জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জট লেগেছে। আর এ জট নিরসনে খোদ মন্ত্রীর নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রীর উপর্যুপরি নির্দেশ না মানায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ অপরাপর একাধিক মন্ত্রীর মধ্যে এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ রকম বাস্তবতা বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সমপ্রতি একটি পত্রিকায় সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, কিছু আমলার জন্য ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করা যাচ্ছে না। একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে এসব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে থাকেন। তবে আমলাদের দিক থেকে বলা হয়, অনেকেই আছেন যারা সব সময় নিয়ম-কানুন মেনে কথা বলতে চান না। কিন্তু আমলাদের নিয়ম-কানুনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদে প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারের কর্মবণ্টন নীতিমালা ( রুলস অব বিজনেস) অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রীর কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আর মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্তৃত্ব রাখা হয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী নিয়োগ করায় বস্তুত নির্বাহী কর্তৃত্ব মন্ত্রীর হাতেই থাকার কথা। কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাচিবিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অনেক সময় এ নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ-বদলি পদোন্নতির নিয়মিত কার্যাবলি রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রী পর্যন্ত নিষ্পত্তির বিধান সুস্পষ্ট থাকার পরও নানা ফাঁক ফোকর তৈরি করে (যেমন মন্ত্রী দেশে নেই কিংবা কর্মস্থলে নেই ইত্যাদি) তা অকারণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। ক্ষেত্রবিশেষে হাতে হাতে নথি সই করিয়ে নেয়া হয়। তবে রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপনযোগ্য সব নথি বা সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর বিধান রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম গতকাল সোমবার ইত্তেফাককে বলেন, যুগ্ম সচিব থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ ও নিয়োগ পদোন্নতি সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত হয় একটি সার্কুলারের আলোকে। এটি সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। তিনি বলেন যে মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আছেন তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্তৃত্বের অধিকারি। তার মতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুনঃকর্মবণ্টন করার প্রয়োজনীয়তা আছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, নিয়মের বাইরে কিছু হচ্ছে না। অনেকগুলো বিষয় বাস্তবায়ন হয়েছে কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩০ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তার এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দেয়ার পর প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত নিয়োগ-বদলি আর পদোন্নতিকে ঘিরে এই ক্ষোভ এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগ করা হয়। মন্ত্রী তার পত্রে উল্লেখ করেছেন একই অভিযোগ অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও করছেন।
সংসদে নিজ জবাবদিহিতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও তা বজায় রাখতে ৬ দফা নির্দেশনা দেন নিজ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাগণ স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে যাতে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে রূপ কর্মসহায়ক পরিবেশ তৈরি, মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ও তা সমুন্নত রাখা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পুনঃবণ্টনের জন্য তার দেয়া ১১ জানুয়ারি ও ২৬ জানুয়ারির নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় সম্পর্কিত প্রস্তাবের নথি মন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করা, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্তৃত্ব ভাগ করে দেয়ার জন্য ‘ডেলিগেশন অব পাওয়ার’ যুগোপযোগী করার জন্য প্রস্তাবসহ নথি উপস্থাপন করা, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সার-সংক্ষেপ পাঠানোর আগে জনগুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি বিষয় হলে তা আলোচনা বা অবহিত করা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নথিতে খসড়া উপস্থাপন করে তাতে মন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বাদ পড়া সকল কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করে প্রত্যেক কর্মকর্তার বিপরীতে পদোন্নতির যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে এসএসবির সুস্পষ্ট মতামত বা মন্তব্যসহ আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নথির মাধ্যমে মন্ত্রীর কাছে খসড়া উপস্থাপন করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দফায় দফায় বৈঠক করে বঞ্চিতদের পদোন্নতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবের আলোচনার কথা রয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে পদোন্নতি হয়ে যাবে।