ডা.মুরাদ হাসান দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নারীবিদ্বেষী অসৌজন্যমূলক বক্তব্য ও ফোনালাপের অশালীন কথোপকথনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সদ্য তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা এবং জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ পাওয়া ডা. মুরাদ হাসান দেশত্যাগের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বাইরে যেতে বিমানের একটি টিকিটও সংগ্রহ করেছেন তিনি।

জানা গেছে, গত সোমবার সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার মধ্যেই চট্টগ্রামে চলে যান ডা. মুরাদ। অশালীন, শিষ্টাচার-বহির্ভূত ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় ওই রাতেই পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পান। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তখন থেকেই সম্ভাব্য কোন দেশে যাওয়া যায় তার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। পরে চূড়ান্তভাবে কানাডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডা. মুরাদ। প্রথমে সপরিবারে যাওয়ার চিন্তা থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভিসা না থাকায় নিজেই দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন তিনি।

যদিও লাল পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে যেতে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। লাল পাসপোর্টধারী ব্যক্তি সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে সদ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ জিও না থাকায় বিদেশগমনে জটিলতায় পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এ অবস্থায় তার বিদেশগমন অনিশ্চিত হতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে ডা. মুরাদ হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এরআগে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠান ডা. মুরাদ। পরে দুপুর ৩টায় তার পক্ষে পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।

পরে মঙ্গরবার রাতেই প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ডা. মো. মুরাদ হাসানের পদত্যাগের পত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ওই রাতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। পরে তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়।

এর আগে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। মুরাদ হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮টায় মুরাদ হাসানকে এ বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে ডা. মুরাদের করা নারীবিদ্বেষী মন্তব্য ঘিরে কদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছিল। এরইমধ্যে সোমবার রাতে একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ফোনালাপের একটি কল রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে নায়িকার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি নোংরা ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন। একইসঙ্গে তাকে আপত্তিকর প্রস্তাব ও হত্যার হুমকিও দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি মুরাদের শাস্তিরও দাবি উঠে।

২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ডা. মুরাদ জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের এমপি। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। মুরাদ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর