মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শেষপর্যন্ত মন্ত্রিসভায় থাকছেন। আপাতত আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই দুই মন্ত্রীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছেন না।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অর্থদণ্ডে দণ্ডিত দুই মন্ত্রীকে না সরানোর পক্ষে সরকারের এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আদালতের রায়ে দণ্ডিত হলেও এটি শপথ ভঙ্গের শামিল নয়। আদালতের রায়ের কারণে এই দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে ফেলতেই হবে, সংবিধানিক এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাই তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর চিন্তা নেই সরকারের।
সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হলে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে নানাদিকের চাপও বাড়তে পারে। রাজনৈতিক ঠাণ্ডা পরিস্থিতিও হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এসব স্পর্শকাতর বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।এছাড়া গত সরকারের আমলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দিয়ে ভুল হয়েছে বলেও মনে করেন সরকারের নীতি-নির্ধাকরা।
তবে সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য জানান, সরকারের ভেতরে গতির সঞ্চার করতে ক্ষমতায় থাকার
সময়ে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আসে। এ সরকারের দুই বছর শেষ হলো কিন্তু মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল আসেনি। তারা বলেন, আগামী বাজেটের পর মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনে সেই সময়ে কিছু হলে হতে পারে। এখনই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন এনে সরকারবিরোধী পক্ষকে সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ।
সূত্রগুলো আরও জানায়, আদালতের রায়ের পর দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করলে প্রধানমন্ত্রী তাদের উচ্চ আদালতে ‘রিভিউ’ করার পরামর্শ দেন। এছাড়া, আদালতের এ রায়ে দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা না থাকায় তাদের সরানোর চিন্তা আপাতত শেখ হাসিনার নেই বলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টরা জানান। রায়ের কোথাও মন্ত্রীদের সরিয়ে ফেলতে হবে—এমন নির্দেশনা না থাকায় বিষয়টিকে এখন হালকাভাবেই নিয়েছে আওয়ামী লীগও।
এছাড়া, বিষয়টি ফোজাদারি অপরাধ নয় যে, তাদের সরিয়ে ফেলতেই হবে। এটি কেবল আদালত অবমাননার মতো ঘটনা। এটি যে কারও আচার-আচরণে হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকার আইনি জটিলতা রয়েছে কিনা—তাও খতিয়ে দেখেছেন। আইনি কোনও জটিলতা না থাকায় ইস্যুটি নিয়ে ভাবছে না সরকার।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত মীর কাশেম আলীর সাজা বহাল থাকা না থাকা নিয়ে আসলে ওই সময়ে ১৬ কোটি মানুষই দুশ্চিন্তায় ছিল। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করে ওই দুই মন্ত্রী জনগণের দুশ্চিন্তার কথাই কেবল বলেছেন। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হয়ত আরও সংযত হতে পারত। তাহলে এ জটিলতার ভেতরে পড়তে হতো দুই মন্ত্রীকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন দুই মন্ত্রী, কিন্তু তাদের সরিয়ে ফেলতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এটাতো শপথ ভঙ্গের শামিল নয়। তিনি বলেন, তবে বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনও কোনও আলাপ হয়নি। তাই কী হবে—এখন বলা যাবে না। তিনি বলেন, আদালতের এই রায়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের জরিমানার রায়ে দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ হয়নি। সংবিধানের কোনও ধারাও লঙ্ঘিত হয়নি। ফলে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে—এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চাইলে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আদালতের জরিমানার আদেশে শপথ ভঙ্গ হয়নি। ফলে দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে ফেলার কোনও কারণ আমি দেখছি না। -বাংলা ট্রিবিউন