ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে ইসি, জরুরি বৈঠক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬
  • ৩১৭ বার

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগামী চারটি ধাপের ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এর অংশ হিসেবে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা, অনিয়ম, ভোটকেন্দ্র দখল ও জালভোট ঠেকাতে প্রতিটি ইউপিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবির টহল বাড়ানো হচ্ছে।

আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের ভোটের আগেই এমন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে ইসি।

এ জন্য বুধবার আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে কমিশন। এ বৈঠকেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেবে বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের মাঠে নামার ঘোষণায় তৃণমূলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি অন্য যে কোনো ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপ থেকে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে ইসি জরুরী আইনশৃঙ্খলা বৈঠক ডেকেছে।

আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ও ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবে পঞ্চম ধাপে ২৮ মে এবং ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের জন্য তারিখ নির্ধারন করা আছে।

এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনকে ঘিরে গেল দুটি ধাপে ৪২ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ৫ শতাধিক লোক আহত হওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলো পর্যন্ত নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অনেকে নির্বাচন বাতিল করাসহ নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবি তোলেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানায়, চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়নে ৪২ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে শুরু হয় এই ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে রক্তপাতের আশঙ্কা করে প্রতিবেদন দিয়েছিল কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সুপারিশই আমলে নেয়নি ইসি। এ কারণে গত দুই ধাপের নির্বাচনেই চলেছে তাণ্ডবলীলা। গুলি, বোমা, সংঘর্ষ, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, তৃতীয় ধাপ থেকে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য করতে ইতোমধ্যে কমিশন সবাইকে আশ্বস্ত করেছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে কমিশনাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু করতে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বুধবারের বৈঠকে প্রথম দুই ধাপের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে যেসব জেলায় আগামীতে নির্বাচন হবে সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

ইসির কর্মকর্তারা মনে করেন, এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকেও মাঠ পর্যায়ের সার্বিক পরিস্থিতির বিবরণ পাওয়া যাবে। সে আলোকেই কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া প্রথম ধাপের ৬৫ ও দ্বিতীয় ধাপের ৩৭ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মামলা করার নির্দেশ এবং সাতক্ষীরার এসপি ও পাঁচ থানার ওসিকে ইসিকেত তলবের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকাগুলো। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতায় নড়াইল ও ঝিনাইদহে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর উপর হামলা, প্রভাব বিস্তার, ভয়-ভীতি দেখানোসহ নানান অভিযোগ জমা পড়ছে ইসিতে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহেদ কমিশনে অভিযোগ করেছেন, তার সমর্থকেরা প্রচারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে। তার পোষ্টার, ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

এতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন সামনে রেখে কিছু দাগি সন্ত্রাসী মারমুখী হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এরকম আরও অনেক অভিযোগ এসেছে ইসিতে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে ইসি, জরুরি বৈঠক

আপডেট টাইম : ১২:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগামী চারটি ধাপের ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এর অংশ হিসেবে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা, অনিয়ম, ভোটকেন্দ্র দখল ও জালভোট ঠেকাতে প্রতিটি ইউপিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবির টহল বাড়ানো হচ্ছে।

আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের ভোটের আগেই এমন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে ইসি।

এ জন্য বুধবার আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে কমিশন। এ বৈঠকেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেবে বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের মাঠে নামার ঘোষণায় তৃণমূলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি অন্য যে কোনো ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপ থেকে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে ইসি জরুরী আইনশৃঙ্খলা বৈঠক ডেকেছে।

আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ও ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবে পঞ্চম ধাপে ২৮ মে এবং ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের জন্য তারিখ নির্ধারন করা আছে।

এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনকে ঘিরে গেল দুটি ধাপে ৪২ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ৫ শতাধিক লোক আহত হওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলো পর্যন্ত নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অনেকে নির্বাচন বাতিল করাসহ নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবি তোলেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানায়, চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়নে ৪২ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে শুরু হয় এই ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে রক্তপাতের আশঙ্কা করে প্রতিবেদন দিয়েছিল কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সুপারিশই আমলে নেয়নি ইসি। এ কারণে গত দুই ধাপের নির্বাচনেই চলেছে তাণ্ডবলীলা। গুলি, বোমা, সংঘর্ষ, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, তৃতীয় ধাপ থেকে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য করতে ইতোমধ্যে কমিশন সবাইকে আশ্বস্ত করেছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে কমিশনাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু করতে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বুধবারের বৈঠকে প্রথম দুই ধাপের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে যেসব জেলায় আগামীতে নির্বাচন হবে সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

ইসির কর্মকর্তারা মনে করেন, এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকেও মাঠ পর্যায়ের সার্বিক পরিস্থিতির বিবরণ পাওয়া যাবে। সে আলোকেই কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া প্রথম ধাপের ৬৫ ও দ্বিতীয় ধাপের ৩৭ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মামলা করার নির্দেশ এবং সাতক্ষীরার এসপি ও পাঁচ থানার ওসিকে ইসিকেত তলবের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকাগুলো। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতায় নড়াইল ও ঝিনাইদহে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর উপর হামলা, প্রভাব বিস্তার, ভয়-ভীতি দেখানোসহ নানান অভিযোগ জমা পড়ছে ইসিতে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহেদ কমিশনে অভিযোগ করেছেন, তার সমর্থকেরা প্রচারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে। তার পোষ্টার, ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

এতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন সামনে রেখে কিছু দাগি সন্ত্রাসী মারমুখী হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এরকম আরও অনেক অভিযোগ এসেছে ইসিতে।