হাওর বার্তা ডেস্কঃ বড় আর সুস্বাদু তরমুজে সয়লাব বাজার। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে তরমুজের উৎপাদন বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দাম ঠিক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষক ব্যয়-দেনা পরিশোধ করে লাভের টাকা পকেটে পুরতে পারবেন। বাজার ভালো থাকায় আড়তদাররাও লোকসানের কোন আশঙ্কা করছেন না।
জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ভোলা, পটুয়াখালী আর বরগুনা জেলার আংশিক এলাকায় তরমুজের চাষ হচ্ছে তিন দশক ধরে। এর মধ্যে দুই দশক হবে কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের কাছে তরমুজ চাষ প্রধান অর্থকারী ফসল হয়ে উঠেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় মৌসুমি ফলের মধ্যে তরমুজের কোনো বিকল্প দেখছেন না চাষিরা। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার নদীবিধৌত ভূমি পলি মাটির আস্তরণের কারণে তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে তেমন কোনো ঝুঁকি ছাড়াই প্রতিবছর তরমুজ চাষ করছেন কৃষকরা। বরিশাল ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি গণেশ দত্ত জানান, এই তরমুজ চাষের সঙ্গে সরাসরি প্রায় ৯০ হাজার কৃষক ছাড়াও এর সঙ্গে শ্রমিক, পাইকার এবং ব্যবসায়ী মিলে ৬ লাখ লোক জড়িত। তার মতে এমন কৃষকও রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলে শুধু তরমুজ চাষ করে এক মৌসুমে ২০ লাখ টাকাও উপার্জন করেন।
যদিও কৃষকরা বলছেন, তরমুজ চাষে পরিশ্রমটা অনেক। সন্তানের মতো তরমুজের চারা লালন করতে হয়। বীজ বপন করে সার, ওষুধের মাত্রা বাড়তি হলেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
রফিকুল নামে এক কৃষক জানান, এবছর প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন বেশ হয়েছে। আর যারা আগাম চাষ করেছিলেন তাদের তরমুজ তো আগে থেকেই ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। গেল দুই সপ্তাহ ধরে তরমুজের মৌসুম শুরু হয়েছে যা চলবে টানা মাস অবধি। গত বছর যত কৃষকের লোকসান হয়েছে এবার তারাও তা পুষিয়ে উঠবেন এবং লাভের মুখ দেখবেন।
তরমুজ চাষি শাহজাহান মাঝি জানান, তিনি এক কানি জমিতে তরমুজ চাষে এক লাখ টাকার মতো খরচ করেছেন। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে আরও তরমুজ রয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে সেগুলোও ভালোভাবে বিক্রি করতে পারবেন, তাতে লাভের অংকটা আরও বাড়বে।
এদিকে খামারবাড়ি বরিশালের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে (২০২১-২২) বিভাগের ৬ জেলায় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত মৌসুমের (২০২০-২১) চেয়ে ১১ হাজার ৭৬৩ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলার তুলনামূলক কম চাষ হয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি জেলায়। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বরগুনায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর, ভোলায় ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, বরিশালে ৬৪৬ হেক্টর, পিরোজপুরে ১০৬ হেক্টর এবং ঝালকাঠিতে ৪৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, ৬/৭ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকায় আর এর থেকে বড় ৮/১০ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় এবং ১০/১৫ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ২৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার কৃষক শফিকুল বলেন, এখন পর্যন্ত যত তরমুজ বাজারে এসেছে তারও বেশি এখনও ক্ষেতে রয়ে গেছে। এ বছর তরমুজের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে, লবণ পানিতে তাদের এলাকার কিছু ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি বরিশালের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তরমুজ চাষে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা না হলেও এক বছরের তুলনায় তার পরের বছর দেখবেন চাষ অনেক বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় বরিশাল অঞ্চলে। সারাদেশে বরিশাল অঞ্চলের তরমুজের চাহিদাও বেশি। আমরা আশা করছি, এ বছর সব কৃষকই লাভবান হবেন।