ঢাকা ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যায় জর্জড়িত আদিবাসী বিদ্যালয়, শিক্ষকদের মানবেতর জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪৬২ বার

সমাজে পিছিয়ে থাকা আদিবাসিদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্যে নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসিদের উদ্যোগে গড়া বড়-মহেশপুর বেসরকারি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ না হওয়ায় নানান সমস্যায় জর্জড়িত। প্রতিষ্ঠারপর নির্মিত ৪টি মাটির ঘরের ইত্যে জানালা ভেঙে গেছে। বর্ষা এলেই ফুটো টিন পানি পরে।

প্রতিষ্ঠানে চারজন শিক্ষক বেতন বা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়া পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিদ্যালয়টি দ্রুত সরকারিকরণ করাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বড় মহেশপুর গ্রাম আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকা। সমাজে পিছিয়ে পরা আদিবাসীদের ছেলে মেয়েরা বাঙালি অধ্যুষিত স্কুলে গেলে বিভিন্ন ভাবে অবহেলা করা হতো। এই অবহেলা দেখে মহেশপুর গ্রামের শিক্ষা অনুরাগী মুনিয়া রাজপুত নামে আদিবাসীর দান করা ১২ শতাংশ জমিতে ১৯৯২ সালে মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় বড় মহেশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

প্রতিষ্ঠারপর মাত্র কয়েক জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পরের বছর থেকে এলাকার সকল আদিবাসী ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করে। ১৯৯৫ সালে বড় বন্যায় বিদ্যায়টি সম্পন্ন ভেঙে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা এবং বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এর সহযোগীতায় আবারও তৈরী করা হয় মাটির চার কক্ষ।

১৯৯৭ সালে অভিভাবকদের অনুরোধে বিদ্যালয়টিতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই চলতে থাকে শিক্ষা প্রসারের কাজ। ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ হীরালাল পাহান ও সুশীল চন্দ্র পাহান নিজের জমি বন্ধক এবং সুনীতি রাণী মন্ডল ব্যক্তিগত পারিবারিক অলংকার বিক্রি করে বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি কিনেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪জন শিক্ষক কোন সুযোগ সুবিধা না পেলেও শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে আসছেন। এর মধ্যে তিনটি কক্ষে পাঠ দান ও একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি বাথ রুম আছে তাও বেহাল অবস্থা।

বর্তমানে এলাকার ১৫৮ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে ১৫৭ জনই আদিবাসি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮৩ জন। শিশু শ্রেণিতে ২৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ জন, ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩২ জন। বিদ্যালয়ে গত বছর ২৯ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সবাই পাশ করে।

কিন্তু গত বছর সারা দেশে বে-সরকারি ২৬ হাজার বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হলেও সরকারিকরণের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে দেয়া হলেও বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়নি।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অন্তরা পাহান, স্বপন পাহান, পঞ্চম শ্রেণির আফরিন বানু, রুবেল মুন্ডা, সোহেল মুন্ডা জানায়, বিদ্যালয়ের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পরে বই ভিজে যায়।

পঞ্চম শ্রেণির সিমা মুন্ডা, আশিষ মুন্ডা, সাথী মুন্ডা জানায়, বিদ্যুৎ না থাকা ও প্রয়োজনের তুলনায় বেঞ্চ কম থাকায় চাপাচাপি করে বসতে হয়। এতে গরমের মধ্যে মাটির ছোট ছোট ঘরে বাতাস না আসায় তাদের ক্লাশ গরম লাগে। তখন শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে শ্রেণি কক্ষের বাহিরে গিয়ে বাতাসে শরীর জুড়ে আবার শ্রেণিকক্ষে পড়াশুনা শুরু হয়।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক লক্ষণ পাহান ও মঙ্গা মুন্ডা জানান, তারা (আদিবাসিরা) অধিকাংশ গরীব মানুষ হওয়ায় সারাদিন মানুষের বাড়ী কাজ করে সংসারের খরচ জোগাতে হয়। যে টাকা পান সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচের বাহিরে শিশুদের গ্রামের বাহিরে রেখে পড়াশুনা করানো সম্ভব নয়। বিদ্যালয়টি সরকারি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।

বিদ্যালয়ের সুনীতি রাণী মন্ডল জানান, প্রতিদিন প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে আসেন। এভাবে দশটি বছর কেটে গেছে। বিদ্যালয় সরকারি করণ না হওয়ায় কোন বেতন পান না। বিদ্যালয় থেকে কোন অর্থ না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়।

শিক্ষক কিরণ পাহাণ জানান, মাটির তৈরী বিদ্যালয়টি টিনের ছাউনি পুরনো হয়ে মাঝে মাছে ফুটো হয়েছে। ঝড়বৃষ্টিতে শ্রেণি কক্ষে পানি পরে। বিদ্যালয়ে বেঞ্চ কম থাকায় শিক্ষার্থীদের চটে বসে পাঠদান করতে। এ ছাড়া গরমের সময়ও শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে করতে প্রচন্ড কষ্ট হয়।

শিক্ষক সুশিল চন্দ্র পাহান জানান, এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার আগে এই আদিবাসী পাড়া অন্ধকার ছিল। শিক্ষার কোন আলো তাদের মধ্যে ছিল না। তাদের শিক্ষিত করতেই এই বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক হীরালাল পাহান জানান, সরকারি ভাবে ২০১২ সালে সকল বে-সরকারি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করা হয়। পরের বছরও বিদ্যালয়ের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে দেয়া হয়। কিন্তু কি কারণে তাদের বিদ্যালয় সরকারি করা হয়নি তার জানা নেই।

তিনি আরো জানান, বাংলা ভাষার পাশাপাশি আদিবাসী ভাষাও শিক্ষা দেওয়া হয়। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যে স্বপ্নের বিদ্যালয় তাঁরা গড়তে চলেছেন তাঁর ছাউনির জন্য টিন কেনার অর্থও নেই। অর্থের অভাবে থেমে আছে নতুন ভবনের কাজ। নতুন ভবনের ছাউনির জন্য এখনো প্রায় ২০ ব্যান্ডেল টিনের প্রয়োজন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এরা অধিকাংশ ভ’মিহীন ও গরীব হওয়ায় সবার পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অর্থের অভাবে অনেকেই ঝড়ে পড়ে।

চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এশরাক হোসেন জানান, আদিবাসী স্কুলে যে শিক্ষকগুলো আছে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ না হওয়া মানবেতর জীবন যাপন করেন। আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। বিদ্যালয়টি সরকারি করণ করা হলে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা অনেক উপকৃত হতো। তিনি বিদ্যালয়টি সরকারি করণের দাবী জানান।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তাজকির-উজ-জামান জানান, আদিবাসী বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তারা যদি বিদ্যালয়ের কাগজপত্র নিয়ে আসে তাহলে যথাযথ ভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানো হবে। সেখানে যে নতুন ভবন হয়েছে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দুই বান্ডেল ঢেউটিন প্রদান করা হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে সবাইকে শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী মাসের মাঝামাঝিতে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করতে পারবো।

স্থানীয় (মহাদেবপুর-বদলগাছী) সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম জানান, বিদ্যালয়েটি সরকারিকরণে সকল সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সমস্যায় জর্জড়িত আদিবাসী বিদ্যালয়, শিক্ষকদের মানবেতর জীবন

আপডেট টাইম : ১২:০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬

সমাজে পিছিয়ে থাকা আদিবাসিদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্যে নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসিদের উদ্যোগে গড়া বড়-মহেশপুর বেসরকারি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ না হওয়ায় নানান সমস্যায় জর্জড়িত। প্রতিষ্ঠারপর নির্মিত ৪টি মাটির ঘরের ইত্যে জানালা ভেঙে গেছে। বর্ষা এলেই ফুটো টিন পানি পরে।

প্রতিষ্ঠানে চারজন শিক্ষক বেতন বা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়া পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিদ্যালয়টি দ্রুত সরকারিকরণ করাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বড় মহেশপুর গ্রাম আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকা। সমাজে পিছিয়ে পরা আদিবাসীদের ছেলে মেয়েরা বাঙালি অধ্যুষিত স্কুলে গেলে বিভিন্ন ভাবে অবহেলা করা হতো। এই অবহেলা দেখে মহেশপুর গ্রামের শিক্ষা অনুরাগী মুনিয়া রাজপুত নামে আদিবাসীর দান করা ১২ শতাংশ জমিতে ১৯৯২ সালে মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় বড় মহেশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

প্রতিষ্ঠারপর মাত্র কয়েক জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পরের বছর থেকে এলাকার সকল আদিবাসী ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করে। ১৯৯৫ সালে বড় বন্যায় বিদ্যায়টি সম্পন্ন ভেঙে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা এবং বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এর সহযোগীতায় আবারও তৈরী করা হয় মাটির চার কক্ষ।

১৯৯৭ সালে অভিভাবকদের অনুরোধে বিদ্যালয়টিতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই চলতে থাকে শিক্ষা প্রসারের কাজ। ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ হীরালাল পাহান ও সুশীল চন্দ্র পাহান নিজের জমি বন্ধক এবং সুনীতি রাণী মন্ডল ব্যক্তিগত পারিবারিক অলংকার বিক্রি করে বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি কিনেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪জন শিক্ষক কোন সুযোগ সুবিধা না পেলেও শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে আসছেন। এর মধ্যে তিনটি কক্ষে পাঠ দান ও একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি বাথ রুম আছে তাও বেহাল অবস্থা।

বর্তমানে এলাকার ১৫৮ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে ১৫৭ জনই আদিবাসি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮৩ জন। শিশু শ্রেণিতে ২৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ জন, ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩২ জন। বিদ্যালয়ে গত বছর ২৯ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সবাই পাশ করে।

কিন্তু গত বছর সারা দেশে বে-সরকারি ২৬ হাজার বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হলেও সরকারিকরণের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে দেয়া হলেও বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়নি।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অন্তরা পাহান, স্বপন পাহান, পঞ্চম শ্রেণির আফরিন বানু, রুবেল মুন্ডা, সোহেল মুন্ডা জানায়, বিদ্যালয়ের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পরে বই ভিজে যায়।

পঞ্চম শ্রেণির সিমা মুন্ডা, আশিষ মুন্ডা, সাথী মুন্ডা জানায়, বিদ্যুৎ না থাকা ও প্রয়োজনের তুলনায় বেঞ্চ কম থাকায় চাপাচাপি করে বসতে হয়। এতে গরমের মধ্যে মাটির ছোট ছোট ঘরে বাতাস না আসায় তাদের ক্লাশ গরম লাগে। তখন শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে শ্রেণি কক্ষের বাহিরে গিয়ে বাতাসে শরীর জুড়ে আবার শ্রেণিকক্ষে পড়াশুনা শুরু হয়।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক লক্ষণ পাহান ও মঙ্গা মুন্ডা জানান, তারা (আদিবাসিরা) অধিকাংশ গরীব মানুষ হওয়ায় সারাদিন মানুষের বাড়ী কাজ করে সংসারের খরচ জোগাতে হয়। যে টাকা পান সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচের বাহিরে শিশুদের গ্রামের বাহিরে রেখে পড়াশুনা করানো সম্ভব নয়। বিদ্যালয়টি সরকারি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।

বিদ্যালয়ের সুনীতি রাণী মন্ডল জানান, প্রতিদিন প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে আসেন। এভাবে দশটি বছর কেটে গেছে। বিদ্যালয় সরকারি করণ না হওয়ায় কোন বেতন পান না। বিদ্যালয় থেকে কোন অর্থ না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়।

শিক্ষক কিরণ পাহাণ জানান, মাটির তৈরী বিদ্যালয়টি টিনের ছাউনি পুরনো হয়ে মাঝে মাছে ফুটো হয়েছে। ঝড়বৃষ্টিতে শ্রেণি কক্ষে পানি পরে। বিদ্যালয়ে বেঞ্চ কম থাকায় শিক্ষার্থীদের চটে বসে পাঠদান করতে। এ ছাড়া গরমের সময়ও শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে করতে প্রচন্ড কষ্ট হয়।

শিক্ষক সুশিল চন্দ্র পাহান জানান, এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার আগে এই আদিবাসী পাড়া অন্ধকার ছিল। শিক্ষার কোন আলো তাদের মধ্যে ছিল না। তাদের শিক্ষিত করতেই এই বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক হীরালাল পাহান জানান, সরকারি ভাবে ২০১২ সালে সকল বে-সরকারি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করা হয়। পরের বছরও বিদ্যালয়ের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে দেয়া হয়। কিন্তু কি কারণে তাদের বিদ্যালয় সরকারি করা হয়নি তার জানা নেই।

তিনি আরো জানান, বাংলা ভাষার পাশাপাশি আদিবাসী ভাষাও শিক্ষা দেওয়া হয়। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যে স্বপ্নের বিদ্যালয় তাঁরা গড়তে চলেছেন তাঁর ছাউনির জন্য টিন কেনার অর্থও নেই। অর্থের অভাবে থেমে আছে নতুন ভবনের কাজ। নতুন ভবনের ছাউনির জন্য এখনো প্রায় ২০ ব্যান্ডেল টিনের প্রয়োজন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এরা অধিকাংশ ভ’মিহীন ও গরীব হওয়ায় সবার পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অর্থের অভাবে অনেকেই ঝড়ে পড়ে।

চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এশরাক হোসেন জানান, আদিবাসী স্কুলে যে শিক্ষকগুলো আছে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ না হওয়া মানবেতর জীবন যাপন করেন। আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। বিদ্যালয়টি সরকারি করণ করা হলে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা অনেক উপকৃত হতো। তিনি বিদ্যালয়টি সরকারি করণের দাবী জানান।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তাজকির-উজ-জামান জানান, আদিবাসী বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তারা যদি বিদ্যালয়ের কাগজপত্র নিয়ে আসে তাহলে যথাযথ ভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানো হবে। সেখানে যে নতুন ভবন হয়েছে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে দুই বান্ডেল ঢেউটিন প্রদান করা হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে সবাইকে শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী মাসের মাঝামাঝিতে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করতে পারবো।

স্থানীয় (মহাদেবপুর-বদলগাছী) সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম জানান, বিদ্যালয়েটি সরকারিকরণে সকল সহযোগিতা অব্যাহত আছে।