হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুগন্ধি ধান উৎপাদনের জন্য সুনাম রয়েছে দিনাজপুর জেলার। খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে বেশ নাম-ডাক রয়েছে এই জেলার। বর্তমানে জেলায় সুগন্ধি ধান রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে বেশ খুশি ধান চাষিরা।
সুগন্ধি ধান উৎপাদন করে রেকর্ড দামে বিক্রি করতে পারায় এবার লাভের মুখ দেখছেন জেলার কৃষকরা। উৎপাদিত কাটারিভোগ (ফিলিপাইন কাটারি) ধান অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, ভৌগলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার কারণে ধান, গম, ভুট্টাসহ অনেক ধরনের ফসল উৎপাদন হয় এখানে। এবার দিনাজপুরে চলতি বছর ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সুগন্ধি জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে। তবে জেলার ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধান আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৭৬ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে চাহিদার তুলনায় সুগন্ধি জাতীয় ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তাই অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সুগন্ধি ধান।
দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানেরহাট ঘুরে দেখা যায়, কাটারিভোগ (ফিলিপাইন কাটারি) ধান প্রতি বস্তা (৭৭কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি কেজি ধানের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। গত বছর একই জাতের ধান প্রতি বস্তার দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ হাটে ধান বিক্রি করতে আসা বাবু নামে একজন বলেন, কাটারিভোগের দাম ভালোই আছে, কিন্তু আগের মতো আর এই ধান আবাদ করি না। আমার দুই বস্তা কালোজিরা ধান ছিল, ৩ হাজার ৮৮০ টাকা দরে বিক্রি করলাম। এই টাকা দিয়ে বোরো ধান লাগাব। ধানের দাম এমন পাওয়া গেলে আমারা যারা কৃষক আছি একটু লাভের মুখ দেখতে পেতাম।
এ বিষয়ে ভাই ভাই অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারি মিজান শেখ বলেন, কাটারিভোগ ধানের দাম একটু বেশি। বর্তমানে ওই ধানের মজুদ শেষের দিকে, এছাড়া বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয় না। চাহিদা আছে, কিন্তু ধান নেই। ফলে তো দাম একটু বাড়বেই। ক্রেতা ধরে রাখার জন্য এখন দাম বেশি হলেও কিনতে হচ্ছে।
হাটে ধান কিনতে আসা উত্তরা চাল ঘরের ঠিকাদার অনুপ কুমার দে বলেন, কাটারিভোগ ধানের দাম এবার অনেক বেশি। গত বারের চেয়ে বস্তা প্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগে এত দাম কখনও হয়নি। এই ধান কিনে বেশি সুবিধা করতে পারব না। আর বর্তমানে বাজারে এই ধানের আমদানিও কম। তাই আজকে চিনিগুঁড়া, কালোজিরা এসব ধান কিনলাম।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে সুগন্ধি ধানের চাষ দিনে দিনে কমছে। কিন্তু চাহিদা সেই পরিমাণে কমছে না। কৃষকেরা যেন আবার আগের মতো সুগন্ধি ধান উৎপাদনে আগ্রহী হয় সেজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।