রফিকুল ইসলামঃ কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের ২নং বগাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাম্মদ মদিনা খাতুনকে (৪১) সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বহিরাগত এক ঝগড়াটে মহিলা বিদ্যালয়ের অফিসে ঢুকে চরমভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। এতে ওই শিক্ষিকার নিরাপত্তা, মানমর্যাদা ও শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম হুমকির মুখে পরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী মোছাম্মদ মদিনা খাতুন ন্যক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
এই অভিযোগের তদন্তের নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের হিসাব সহকারী আল আমিন।
এ অভিযোগ উঠেছে মিঠামইন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূরুল হক ভূঞার স্ত্রী মোছা. মাহমুদা আক্তার মনির (৪৪) বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের পাশেই তার বাড়ি।
অভিযোগে জানা যায়, অভিযুক্ত মোছা. মাহমুদা আক্তার মনি (৪৪) একজন অত্যাচারিণী, চুগলি, হিংসুটে ও ভীষণ ঝগড়াটে মহিলা। তাছাড়াও প্রভাবপ্রতিপত্তি এবং ধনে-জনে বলিয়ান হওয়ায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনধিকার প্রবেশ করে শিক্ষকদের ওপর অযাচিত কর্তৃত্ব খাটায় এবং অহংকার আর ক্ষমতার জোরে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত কারণে অকারণে বিদ্যালয়ের অফিসে ও শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পাঠদান কার্যক্রমে খবরদারি করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সামনে শিষ্টতাহীনভাবে মোছাম্মদ মদিনা খাতুন ও প্রধান শিক্ষকসহ সহকর্মী শিক্ষকদের পেশাগত কর্মনিষ্ঠাকে জনসম্মুখে বিতর্কিত ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মানহানিকর এবং উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে থাকেন।
শুধু তা-ই নয়, অরাজকতা সৃষ্টি করে অফিসের সরকারি কাজকর্মসহ শ্রণি পাঠদান কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটিয়ে চলেছেন। সেজন্য মোছা. মাহমুদা আক্তার মনিকে শিক্ষকেরা বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে প্রয়োজন ছাড়া যখন তখন প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাতে ফেরানো যায়নি তাকে। বরং রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে চড়াও হন এবং ‘দেখে নেবারও’ হুমকি দেয়। তাছাড়াও শিক্ষক মদিনা খাতুনকে ‘অন্যত্র বদলি করার’ জুজুর ভয় দেখিয়ে চলেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিম্নগামীতায় সরকারের নির্দেশিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বপ্লপরিসরে খুলে দেওয়ায় শিক্ষকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস রুটিন অনুযায়ী দুই শিফটে বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠদান চালিয়ে আসছিলেন। অথচ গত ১৫ নভেম্বর বরাবরের মতো সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বহিরাগত ওই মাহমুদা আক্তার মনি বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ঢুকে শিক্ষক মোছাম্মদ মদিনা খাতুনসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মী শিক্ষকদের লক্ষ্য করে উচ্চস্বরে উদ্দেশ্যমূলক, হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলতে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সরকার অনুসৃত নিয়মে তৈরি ক্লাস রুটিন মোতাবেক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাকে শিক্ষকদের ফাঁকিবাজি অপবাদ দিয়ে চরমভাবে হেনস্তা করা হয় শিক্ষক মদিনা খাতুনকে। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরূপ উচ্ছৃঙ্খলতায় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যায়।
এহেন পরিস্থিতিতে সংঘটিত ঘটনাটি বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট বলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আলী আজগর ভূঁইয়ার কাছে বিচারপ্রার্থী হলে বিচারে অক্ষমতা প্রকাশ করেন তিনি।
হেনস্তা হওয়া শিক্ষিকা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মধ্যকার এক কথোপকথনে সভাপতি মো. আলী আজগর ভূঁইয়া বলেন, ‘ জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি এতে তোমার (হেনস্তার শিকার শিক্ষিকা) কোনো সম্পৃক্ততা নাই। এরার বিচার কইরা আমরা পারুম?’
দীর্ঘ দিনেও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে বিচার চেয়ে বিচার না পেয়ে থানায় জিডি ও এই আবেদন করায় দল ভারি করে অভিযুক্ত মোছা. মাহমুদা আক্তার মনির হুমকি-ধমকি ও উৎপাত আরও বেড়ে যায়। ফলে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে ভুক্তভোগী মোছাম্মদ মদিনা খাতুন জানান।
তিনি বলেন, এ জন্য তিনি পেশাগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার ঘাটতিসহ শ্রেণি পাঠদান ও স্বাভাবিক চলাফেরা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পরেছে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।