রমজান ঘিরে খেজুরের ব্যাপক সরবরাহ হলেও কমেনি দাম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পবিত্র রমজানে ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। তাই রমজান মাস ঘিরে দেশে প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হয়। সেই ধারাবাহিকতা আছে এবারও। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এ বছর রোজাকে কেন্দ্র করে ৫০ থেকে ৫২ হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে, যেখানে চাহিদা ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

কাস্টমসের তথ্য মতে, গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে খেজুর আমদানি হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১.৫৭৭ টন। এ ছাড়া গত বছরের কিছু খেজুর অবিক্রীত রয়ে গেছে। তারপরও দাম কিছুটা বেড়েছে।

kalerkanthokalerkanthoএকসময় দামি খেজুরের মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি আজওয়া খেজুর। করোনা মহামারির আগে সুপারশপে প্যাকেটজাত আজওয়া খেজুর বিক্রি করা হয়েছে প্রতি কেজি দুই হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। দাম কমার কারণে আজওয়া খেজুর খুচরা ফলের দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। আর সুপারশপে এই খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। ফলের পাইকারি বাজার বাদামতলীতে সৌদি আজওয়া খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন এক হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে, যা কেজির হিসাবে দাম পড়ছে ২৮০ টাকা।

আমদানিকারকরা বলছেন, আজওয়া খেজুরের এমন দরপতনের কারণ করোনার প্রভাব। করোনার কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে হজ ও ওমরাহ পালিত হয়েছে। প্রতিবছর হজ ও ওমরাহ পালন শেষে ফেরার সময় আজওয়া কিনে ফেরেন মুসল্লিরা। কিন্তু করোনার কারণে সেই চাহিদা ছিল না। তাতে আজওয়া খেজুরের ব্যাপক দরপতন হয়।

কাস্টমসের তথ্য মতে, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১.৫৭৭ টন। আর ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে সমুদ্রবন্দর দিয়ে খেজুর এসেছিল ৪৪ হাজার ৬৮৮.৬৭ টন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের চাহিদা পূরণে এবারও ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই খেজুর আমদানি শেষ করেছেন।

দেশের ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী। বাদামতলীর ফলের পাইকারি ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে বাজারে যে খেজুর আসছে সেগুলো রমজানে খেয়ে শেষ হবে না। চাহিদার তুলনায় প্রচুর খেজুর এ বছর আমদানি হয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি। খেজুর কোনো ব্যবসায়ীই মজুদ করে রাখেন না, কারণ খেজুর রমজানে বিক্রি করতে না পারলে অন্য সময়ে দাম আরো কমে যায়। ’

তিনি আরো বলেন, ‘খেজুরের রাজা আজওয়া, সেটিই এখন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। শুধু আজওয়া খেজুর নয়, বর্তমানে সব ধরনের খেজুরের দাম কম। ’

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর রয়েছে। ফলে সরবরাহ সংকট বা অন্য কোনো সমস্যায় দাম বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই। আমি নিজেই এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছি। ’

তিনি বলেন, ‘দেশে সবচেয়ে বেশি চলে ইরাকের জাহিদি খেজুর। এটি পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে, ১০ কেজির প্রতি কার্টন জাহিদি খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। দেশে চাহিদার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরব আমিরাতের এমিরাত গোল্ড খেজুর। এটি ১০ কেজির কার্টন এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আরব আমিরাতের নাগাল খেজুর (লম্বা) ১০ কেজির কার্টন এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, বরই খেজুর ১০ কেজির কার্টন এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, খালাস খেজুর ১০ কেজির কার্টন এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা এবং সৌদি ভান্নি খেজুর ১০ কেজির কার্টন এক হাজার ১০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, উন্নতমানের খেজুরের মধ্যে সৌদি আজওয়া খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন এক হাজার ৪০০ টাকায়, মরিয়ম খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়, মাবরুম খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়, সাফারি খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন এক হাজার টাকায় এবং দেশের বাজারে সবচেয়ে দামি খেজুর জর্দানের মেজদুল খেজুর পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার টাকায়।

এদিকে টিসিবির খুচরা বাজারদরেও খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। টিসিবির বাজারদরে এখন সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুর খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা দরে, যা গত বছরের এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়।

যদিও সরেজমিনে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন ফলের দোকানে খেজুরের দামের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে এক মাসের ব্যবধানে সব ব্র্যান্ডের ১০ কেজির প্রতি কার্টন খেজুরের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।

রাজধানীর ভাটারা থানার খুচরা ফলের দোকান ভাই ভাই ফল বিতানের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এ বছর পাইকারি বাজারে খেজুরের সরবরাহ অনেক। তাই খেজুরের দাম নাগালের মধ্যেই আছে। তবে রমজান উপলক্ষে প্রতি ১০ কেজির কার্টনে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো দাম বেড়েছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘জিহাদি খেজুর প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, বরই খেজুর প্রতি কেজি ২০০ টাকায়, দাবাস খেজুর প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, মরিয়ম খেজুর মানভেদে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায়, আম্বর খেজুর প্রতি কেজি এক হাজার ২০০ টাকায় খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। ’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর