযেছে। সেখানে কেন্দ্রীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই অতিথি হিসেবে আসবেন।

চা শ্রমিকরা এবার ভূমি অধিকার ও চা শ্রমিক দিবসের স্বীকৃতি, মজুরী বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। বাস্তবে এসব দাবি মালিকপক্ষ কতটুকু পালন করেন, দৈনিক ১২০টাকা হাজিরাই তা প্রমাণ করে।

চা বাগানের মজুরী দৈনিক ১২০ টাকা হলেও বাগানের বাইরে তারা কাজ করে পান ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা। একই শ্রমিকের মজুরী দু’জায়গায় দুরকম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরী নিয়েও রয়েছে নানা বৈষম্য। প্রশ্ন জাগে চা শ্রমিকরা আর কতকাল এ বঞ্চনার শিকার হবেন?

এ অবস্থা যুগ যুগ ধরেই চলে আসায় মালিকের শোষন থেকে মুক্ত হতে পারছেন না ভূমি অধিকার না থাকার কারণে। এহেন অবস্থায় চা শ্রমিকরা নতুন করে দাবি তুলেছে তাদের ভূমি অধিকার নিয়ে।

সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ৭টি ভ্যালীতে ১ লাখ ২৪ হাজার চা শ্রমিক কাজ করছে। চা শ্রমিকরা চা বাগানের অভ্যন্তরে ও বাইরে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

নানা আন্দোলনের পর ২০০৫ সালে প্রথম চা শ্রমিকের মজুরী ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা করা হয়। এর পর ২০১২ সালে বর্তমান এসে তা বাড়িয়ে করে ৬৫ টাকা। ২০১৫ সালে এসে শ্রমিকদের মজুরী দাড়ায় ৭৯ টাকায়। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে শ্রমিকদের মজুরী বেড়ে দাড়ায় ৮৫ টাকায়।

২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে শ্রমিকদের মজুরী বেড়ে দাড়ায় ১০২ টাকা। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ১২০ টাকা। যা বর্তমানে শ্রমিকরা পাচ্ছে।

চা শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন আর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার তাদের দুটি বোনাস দিয়েছে। দূর্গাপুজা এবং দোল পুর্নিমা (দুল প্রজা বা ফাগুয়া উৎসব) তাদের দুটি বোনাস হিসেবে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার ২শ ৫০ টাকা। তাও সঠিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে। তারা এ বোনাস বাড়ানোরও দাবি জানিয়ে আসছে।

চা বাগান সুত্রে জানা যায়, চা শ্রমিকদের মজুরী আর বোনাসের বাইরে শ্রমিকদের আবাসন এবং মেডিকেল ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতি সপ্তাহে ৩ কেজি ২শ ৭০ গ্রাম করে চাল কিংবা আটা দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য তা ব্রিটিশ সরকারের নিয়মেই প্রতি কেজি ১ টাকা করে কাটা হচ্ছে।

আজও ভ্যালীর চা বাগানগুলোর চা শ্রমিক দিবসের নানা আয়োজন রয়েছে। চা শ্রমিক দিবস আসে, যায়, কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়না। এসব শ্রমিক চা শিল্পে অবদান রাখলেও তারা বরাবরই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নুপেন পাল জানান, চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা দিয়ে এখন আর চলতে পারছে না। তারা মজুরী দৈনিক ৩শ টাকা দাবি করেছেন। মজুরী বৃদ্ধির বিষয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে বলেও তিনি জানান।

চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও আদিবাসী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, চা শ্রমিকরা চিরকালই নির্যাতিত ও নিপীরিত। বাগান মালিকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও আমাদের শ্রমিকরা ভাঙ্গা ঘরেই বাস করে। ৩ বেলা আহারও পায়না। চা বাগান কর্তৃপক্ষ সব সময়ই আমাদের নির্যাতন করে আসছে। আমরা এবার ভূমি অধিকারের দাবী তুলেছি।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করে লস্করপুর ভ্যালীর একজন বাগান ব্যবস্থাপক জানান, চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার, চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিকদের সংগঠনগুলো আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এর বাইরে কোন বাগান ব্যবস্থাপকই কিছু বলতে নারাজ।