ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষে নারী উদ্যোক্তার সাফল্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৩১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নীলফামারীর জলঢাকার নারী উদ্যোক্তা  খাদিজা বেগম। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে পেয়েছেন ঈর্শণীয় সফলতা।

উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম। দেশে সু-পরিচিত ফসল চাষ না করে নতুন ফসল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা আশার আলো দেখছেন।

২০১৪ সালে খাদিজা বেগমের স্বামী মারা যান। স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন শুরু হয়। এখন বড় ছেলে চাকরি ও ছোট ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে থাকেন। ছেলেরা শখ করে দুয়েকটি ড্রাগন ফল ও কফির চারা বাড়িতে নিয়ে আসেন।

 

সেই থেকে খাদিজা স্বপ্ন দেখেন কফি ও ড্রাগন চাষের। আর এখান থেকে ২০১৮ সালের জুন মাসে ১৬ শতক জমির উপরে তিনি শুরু করেন ড্রাগন ও কফি চাষ। বর্তমানে খাদিজা বেগমের একাকীত্বের সময় কাটে বাগানে কাজ করে। অনেক যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে তিনি বাগান গড়ে তুলছেন।

বর্তমানে তার বাগানে ২৬০টি ড্রাগন ও ২০৮০টি কফি গাছ আছে। ১৬ শতক জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফল ও ২৪ শতকে রয়েছে কফির খামার। করোনার মধ্যে তিনি কয়েকবার ড্রাগন ফল বিক্রির পাশাপাশি দেশের কৃষকদের মাঝে এই ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চান।

 

খাদিজা বেগমের ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় ক্যাকটাস লাগিয়েছেন। একটু কাছে যেতেই চোখজুড়িয়ে যাবে এ বাগান দেখে। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, ফল, মুকুল, পাকা ড্রাগন ও কফি।

এ বিষয়ে খাদিজা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ২৯ মে আমার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর আমি একাকীত্বের জীবনযাপন করছিলাম। আমার দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে বড় ছেলে চাকরি করে ও ছোট ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে থাকে। ছেলেরা শখ করে দুয়েকটি ড্রাগন ফল ও কফির চারা নিয়ে আসতো। এখান থেকেই শুরু ড্রাগন ও কফি চাষ।

 

তিনি আরো জানান, আগে এই জমি খালি পরে থাকতো। পরে যখন এই জমিকে বাগানের রূপ দিতে থাকি তখন থেকে শুরু হয় বাগান করার উদ্যোগ। কফি গাছে এবারই প্রথম কফি ধরেছে। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের দুই ধরনের কফি গাছ ও এবারই প্রথম কফি গাছে ফল এসেছে। বর্তমানে খাদিজা বেগমের একাকীত্বের সময় এ বাগানে কাজ করেই কাটে।

এছাড়া অনেক যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে এ বাগান গড়ে তুলছেন তিনি। খাদিজা বেগম ভিয়েতনামের জাতীয় ড্রাগন ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেতে শুরু করেছেন। টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৈমারী ইউনিয়নের এই নারী উদ্যোক্তা।

 

তিনি জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে ১৬ শতক জমির উপরে ড্রাগন ফলের বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৬০টি চারা দিয়ে। ইতিমধ্যে গাছের বয়স প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে। ড্রাগন গাছে ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল পাওয়া যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ৩০-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব।

এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২০ কেজি ফল বিক্রি করছেন। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারা। প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মীর তামিম বান্না বলেন, খাদিজা বেগমের বাগানটি আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি ২০১৮ সালে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ও কফি চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেন এবং বাগান শুরু করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। পরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগানের কার্যক্রম শুরু করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হন।

নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বাগানকে আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা এক টুকরো জমিও ফাঁকা না রাখা। তাই আমরা বসতবাড়ির আশেপাশে সবাই যদি স্বল্প পরিসরে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি তাহলে দেশে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের দেশের কৃষি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে বলে আমি আশা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষে নারী উদ্যোক্তার সাফল্য

আপডেট টাইম : ০৫:০০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নীলফামারীর জলঢাকার নারী উদ্যোক্তা  খাদিজা বেগম। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে পেয়েছেন ঈর্শণীয় সফলতা।

উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম। দেশে সু-পরিচিত ফসল চাষ না করে নতুন ফসল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা আশার আলো দেখছেন।

২০১৪ সালে খাদিজা বেগমের স্বামী মারা যান। স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন শুরু হয়। এখন বড় ছেলে চাকরি ও ছোট ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে থাকেন। ছেলেরা শখ করে দুয়েকটি ড্রাগন ফল ও কফির চারা বাড়িতে নিয়ে আসেন।

 

সেই থেকে খাদিজা স্বপ্ন দেখেন কফি ও ড্রাগন চাষের। আর এখান থেকে ২০১৮ সালের জুন মাসে ১৬ শতক জমির উপরে তিনি শুরু করেন ড্রাগন ও কফি চাষ। বর্তমানে খাদিজা বেগমের একাকীত্বের সময় কাটে বাগানে কাজ করে। অনেক যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে তিনি বাগান গড়ে তুলছেন।

বর্তমানে তার বাগানে ২৬০টি ড্রাগন ও ২০৮০টি কফি গাছ আছে। ১৬ শতক জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফল ও ২৪ শতকে রয়েছে কফির খামার। করোনার মধ্যে তিনি কয়েকবার ড্রাগন ফল বিক্রির পাশাপাশি দেশের কৃষকদের মাঝে এই ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চান।

 

খাদিজা বেগমের ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় ক্যাকটাস লাগিয়েছেন। একটু কাছে যেতেই চোখজুড়িয়ে যাবে এ বাগান দেখে। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, ফল, মুকুল, পাকা ড্রাগন ও কফি।

এ বিষয়ে খাদিজা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ২৯ মে আমার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর আমি একাকীত্বের জীবনযাপন করছিলাম। আমার দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে বড় ছেলে চাকরি করে ও ছোট ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে থাকে। ছেলেরা শখ করে দুয়েকটি ড্রাগন ফল ও কফির চারা নিয়ে আসতো। এখান থেকেই শুরু ড্রাগন ও কফি চাষ।

 

তিনি আরো জানান, আগে এই জমি খালি পরে থাকতো। পরে যখন এই জমিকে বাগানের রূপ দিতে থাকি তখন থেকে শুরু হয় বাগান করার উদ্যোগ। কফি গাছে এবারই প্রথম কফি ধরেছে। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের দুই ধরনের কফি গাছ ও এবারই প্রথম কফি গাছে ফল এসেছে। বর্তমানে খাদিজা বেগমের একাকীত্বের সময় এ বাগানে কাজ করেই কাটে।

এছাড়া অনেক যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে এ বাগান গড়ে তুলছেন তিনি। খাদিজা বেগম ভিয়েতনামের জাতীয় ড্রাগন ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেতে শুরু করেছেন। টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৈমারী ইউনিয়নের এই নারী উদ্যোক্তা।

 

তিনি জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে ১৬ শতক জমির উপরে ড্রাগন ফলের বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৬০টি চারা দিয়ে। ইতিমধ্যে গাছের বয়স প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে। ড্রাগন গাছে ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল পাওয়া যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ৩০-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব।

এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২০ কেজি ফল বিক্রি করছেন। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারা। প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মীর তামিম বান্না বলেন, খাদিজা বেগমের বাগানটি আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি ২০১৮ সালে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ও কফি চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেন এবং বাগান শুরু করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। পরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগানের কার্যক্রম শুরু করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হন।

নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বাগানকে আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা এক টুকরো জমিও ফাঁকা না রাখা। তাই আমরা বসতবাড়ির আশেপাশে সবাই যদি স্বল্প পরিসরে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি তাহলে দেশে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের দেশের কৃষি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে বলে আমি আশা করছি।