রানা প্লাজা ট্রাজিডি : কষ্টে জীবন কাটছে আহতদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ২৪ এপ্রিল সাভার রানা প্লাজা ভবনধসের ৯ বছর। সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রানা প্লাজা ধসের বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে পাথরের তৈরি দুই হাতের ম্যুরাল নিয়ে একটি শহীদ বেদি। এক হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরা কাঁচি, আরেক হাতে হাতুড়ি। আর সেই জায়গায় কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে সুবজ ঘাস আর কচুগাছের আড়ালে ঢাকা পড়েছে রানা প্লাজার দুঃসহ স্মৃতি।

প্রতিবছর দিনটি স্মরণ করতে মোমবাতি প্রজ্বালনসহ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হতাহতদের পরিবার। বর্তমানে রানা প্লাজার জায়গাটি আদালতের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকরা শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী কর্মমুখী জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে চিকিৎসা ব্যয় ও অর্থসংকটই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা পেয়েছেন, তা চিকিৎসা ও সঠিক পরামর্শের অভাবে শেষ হয়ে গেছে।

ওই দুর্ঘটনায় এক হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হন প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক। এঁদের মধ্যে কেউ দুই পা হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন দুই হাত, আবার কারো মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিরতরে অচল হয়েছেন। দুর্ঘটনার এই ৯ বছর পরও ওই শ্রমিকরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এঁদের একজন নিলুফা বেগম। থাকেন সাভারের রাজাশন এলাকার পলোয়ানপাড়ায়। স্বামী আর এক সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর স্বপ্ন ছিল একমাত্র সন্তান রিফাত পাটোয়ারীকে ভালো স্কুলে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। কিন্তু রানা প্লাজার ধসে তাঁর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ছেলের লেখাপড়া আর হয়নি, অর্থকষ্টে জীবন কাটছে তাঁদের।

নিলুফা বেগম বলেন, তিনি রানা প্লাজার পঞ্চম তলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলসে কাজ করতেন। ভবন ধসে পড়ার সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধারকারীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। পিলারের নিচে চাপা পড়ে তাঁর ডান পা অকেজো হয়ে গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ মাসের বেশি চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে চাইলে তিনি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তা কাটতে দেননি। দুর্ঘটনার পর যা কিছু সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছিলেন, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। এখন অনেক কষ্টে জীবন চলছে।

আরেক আহত শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম সুজন। কাজ করতেন রানা প্লাজার ষষ্ঠতলায় ইথার টেক্স কারখানায়। ভবন ধসে পড়ার দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে উদ্ধারকারীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন। শেষে সাভার সিআরপিতে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। সুজন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সরকারিভাবে ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা পেয়েছি। প্রথমে ফ্রি চিকিৎসা পেলেও হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পরে আবার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে টাকা দাবি করে। এখন টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে, কিন্তু এখন আর তাদের কোনো খোঁজ নেই।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লা আজিম বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নিহত শ্রমিক পরিবার এবং আহত শ্রমিকদের পাশে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো আহত কোনো শ্রমিক যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিষয়ে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ’

নানা কর্মসূচি বিভিন্ন সংগঠনের

রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর উপলক্ষে  বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিলসসহ বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন আজ নানা কর্মসূচি পালন করবে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ৯ তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়ে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর