উত্তরে শীতের আগমনী বার্তা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতপ্রধান জেলা পঞ্চগড় থেকে আগাম শীতের বার্তা নিয়ে এলো ঠাকুরগাঁওয়ে। কয়েকদিন ধরে সারাদেশের ন্যায় টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শীতের আগমনী বার্তা বইতে শুরু করেছে।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে কিছু এলাকায় নিচু জমি থাকায় কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে আগাম শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২২ নম্বর সেনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সবজি চাষি  জানান, টানা কয়েকদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ঝিরঝির বৃষ্টির মতো হালকা শীত ও দিনের বেলায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা হওয়ার কারণে আগাম জাতের শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ দেখা দিয়েছে।

মূলত পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল ধরা হলেও আশ্বিন-কার্তিকের দিকেই গুটি গুটি পায়ে শীতের আগাম বার্তা জানান দেয়। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, ঘাসের ওপর ভোরের সূর্য হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দিচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে।

হিমালয়ের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলায় শীতের আমেজ নেমে আসে বেশ আগে ভাগেই। সারাদিনের ভ্যাপসা গরমের পর রাতের প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে শীতের হিমেল হাওয়া। অপরূপ হেমন্তের সকালে মিষ্টি রোদ পড়ে গাছের সবুজ পাতার ওপর। কুয়াশার সকালে শিশির ভেজা মাটিতে ঝরে পড়ে শিউলি ফুল। কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রাস্তা-ঘাট। সড়কে যানবাহন চলে ধীরগতিতে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এসবই জানান দেয় শীত আসছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে অ্যাডভোকেট জানান, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে শীতের আগামনী বার্তা জানান দিচ্ছে। তাই এখন থেকে আমাদের শীতের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। শীত শুরুর আগেই যদি সরকার শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তাহলে হয়তো নিম্ন শ্রেণির মানুষেরা শীতকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে। আমরা প্রতিবছর দেখি শীতের মাঝামাঝি সময়ে যখন কঠিন ঠাণ্ডাটা চলে যায় তখন সরকারি-বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে শীতের বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এসব শীতবস্ত্র যদি আগে বিতরণ করা হয় তাহলে হয়তো নিম্ন আয়ের মানুষ এরা শীত থেকে রেহাই পাবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২২ নম্বর ইউনিয়নের মিয়াজী পাড়া গ্রামের বৃদ্ধ রশিদুল ইসলাম  জানান, এইবার গ্রামে মনে হয় শীত বেশি হবে কারণ এখন থেকে যে শীত পড়া শুরু হয়েছে। সকালবেলা ঘন কুয়াশা এবং মাঝরাতে শেষে টিনের ঘরে বৃষ্টি পড়ছে মনে হচ্ছে এরকম শব্দ হয়। তবে যেভাবে শীত বাড়ছে তবে মনে হচ্ছে এবার শীত বেশি হবে বলে আমরা ধারণা করছি। এদিকে দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাই আমরা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  জানান, কয়েকদিন ধরে টানা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে উঁচু-নিচু জমিতে পানি জমে থাকার কারণে বিভিন্ন শাক সবজি ঠাণ্ডা গরম ও বৃষ্টির কারণে এই আবহাওয়া সবজিতে ধরনের ভাইরাস দেখা দিতে পারে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিচ্ছে।
এদিকে ঠাণ্ডা গরম আবহাওয়ায় শিশুদের বিভিন্ন ধরনের বয়সের মানুষের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ  বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ৬০-৭০ জন শিশু ভর্তি থাকে। এখন ১৭০-১৮০ জন ভর্তি বাড়ছে। এদিকে হাসপাতালে বেডের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। এ সময় শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর