ঢাকা ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

দূষণে নাকাল রাজধানী, মিলছে না সমাধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০২২
  • ১৯০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দখল আর দূষণে নাকাল রাজধানী শহর ঢাকা। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এর সঙ্গে জেঁকে বসেছে শব্দদূষণ। বায়ুদূষণে যখন শ্বাসরোধ অবস্থা, তখন শব্দদূষণের তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর যাপিতজীবন। অবস্থা এমন যে, ঘরের চৌকাঠ পার হলেই ধুলা ও ধোঁয়ায় ধূসর চারদিক।

যানবাহনের হর্নের উচ্চ শব্দ আঘাত করে কানের গভীরে। হাঁসফাঁস অবস্থা হৃদরোগীদের। আঁতকে ওঠে শিশু। বুক ধড়পড় করে আবালবৃদ্ধবনিতার। এমন বৈরী পরিবেশ এখন নিত্যসঙ্গী। যার গবেষণামূলক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে।

রাজধানীর যানজট, বায়ু ও শব্দদূষণ নিয়ে সংসদে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা অকার্যকর শহরে পরিণত হবে।’

পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের মানুষ যিনি গ্রামে থাকেন, তার খুব একটা সমস্যা হয় না। ঢাকা এখন শব্দদূষণে এক নম্বরে, বায়ুদূষণেও এগিয়ে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, যানজটের কারণে তারা সকালে বের হলেও দুপুরে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন কিনা, এর নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন কাজে কোনো সমন্বয় নেই। এক সংস্থা রাস্তা তৈরি করে আবার কিছু দিনের মধ্যে অন্য সংস্থা রাস্তা কাটে। কোন বাস কোথায় থামবে, তার কোনো ঠিক নেই। রাস্তা বন্ধ করে রেখে তারা যাত্রী তোলে।’ পীর ফজলুর রহমান যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দাবি জানান।

গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনের মৌলিক তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ বিশ্বের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। রাজশাহী রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। বিশ্বের ৬১ শহরের শব্দদূষণের মাত্রা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল। আর ১০৩ ডেসিবল মাত্রার শব্দ হয়ে থাকে রাজশাহীতে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ১৯৯৯ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। এছাড়া ২০১৮ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ গাইডলাইনে সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ আছে।

এদিকে দেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই দুধরনের দূষণ নয়, ভয়ানকভাবে অন্তত নয় ধরনের দূষণের কবলে পড়েছে ঢাকা। বাকি দূষণগুলোর মধ্যে রয়েছে নদী দখল, পানি, বর্জ্য, মাটি, আলো ও দৃশ্যদূষণ। সাম্প্রতিক সময়ে অণুজীব দূষণ নতুন এক অনুষঙ্গ। তারা বলেন, এসব দূষণের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কেবল বায়ুদূষণেই জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ২৮ শতাংশই মারা গেছে পরিবেশ দূষণজনিত নানা অসুখ-বিসুখে। এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।

তারা মনে করেন, এই দূষণের জন্য সরকার এবং জনগণ সমানভাবে দায়ী। জনগণ যেমন সচেতন-অসচেতনভাবে নির্বিচারে দূষণ করে যাচ্ছে। তেমনি সরকারি তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনা অন্যতম। এছাড়া আইন পালনে প্রভাবশালীদের অনীহা ও বাধা বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ সুরক্ষায় রাজনৈতিক চাপও বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক  বলেন, বিভিন্ন ধরনের দূষণ মানুষই করে থাকে। দূষণকারীদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে এই ক্ষতি করে চলেছে। আবার কেউ না জেনে অসচেতনভাবে করে যাচ্ছে। এই দূষণ বন্ধে প্রথমত সরকারের হাতে থাকা আইনের প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনগণকে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ক্ষতির ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এছাড়া দূষণে মানুষের অকালমৃত্যু বাড়ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অসুখ-বিসুখে চিকিৎসাসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এক বায়ুদূষণেই ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশ। এসব মানুষকে জানালে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে।

পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘শব্দদূষণ দূর করতে হলে মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। এরপরও এটির জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাত ও ইটভাটা অন্যতম।

বর্ষা মৌসুমে একটি স্বস্তিকর পরিবেশ আসতে পারে। আসলে বিভিন্ন ধরনের দূষণ আছে, যা নিয়ন্ত্রণের কাজটি সরকারের। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।’

গত রোববার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ইউএনইডির বরাত দিয়ে জানায়, ঢাকার বাসিন্দাদের দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। এর ফলে বধিরতা, হৃদরোগ, মানসিক বৈকল্যসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকার মানুষ। সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের এক সেমিনারে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত জানান, শব্দদূষণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন ধরনের রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। কোনো ধরনের উৎস থেকে কী রকম শব্দদূষণ হচ্ছে সে বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।

এ নিয়ে সোমবার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় মোহাম্মদ রাজ নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া তার মেয়ে নাজিমউদ্দিন রোড এলাকা থেকে আসা-যাওয়া করে। শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর চানখাঁরপুল মোড়ে আসার আগে তার মেয়ে কান চেপে ধরে। আর বকশিবাজার পেরিয়ে জগন্নাথ হলের সামনে এসে কান ছেড়ে দেয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এভাবে নগরীর কতজন কান চেপে ধরে চলতে পারবে?’

বায়ুদূষণে ঢাকা কয়েক বছর ধরে ওপরের দিকেই থাকছে। কখনো শীর্ষে উঠে যায়, আবার ১০-এর মধ্যে কোনো একটিতে নেমে আসে। গত ১৮ মার্চ ছিল শুক্রবার। কিন্তু এই ছুটির দিনেও বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে রাজধানীর ঢাকার অবস্থান ছিল এক নম্বরে। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ এই তথ্য জানায়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ওই সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই অবস্থান ছিল তৃতীয়, যা দুই ঘণ্টা আগে ছিল দ্বিতীয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন দূষণ নিয়ে গবেষণা করে থাকে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এই কেন্দ্রের পরিচালক  বলেন, ‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণ সমীক্ষা-২০২০’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছিলেন তারা। গত বছরের ২ মার্চ ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে ‘বস্তুকণা ২.৫’ নামের অতি সূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়েও ৫শ বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে। গত এক বছরে এই দূষণ বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

এই বিশেষজ্ঞ জানান, ডায়রিয়া ও কলেরার মতো রোগ পানিবাহিত। কিন্তু বাতাসের মাধ্যমেও এই রোগের অণুজীব বা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে বস্তি এলাকায় যেমন এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, তেমনি ধানমন্ডির মতো আবাসিক এলাকায়ও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকার ১৬ স্থানে ১২৮টি স্যাম্পল নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে অণুজীব ভেসে বেড়ানোর ফলে এলার্জি, গলায় ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, চোখের রোগসহ প্রতিনিয়ত নানান রোগ ছড়াচ্ছে।

হাইকোর্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে-নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

রাজধানীর চারপাশে নদীগুলোতে দখল আর দূষণের খবরও অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পাওয়া গেছে অ্যামোনিয়া, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রো-অক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, ব্রোমিন, সিসা, নিকেল, স্ট্রংশিয়াম, ক্যাডমিয়াম, রবিডিয়াম, থ্যালিয়াম ও ক্রোমিয়াম। সরকারি হিসাবে বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ পড়ছে তার ৬০ শতাংশই শিল্পবর্জ্য। এর ফলে নদীতে ভয়াবহ দূষণ ঘটেছে।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান জানান, তারা বুড়িগঙ্গার সাতটি এবং আলাদাভাবে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীতে ৩টি করে নয়টি পয়েন্টে নিয়মিত পানি পরীক্ষা করেন। গত ২১ থেকে ৩০ জুলাই তাদের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে বাতাসের মান অনেক ভালো পাওয়া যায়। বাতাসে ধুলোর পরিমাণ ৬৫ মাইক্রোগ্রাম সহনীয়, সেখানে ওইসময়ে ৪-৫ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। কিন্তু পানির মানের তেমন উন্নতি হয়নি।

একই সময়ের পরীক্ষায় দেখা যায়, পানিতে প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকলে তা সহনীয় হিসেবে ধরা যায়। শুষ্ক মৌসুমে উল্লিখিত তিন নদীতে দশমিক ৫ মিলিগ্রাম পাওয়া যাচ্ছে। আর জুলাই মাসে পাওয়া যায় দেড় থেকে ২ মিলিগ্রাম। অর্থ্যাৎ এসব নদীর অবস্থা এতই ভয়ানক পর্যায়ে নেমে গেছে যে, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলে বা কম চললেও পানির মানের কোনো উন্নতি হয় না।

তিনি বলেন, গতানুগতিক দূষণের বাইরে আছে দৃশ্য, আলো ও হেভিমেটাল বা মাটি দূষণ। ঢাকায় যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোস্টারিং, ব্যানারিং ইত্যাদি এই দূষণ তৈরি করছে। বিশেষ করে পর্ন পোস্টারিং সামাজিক নুইসেন্স তৈরি করছে। বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জার কারণে প্রাণীরা ঘুমাতে পারে না। চালকদের যানবাহন চালাতে বিঘ্ন ঘটছে। আর মাটিতে হেভি মেটাল দূষণ উর্বরতায় ভয়ানক সমস্যা করছে। ক্রোমিয়াম, সিসা, নিকেল, মার্কারি, আয়রন ইত্যাদি দূষণ হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, নদী কমিশন দখলদারদের তালিকা করেছে। আলাদাভাবে আমরাও নদীদূষণকারীদের তালিকা করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো-যারা দখলদার তারাই দূষণকারী। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

দূষণে নাকাল রাজধানী, মিলছে না সমাধান

আপডেট টাইম : ১০:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দখল আর দূষণে নাকাল রাজধানী শহর ঢাকা। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এর সঙ্গে জেঁকে বসেছে শব্দদূষণ। বায়ুদূষণে যখন শ্বাসরোধ অবস্থা, তখন শব্দদূষণের তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর যাপিতজীবন। অবস্থা এমন যে, ঘরের চৌকাঠ পার হলেই ধুলা ও ধোঁয়ায় ধূসর চারদিক।

যানবাহনের হর্নের উচ্চ শব্দ আঘাত করে কানের গভীরে। হাঁসফাঁস অবস্থা হৃদরোগীদের। আঁতকে ওঠে শিশু। বুক ধড়পড় করে আবালবৃদ্ধবনিতার। এমন বৈরী পরিবেশ এখন নিত্যসঙ্গী। যার গবেষণামূলক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে।

রাজধানীর যানজট, বায়ু ও শব্দদূষণ নিয়ে সংসদে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা অকার্যকর শহরে পরিণত হবে।’

পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের মানুষ যিনি গ্রামে থাকেন, তার খুব একটা সমস্যা হয় না। ঢাকা এখন শব্দদূষণে এক নম্বরে, বায়ুদূষণেও এগিয়ে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, যানজটের কারণে তারা সকালে বের হলেও দুপুরে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন কিনা, এর নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন কাজে কোনো সমন্বয় নেই। এক সংস্থা রাস্তা তৈরি করে আবার কিছু দিনের মধ্যে অন্য সংস্থা রাস্তা কাটে। কোন বাস কোথায় থামবে, তার কোনো ঠিক নেই। রাস্তা বন্ধ করে রেখে তারা যাত্রী তোলে।’ পীর ফজলুর রহমান যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দাবি জানান।

গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনের মৌলিক তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ বিশ্বের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। রাজশাহী রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। বিশ্বের ৬১ শহরের শব্দদূষণের মাত্রা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল। আর ১০৩ ডেসিবল মাত্রার শব্দ হয়ে থাকে রাজশাহীতে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ১৯৯৯ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। এছাড়া ২০১৮ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ গাইডলাইনে সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ আছে।

এদিকে দেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই দুধরনের দূষণ নয়, ভয়ানকভাবে অন্তত নয় ধরনের দূষণের কবলে পড়েছে ঢাকা। বাকি দূষণগুলোর মধ্যে রয়েছে নদী দখল, পানি, বর্জ্য, মাটি, আলো ও দৃশ্যদূষণ। সাম্প্রতিক সময়ে অণুজীব দূষণ নতুন এক অনুষঙ্গ। তারা বলেন, এসব দূষণের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কেবল বায়ুদূষণেই জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ২৮ শতাংশই মারা গেছে পরিবেশ দূষণজনিত নানা অসুখ-বিসুখে। এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।

তারা মনে করেন, এই দূষণের জন্য সরকার এবং জনগণ সমানভাবে দায়ী। জনগণ যেমন সচেতন-অসচেতনভাবে নির্বিচারে দূষণ করে যাচ্ছে। তেমনি সরকারি তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনা অন্যতম। এছাড়া আইন পালনে প্রভাবশালীদের অনীহা ও বাধা বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ সুরক্ষায় রাজনৈতিক চাপও বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক  বলেন, বিভিন্ন ধরনের দূষণ মানুষই করে থাকে। দূষণকারীদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে এই ক্ষতি করে চলেছে। আবার কেউ না জেনে অসচেতনভাবে করে যাচ্ছে। এই দূষণ বন্ধে প্রথমত সরকারের হাতে থাকা আইনের প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনগণকে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ক্ষতির ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এছাড়া দূষণে মানুষের অকালমৃত্যু বাড়ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অসুখ-বিসুখে চিকিৎসাসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এক বায়ুদূষণেই ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশ। এসব মানুষকে জানালে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে।

পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘শব্দদূষণ দূর করতে হলে মানুষের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। এরপরও এটির জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাত ও ইটভাটা অন্যতম।

বর্ষা মৌসুমে একটি স্বস্তিকর পরিবেশ আসতে পারে। আসলে বিভিন্ন ধরনের দূষণ আছে, যা নিয়ন্ত্রণের কাজটি সরকারের। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।’

গত রোববার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ইউএনইডির বরাত দিয়ে জানায়, ঢাকার বাসিন্দাদের দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। এর ফলে বধিরতা, হৃদরোগ, মানসিক বৈকল্যসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকার মানুষ। সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের এক সেমিনারে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত জানান, শব্দদূষণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন ধরনের রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। কোনো ধরনের উৎস থেকে কী রকম শব্দদূষণ হচ্ছে সে বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।

এ নিয়ে সোমবার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় মোহাম্মদ রাজ নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া তার মেয়ে নাজিমউদ্দিন রোড এলাকা থেকে আসা-যাওয়া করে। শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর চানখাঁরপুল মোড়ে আসার আগে তার মেয়ে কান চেপে ধরে। আর বকশিবাজার পেরিয়ে জগন্নাথ হলের সামনে এসে কান ছেড়ে দেয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এভাবে নগরীর কতজন কান চেপে ধরে চলতে পারবে?’

বায়ুদূষণে ঢাকা কয়েক বছর ধরে ওপরের দিকেই থাকছে। কখনো শীর্ষে উঠে যায়, আবার ১০-এর মধ্যে কোনো একটিতে নেমে আসে। গত ১৮ মার্চ ছিল শুক্রবার। কিন্তু এই ছুটির দিনেও বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে রাজধানীর ঢাকার অবস্থান ছিল এক নম্বরে। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ এই তথ্য জানায়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ওই সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই অবস্থান ছিল তৃতীয়, যা দুই ঘণ্টা আগে ছিল দ্বিতীয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন দূষণ নিয়ে গবেষণা করে থাকে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এই কেন্দ্রের পরিচালক  বলেন, ‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণ সমীক্ষা-২০২০’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছিলেন তারা। গত বছরের ২ মার্চ ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে ‘বস্তুকণা ২.৫’ নামের অতি সূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়েও ৫শ বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে। গত এক বছরে এই দূষণ বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

এই বিশেষজ্ঞ জানান, ডায়রিয়া ও কলেরার মতো রোগ পানিবাহিত। কিন্তু বাতাসের মাধ্যমেও এই রোগের অণুজীব বা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে বস্তি এলাকায় যেমন এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, তেমনি ধানমন্ডির মতো আবাসিক এলাকায়ও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকার ১৬ স্থানে ১২৮টি স্যাম্পল নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে অণুজীব ভেসে বেড়ানোর ফলে এলার্জি, গলায় ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, চোখের রোগসহ প্রতিনিয়ত নানান রোগ ছড়াচ্ছে।

হাইকোর্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে-নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

রাজধানীর চারপাশে নদীগুলোতে দখল আর দূষণের খবরও অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পাওয়া গেছে অ্যামোনিয়া, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রো-অক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, ব্রোমিন, সিসা, নিকেল, স্ট্রংশিয়াম, ক্যাডমিয়াম, রবিডিয়াম, থ্যালিয়াম ও ক্রোমিয়াম। সরকারি হিসাবে বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ পড়ছে তার ৬০ শতাংশই শিল্পবর্জ্য। এর ফলে নদীতে ভয়াবহ দূষণ ঘটেছে।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান জানান, তারা বুড়িগঙ্গার সাতটি এবং আলাদাভাবে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীতে ৩টি করে নয়টি পয়েন্টে নিয়মিত পানি পরীক্ষা করেন। গত ২১ থেকে ৩০ জুলাই তাদের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে বাতাসের মান অনেক ভালো পাওয়া যায়। বাতাসে ধুলোর পরিমাণ ৬৫ মাইক্রোগ্রাম সহনীয়, সেখানে ওইসময়ে ৪-৫ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। কিন্তু পানির মানের তেমন উন্নতি হয়নি।

একই সময়ের পরীক্ষায় দেখা যায়, পানিতে প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকলে তা সহনীয় হিসেবে ধরা যায়। শুষ্ক মৌসুমে উল্লিখিত তিন নদীতে দশমিক ৫ মিলিগ্রাম পাওয়া যাচ্ছে। আর জুলাই মাসে পাওয়া যায় দেড় থেকে ২ মিলিগ্রাম। অর্থ্যাৎ এসব নদীর অবস্থা এতই ভয়ানক পর্যায়ে নেমে গেছে যে, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলে বা কম চললেও পানির মানের কোনো উন্নতি হয় না।

তিনি বলেন, গতানুগতিক দূষণের বাইরে আছে দৃশ্য, আলো ও হেভিমেটাল বা মাটি দূষণ। ঢাকায় যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোস্টারিং, ব্যানারিং ইত্যাদি এই দূষণ তৈরি করছে। বিশেষ করে পর্ন পোস্টারিং সামাজিক নুইসেন্স তৈরি করছে। বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জার কারণে প্রাণীরা ঘুমাতে পারে না। চালকদের যানবাহন চালাতে বিঘ্ন ঘটছে। আর মাটিতে হেভি মেটাল দূষণ উর্বরতায় ভয়ানক সমস্যা করছে। ক্রোমিয়াম, সিসা, নিকেল, মার্কারি, আয়রন ইত্যাদি দূষণ হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, নদী কমিশন দখলদারদের তালিকা করেছে। আলাদাভাবে আমরাও নদীদূষণকারীদের তালিকা করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো-যারা দখলদার তারাই দূষণকারী। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।