হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতকালীন সবজি হিসেবে শিমের কদর অনেক। বাজারে আগাম শিমের চাহিদা প্রচুর হওয়ায় মুনাফাও বেশি।
জেলার সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে সারা দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে চলে যায় লালমনিরহাটে উৎপাদিত সবজি।
শীতকালীন সবজির অন্যতম শিম। স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা। শীতের শুরুতে আগাম শিমের কদর বেড়েছে বাজারে। ফলে দাম বেশি থাকায় ভালো মুনাফা গুণছেন চাষিরা। বর্তমানে চাষিদের ক্ষেতেই প্রতি কেজি শিম ৮০/১০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা চাষিদের ক্ষেত থেকে নগদ অর্থে শিম কিনে জেলার বাজারসহ সারা দেশের পাইকারি বাজারে পাঠাচ্ছেন। শীতকালন মৌসুমে সবজি উৎপাদনকে ঘিরে নানামুখি ব্যবসা চালু হয় জেলায়। বেড়ে যায় দিনমজুরের মজুরি, ভ্যানসহ ছোট যানবাহনগুলো চাহিদাও বেড়ে যায়। সব মিলে সবজিকে ঘিরে জেলার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়ন সবজির এলাকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এছাড়া সারপুকুর, ভেলাবাড়ি, ভাদাই ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার বড়বাড়ি, কুলাঘাট, মোগলহাট,পঞ্চগ্রাম, কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর, গোড়ল, চলবলা, হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি, বড়খাতাসহ অনেক এলাকাতেই এখন সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। সবজির মুনাফায় ঘুরছে চাষিদের সংসারের চাকা। অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তনও ঘটিয়েছেন সবজি চাষাবাদে।
কৃষকরা জানান, পানি জমে না এমন উঁচু জমি শিম চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। এমন উঁচু জমিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে গর্ত করে জৈবসার দিয়ে ভরাট করে রাখতে হয়। কিছুদিন পরে গর্তে শিমের বীজ বোনা হয়। বীজ থেকে চারা গজালে প্রয়োজনীয় সেচ আর পরিচর্যা করে ওপরে মাচা করে দিতে হয়। বীজ বপনের আড়াই-তিন মাসের মধ্যেই শিমের ফুল ও ফল আসে। এরপর শুধু মাঝে মধ্যে কীটনাশক স্প্রে করে শিম সংগ্রহ করা। শীতের শুরুতে শিমের কদর বেশি থাকায় দামও অনেকটা চড়া। দাম ভালো পাওয়ায় শিম চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সবজির এলাকা খ্যাত বড় কমলা গ্রামের শিম চাষি নুরুন নেছা জানান, মাত্র ৭০ শতাংশ কৃষি জমিই তাদের সম্বল। এ জমির সবজি বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। একের পর এক সবজি চাষে ব্যস্ত থাকেন তারা। পরিবারের সবাই সবজি চাষে শ্রম দেন। সবজি বিক্রি করে সঞ্চিত অর্থে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ধুমধাম করে। তাদের ওই জমিতে এখন বিশাল শিম বাগান। শিমের প্রতিটি গিটে গিটে থোকায় থোকায় শিম এসেছে। শিমের ক্ষেতে ভিড় করছেন পাইকারি শিম ব্যবসায়ীরা। ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। এর আগে একই মাচায় ছিল ঝিংগা আর শসা। শসা গাছ থাকতেই শিমের বীজ বপন করেছেন তারা।
নুরুন নেছা বলেন, একবার মাচা দিলে কয়েক বছর বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করা যায়। এসব সবজি চাষে মাচা তৈরিতে বেশ খরচ হয়। এক খরচেই চলে কয়েক বছর। ঝিংগা আর শসা শেষে এখন শিমে ভরে উঠেছে মাচা। শিমে তেমন কোনো খরচ নেই। আগাম শিমের চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো। তাই বেশ মুনাফা হয়। গত বছর শিম বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছি। এবার দাম ভালো আছে। তাই লাভও বেশি হবে।
একই গ্রামের চাষি আব্দুল করিম বলেন, আগাম শিমের চাহিদা বেশি, তাই দামও ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার আগাম শিমের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি, গত বছরের তুলনায় এ বছর শিমে বেশি মুনাফা হবে।
সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল বলেন, চাষিদের ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় সবজি কিনে ট্রাকে পাঠানো হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাহসহ সারা দেশের বড় বড় সবজির পাইকারি বাজারে। সেখানে টাটকা সবজি বিক্রি করে অনলাইন ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা চলে আসে। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িয়ে আমার পাঁচ সদস্যের সংসার ভালোই চলছে।