চিরকুটের প্রতি লাইনে শুধু ইতির কষ্টের কথা

ফারজানা ইয়াসমিন ইতি
‘কেন আমাকে মাঝেমধ্যে টর্চার কর। ভালোভাবে ভালোবেসে কথা বলা যায় না। তুমি বন্ধুদের সঙ্গে কত ভালোভাবে কথা বল। আমার সঙ্গে কখনোই ভালোভাবে কেন কথা বলছ না। আমার মা বাসায় আসলেন। কেন তার সামনে এমন ব্যবহার করলে। কেন তাকে এমন অপমান করলে। আমি যদি মরে যাই; তাহলে আমার সঙ্গে রাগ করো না। যদি ভালোবাস; তাহলে হয়তো সংসার করা হবে।’ তিতুুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা ইয়াসমিন ইতির রহস্যজনক মৃত্যুর পর তার বাসা থেকে দুই পৃষ্ঠার একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। ওই চিরকুটের প্রতি লাইনে রয়েছে তার কষ্টের কথা। বনানী থানা পুলিশ চিরকুটের কপি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে পাঠিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষা করে পুলিশ সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হতে চায়, আসলে ওই লেখাটি ইতির কি-না। ইতিকে হত্যা করা হয়েছে না-কি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা জানতে ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার প্রতীক্ষা করছে পুলিশ। খবর সমকাল’র।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে ভালোবেসে আলী আজগর নামে এক তরুণকে বিয়ে করেন ইতি। তবে পরিবার মেনে না নেওয়ায় কিছুদিন তারা আলাদাভাবে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর আলী যৌতুুক দাবি করলে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। সর্বশেষ এই দম্পতি মহাখালী টিবি গেট এলাকায় অ্যাজমা স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। গত ৪ এপ্রিল ইতির স্বজনরা জানতে পারেন, ইতি অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুটে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতে মারা যান ইতি।

মামলার বাদী ও ইতির মা লুৎফা বেগম জানান, মারা যাওয়ার তিন দিন আগেও ইতি মোবাইল ফোনে তার ভাইকে বলেন, ‘তোরা আলীকে নিষেধ কর, আমাকে যেন মারধর না করে। তার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারছি না।’

নিহতের মায়ের অভিযোগ, ইতির স্বামী আলী আজগর, তার মা ফিরোজা ও বোন নাসিমা ইতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। বিয়ের পর থেকে ইতিকে তারা মেনে নেয়নি। এক সময় আলীও তার মেয়েকে নির্যাতন করতে থাকে। মায়ের অভিযোগ, পৃথিবী থেকে সরাতে তার মেয়েকে আলী ও তার স্বজনরা বিষ খাইয়েছে।

ইতির বড় বোন শাহনাজ বেগম বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে ইতি সবার ছোট ছিল। পরিবারের সঙ্গে ইতি রাজধানীর নিকেতনের বাসায় বসবাস করতেন। তিতুুমীর কলেজে ভর্তির পর থেকে আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার বোনের। এরপর তারা বিয়ে করেন। ইতির স্বামী আলী একটি কম্পিউটারের দোকানে চাকরি করতেন। কিছুদিন ধরে দোকান খোলার কথা বলে চার লাখ টাকা দাবি করেন আলী। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ইতিকে নির্যাতন করা হতো।

শাহনাজ আরও বলেন, ইতি মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে তার মা ছেলের বিয়ের দাওয়াত দিতে আলীর বাসায় যান। তাকে বাসায় দেখেই গালমন্দ শুরু করেন আলী। যৌতুুকের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এমন আচরণ করেন।

পলাতক থাকার অভিযোগের ব্যাপারে আলীর পরিবারের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ইতিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত তার স্বামী। এরই মধ্যে ইতির স্বামীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর