উন্নত চিকিৎসার প্রতীক্ষা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যু। এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৬ বছর বয়সি বেগম খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। বর্তমানে ‘লিভার সিরোসিস’ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাঝখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে লিভার সিরোসিস রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে এবং ব্লিডিং হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছেন বেগম জিয়ার যে রোগ তার চিকিৎসা বাংলাদেশ দূরের কথা এশিয়া এবং বিশ্বের উন্নত বহু দেশেই নেই। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির কিছু হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে।

এদিকে সর্বোত্রই চলছে বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা। হাট-মাঠ-ঘাট-বাস-ট্রেন-অফিস-আদালত সবখাবেই আলোচনা খালেদা জিয়াকে কী বিদেশে নেয়া হচ্ছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একই চিত্র। দেশ-বিদেশের সব ধরনের খবর ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে প্রধান আলোচ্য বিষয় তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাবে কি-না সেটাই।

বিএনপি মহাসচিব কয়েকদিন থেকে বেগম জিয়ার চিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে বলছেন ‘তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’। খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম বলেছেন, মানবিক কারণে হলেও বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া উচিত। সরকারের কাছে এটা আমাদের প্রত্যাশা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির তিন দেশের যে কোনো একটিতে নেয়া অপরিহার্য। বর্তমানে তিনি ‘মৃত্যু ঝুঁকিতে’ আছেন। বিএনপি ও বেগম জিয়ার পরিবার তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতির আবেদন করেছেন একাধিকবার। কিন্তু আইনের অজুহাতে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে বেগম জিয়ার চিকিৎসা করানো যেতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসাপত্র বিদেশে পাঠানো হয়েছে। বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার অনুমতি রয়েছে। সিসিইউতে থাকা বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে চলছে বক্তৃতা-বিবৃতি যুদ্ধ। জাতীয় সংসদও এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যখন ‘রাজনীতির মরণ খেলা’ চলছে; তখন তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা রোগীর অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে তারা রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য বিদেশ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সারাদেশের মানুষ বেগম জিয়ার চিকিৎসা এবং তাকে বিদেশে পাঠানো ফলাফলের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

কয়েকদিন ধরে বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিয়ে চাপান-উতোন চলছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলছেন, বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করানো হোক। কেউ বলছেন, বেগম জিয়া প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। অপরদিকে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, বেগম জিয়া কোনো অপরাধ করেননি, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। কেউ বলছেন সরকারের ইচ্ছা করলেই বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে পারেন। আবার কেউ বলছেন, সাংবিধানিকভাবে বেগম জিয়ার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। নানাজনে নানান কথা বলছেন। বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে যেন বক্তৃতা-বিবৃতির গোলাবর্ষণ চলছে। এতে করে বেগম জিয়ার অবস্থা ক্রমান্বয়ে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে গত রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় তার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মো. সিদ্দিকী (এএফএম সিদ্দিকী) বলেছেন, খালেদা জিয়া ‘লিভার সিরোসিস’ রোগে আক্রান্ত। তিনি ‘মৃত্যু ঝুঁকিতে’ আছেন। উনার মেসিভ রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে লাস্ট টুয়েন্টিফোর আওয়াসের মধ্যে ব্লিডিংটা হয়নি। আমরা বলছি এই যে ব্লিডিং স্টেবল আছে এটা কিন্তু বিশ্বের বেস্ট সেন্টারগুলোতে এই ধরনের রোগীর ওপর প্রচুর ডাটা আছে। এই ধরনের রোগীগুলোর ম্যানেজমেন্ট যদি ফেইলিউর হয় তাদের পরবর্তী স্টেপ কী হচ্ছে এবং তাদের কিভাবে লাইফ সেভিং করা যায়। ম্যাডামের এখন যদি ‘টিপস’ মেথড অ্যাপ্লাই করা না হয় তাহলে আগামীতে আবার রি-ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা নেক্সট উইকে ৫০%, নেক্সট ৬ সাপ্তাহে ৬০% এবং তারপরেও যদি যায় আল্লাহ না করুক এটা অভিয়াস ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। এটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা যা করছি- আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায়। এখন আমরা কিন্তু হেল্পলেস ফিল করছি। এখন এরকম একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে উনি যাচ্ছেন।

‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসার কথা আপনারা বলছেন। সেটা যদি না করা হয় তাহলে কি হতে পারে বলে আপনারা আশঙ্কা করছেন’ এরকম প্রশ্নের জবাবে এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের এই চিকিৎসক বলেন, আশঙ্কা করছি আবার উনার যদি রি-ব্লিডিং হয় তাহলে রি-ব্লিডিংটাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেটাকে বন্ধ করার মতো সাপোর্টিভ যে টেকনোলজি মেনোভার এটা বাংলাদেশে নেই। সেক্ষেত্রে উনার ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। এ রোগীর থার্ড টাইম ব্লিডিং হয়েছে। উনার মতো বয়সে হার্ট ফেইলিউর আছে, যার নাকী হিমোগেøাবিন কমে যায়, যার ডায়াবেটিক আছে। এতো জটিলতার মধ্যে কিডনির ডিজিজ আছে, উনার এনাল ফেইলিউর হয়ে যায়। এটা কিভাবে আমরা সাসটেইন করব যদি আমরা প্রেসারটা টিপস দিয়ে কমাতে না পারি। সেজন্য আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি, যুক্তরাজ্য অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার সুপারিশ করেছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, উনার পরিবারকে জানিয়েছি এবং যত তাড়াতাড়ি আপনারা বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। কারণ এখনো টাইম আছে। উনি স্টেবল আছেন।

ডাক্তারদের পরিভাষায় ‘লিভার সিরোসিস’ রোগের টিপস পদ্ধতির একটি উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। সেটা হলো এই পদ্ধতির মাধ্যমে লিভারের ভিতরে খাবার পরিশোধনের যে ব্যবস্থা রয়েছে, লিভার সিরোসিসের কারণে যেখানে বাধা বা জটিলতা তৈরি হয়েছে সেখানে একটি সংযোগ বা বাইপাস তৈরি করে দেয়া হয়। এতে লিভারের ভিতরে চাপ কমে এবং রক্তক্ষরণ হয় না। এই ‘টিপস’ পদ্ধতি কোন দেশে চিকিৎসা কেন্দ্রে হয় জানতে চাইলে মেডিক্যাল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, টিপস হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। আমাদের দেশে টিপস করা রোগী আমি দেখিনি। যারা আমরা রোগী ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার তৃতীয়বার রক্তক্ষরণ হলে তাকে বাঁচানো খুবই কঠিন। সেজন্য এই সেন্টারগুলো আছে ইউএসএ, ইউকে ও জার্মানীতে। সেখানে এসব রোগের চিকিৎসার জন্য এডভান্স সেন্টার আছে তারা এর চিকিৎসা করে।

সরকার থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার। বিদেশ থেকে চিকিৎসক ঢাকায় এনে করা সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনি যদি বুঝে থাকেন যে, টিপস টেকনোলজিটা, আপনি ইমাজিন করেন এটা ইউকের কিংস কলেজে। অর্থ্যাৎ যুক্তরাজ্যের হাসপাতালের ওদের কোনো রোগী এরকম হয় ওরাই তাকে হেলিকপ্টারে করে ওই হাসপাতালে পাঠায়। হাইলি সিলেকটিভ। এভাবে একজন রোগীর জন্য একটা হাসপাতালকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক মো. নুরউদ্দিন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন চলছে। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির পক্ষ থেকে মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি, সমাবেশ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, দোয়া-মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চাইলে আইনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বাংলাদেশে যে কোনো স্থানে খালেদা জিয়া তার চিকিৎসা করাতে পারেন। তিনি চাইলে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার অনুমতি দেয়া আছে। তিনি চাইলে চিকিৎসাপত্র বিদেশি ডাক্তারদের দ্বারা দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।

এর আগের দিন জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া সরকারের কাস্টডিতে নেই। তাকে দন্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি দুই শর্তে সম্পূর্ণ মুক্ত। মুক্ত বলেই তিনি মুক্তভাবে বাসায় থাকতে পারছেন। মুক্তভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৬ ধারায় বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যায় বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন দাবি করলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শুধু বলে সাব-জেল বানিয়ে রাখা হয়েছে। ওনার বাসাটাকে কোনো জেলই বানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় দন্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে ৬ মাস করে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। সেখানে দুইটি শর্ত যুক্ত ছিল, সেটা এখনও আছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় যাকে মুক্তি দেয়া হবে, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু দেখতে হবে এটা শর্তযুক্ত অথবা শর্তমুক্ত কি-না। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশে থেকে চিকিৎসা নেবেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় গত ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া অসুস্থ হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়ন একটি মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই বোর্ডে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন।

৭৬ বছর বয়েসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকেন দুই বছর। পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাগার থেকে অসুস্থতা নিয়ে মুক্তির পর এই পর্যন্ত খালেদা জিয়া তিনবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর