ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজ অরণ্যের স্পর্শে নতুন পাখি পেল বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
  • ১৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তার দুইপাশে চোখ ধাঁধানো গগন শিরীষ গাছ। একপাশের গাছগুলো যেন আরেক পাশের গাছগুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে।

এই দৃশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডের। যেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারও পাখির কলতান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমোহিত করে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক বিরল প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। পাখার বাদামি রঙের কারুকাজ পাখিটিকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। পাখিটির নাম হলো ছোট ‘কালিপেঁচা’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Glaucidium Radiatum ও ইংরেজি নাম Jungle Owlet।

১৩ অক্টোবর ওই পাখি প্রথম নজরে পড়ে রাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজার।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাব যৌথভাবে তাকে নিয়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়। শেষে এর নাম লেখায় বাংলাদেশের নতুন পাখির তালিকায়।

নতুন প্রজাতির এই পাখির খবর খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এরপর থেকে দেশের আনাচ-কানাচে থেকে ছোট কালিপেঁচার ছবি তুলতে রাবিতে আসছেন পাখিপ্রেমীরা।

ছবিতে যেমন দেখা যায়, বাস্তবে তার সৌন্দর্য আরও বেশি। ছোট এই কালিপেঁচাটির একটি গোলাকার মাথা আছে এবং এটি সর্বত্র সূক্ষ্মভাবে বাঁধাযুক্ত। ডানাগুলো বাদামি ডোরাকাটা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে এ ধরনের ২৫০টি পেঁচার প্রজাতি আছে। বাংলাদেশেও ১৮টি প্রজাতি ছিল। তবে, এই পেঁচাটি অন্যটির থেকে একটু আলাদা। এর পাখার বাদামি রঙের কিছু কারুকাজ রয়েছে। যা তাকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দেশে আগে কখনও ওই পাখি দেখা যায়নি। রাবির সুউচ্চ গগন শিরীষ গাছে প্রথম দেখা যায়। এই প্রজাতির পাখি এককভাবে, জোড়ায় বা ছোট দলে পাওয়া যায়।

সাধারণত খুব ভোরে এবং সন্ধ্যায় তাদের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। পাখিটির দুটি উপ-প্রজাতি রয়েছে। একটি হলো jungle Owlet, আরেকটি হলো Asian Barret owlet পাখিটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সমভূমিতে পাওয়া যায়। এছাড়া এটি আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি  বলেন, এই প্রজাতির পাখি এর আগে বাংলাদেশের কোথাও কেউ দেখেনি। এছাড়া এই পাখিরা উঁচু ও অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছে বসবাস করতে পছন্দ করে। এখন দেশের খুব কম জায়গায় প্যারিস রোডের মত সুউচ্চ গাছ আছে। ফলে তাদের সঠিক আবাস্থল না থাকার কারণেও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার সমভূমি, আর্দ্র অঞ্চল এবং জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাখিদের দেখা যায়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহ-সভাপতি তারেক অণু বলেন, এশীয়-দাগিপ্যাঁচার সঙ্গে এই নতুন এই পেঁচার কিছুটা সদৃশ্য বা মিল রয়েছে। আর এশিয়ান দাগিপ্যাঁচা সাধারণত দেশের সিলেট অঞ্চলে দেখা যায়।

জানতে চাইলে রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আমিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, ১৩ অক্টোবর সকালে হাঁটতে গিয়ে নতুন এই পাখিটি দেখি। পাখির সবকিছু দেখে মনে হয় এটি ছোট কালিপেঁচা হবে। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। এরপর এই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে যে এই পাখিটি ছোট ‘কালিপেঁচাই’।

তিনি আরও বলেন, এই প্রজাতির পাখি আগে দেশে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় একই ধরনের পাখি দেখে অনেকে ছোট ‘কালিপেঁচা’ দেখা কথা দাবি করলেও সেটির কোন প্রমাণ নেই। তবে, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রথম পাখিটি দেখা যায়। ফলে দেশের পাখি তালিকা আরও সমৃদ্ধ হলো।

রাবির প্যারিস রোড কেনো আবাসস্থল হিসেবে পছন্দ করলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের আবহাওয়া ও গাছগুলো এই প্রজাতির পাখিদের বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। তাই তারা এখানে আবাসস্থল গড়েছেন।

তবে, পাখিগুলো এখানে থাকবে কিনা এটির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাখিদের কোনোভাবে বিরক্ত করা হলে তারা আর থাকবে না। আর নতুন পাখির কথা শুনে বিভিন্ন সময় ফটোগ্রাফাররা ভালো ছবি তুলতে সর্বদা চেষ্টা করছেন। এটিতে তারা বিরক্ত হতে পারে। এছাড়া রাতে আলো দিয়ে ছবি তোলায় তারা ভয় পেয়ে চলে যেতে পারে। নতুন এই প্রজাতির পাখিকে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই রাবি অধ্যাপক ও পাখি গবেষক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সবুজ অরণ্যের স্পর্শে নতুন পাখি পেল বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১১:২৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তার দুইপাশে চোখ ধাঁধানো গগন শিরীষ গাছ। একপাশের গাছগুলো যেন আরেক পাশের গাছগুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে।

এই দৃশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডের। যেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারও পাখির কলতান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমোহিত করে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক বিরল প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। পাখার বাদামি রঙের কারুকাজ পাখিটিকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। পাখিটির নাম হলো ছোট ‘কালিপেঁচা’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Glaucidium Radiatum ও ইংরেজি নাম Jungle Owlet।

১৩ অক্টোবর ওই পাখি প্রথম নজরে পড়ে রাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজার।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাব যৌথভাবে তাকে নিয়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়। শেষে এর নাম লেখায় বাংলাদেশের নতুন পাখির তালিকায়।

নতুন প্রজাতির এই পাখির খবর খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এরপর থেকে দেশের আনাচ-কানাচে থেকে ছোট কালিপেঁচার ছবি তুলতে রাবিতে আসছেন পাখিপ্রেমীরা।

ছবিতে যেমন দেখা যায়, বাস্তবে তার সৌন্দর্য আরও বেশি। ছোট এই কালিপেঁচাটির একটি গোলাকার মাথা আছে এবং এটি সর্বত্র সূক্ষ্মভাবে বাঁধাযুক্ত। ডানাগুলো বাদামি ডোরাকাটা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে এ ধরনের ২৫০টি পেঁচার প্রজাতি আছে। বাংলাদেশেও ১৮টি প্রজাতি ছিল। তবে, এই পেঁচাটি অন্যটির থেকে একটু আলাদা। এর পাখার বাদামি রঙের কিছু কারুকাজ রয়েছে। যা তাকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দেশে আগে কখনও ওই পাখি দেখা যায়নি। রাবির সুউচ্চ গগন শিরীষ গাছে প্রথম দেখা যায়। এই প্রজাতির পাখি এককভাবে, জোড়ায় বা ছোট দলে পাওয়া যায়।

সাধারণত খুব ভোরে এবং সন্ধ্যায় তাদের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। পাখিটির দুটি উপ-প্রজাতি রয়েছে। একটি হলো jungle Owlet, আরেকটি হলো Asian Barret owlet পাখিটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সমভূমিতে পাওয়া যায়। এছাড়া এটি আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি  বলেন, এই প্রজাতির পাখি এর আগে বাংলাদেশের কোথাও কেউ দেখেনি। এছাড়া এই পাখিরা উঁচু ও অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছে বসবাস করতে পছন্দ করে। এখন দেশের খুব কম জায়গায় প্যারিস রোডের মত সুউচ্চ গাছ আছে। ফলে তাদের সঠিক আবাস্থল না থাকার কারণেও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার সমভূমি, আর্দ্র অঞ্চল এবং জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাখিদের দেখা যায়।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহ-সভাপতি তারেক অণু বলেন, এশীয়-দাগিপ্যাঁচার সঙ্গে এই নতুন এই পেঁচার কিছুটা সদৃশ্য বা মিল রয়েছে। আর এশিয়ান দাগিপ্যাঁচা সাধারণত দেশের সিলেট অঞ্চলে দেখা যায়।

জানতে চাইলে রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আমিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, ১৩ অক্টোবর সকালে হাঁটতে গিয়ে নতুন এই পাখিটি দেখি। পাখির সবকিছু দেখে মনে হয় এটি ছোট কালিপেঁচা হবে। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। এরপর এই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে যে এই পাখিটি ছোট ‘কালিপেঁচাই’।

তিনি আরও বলেন, এই প্রজাতির পাখি আগে দেশে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় একই ধরনের পাখি দেখে অনেকে ছোট ‘কালিপেঁচা’ দেখা কথা দাবি করলেও সেটির কোন প্রমাণ নেই। তবে, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রথম পাখিটি দেখা যায়। ফলে দেশের পাখি তালিকা আরও সমৃদ্ধ হলো।

রাবির প্যারিস রোড কেনো আবাসস্থল হিসেবে পছন্দ করলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের আবহাওয়া ও গাছগুলো এই প্রজাতির পাখিদের বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। তাই তারা এখানে আবাসস্থল গড়েছেন।

তবে, পাখিগুলো এখানে থাকবে কিনা এটির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাখিদের কোনোভাবে বিরক্ত করা হলে তারা আর থাকবে না। আর নতুন পাখির কথা শুনে বিভিন্ন সময় ফটোগ্রাফাররা ভালো ছবি তুলতে সর্বদা চেষ্টা করছেন। এটিতে তারা বিরক্ত হতে পারে। এছাড়া রাতে আলো দিয়ে ছবি তোলায় তারা ভয় পেয়ে চলে যেতে পারে। নতুন এই প্রজাতির পাখিকে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই রাবি অধ্যাপক ও পাখি গবেষক।