হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘অভাব দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। বাবা-মা কেউ পাশে ছিলেন না। নিজের পড়াশোনা চালানোটা কষ্টসাধ্য ছিল। কখনো গ্রামে গ্রামে খেলনা বিক্রি করেছি। অভাবে এডমিশনের কোচিং করতে পারিনি। আমার এক বড় আপুর নোট পড়েছি। তবে, সাহস ছিল অসীম। এজন্য এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছি।’
কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের ছেলে মো. আল-আমিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মাতক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটে সুযোগ পেয়েছেন। তার বাবা মো. খাইরুল ইসলাম। একজন ভ্যানচালক। মা মৌলুদা বিবি, গৃহিণী। তবে, বাবা-মা কারো সঙ্গে থাকার সুযোগ পাননি তিনি।
আল-আমিন বলেন, ছোটবেলায় মোটামুটি ভালো চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু ঘটনাক্রমে আমার বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ফলে অনেক কষ্টে বেড়ে উঠি এবং লেখাপড়া করি। তারমধ্যে বাবা চলে গেলেন সৎমাকে নিয়ে ঢাকায়। এদিকে পড়াশোনার খরচ কিভাবে সামলাবো চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঘরবাড়িহীন কখনো নানার বাড়ি, কখনো চাচার বাড়িতে থেকে কাজ করে পড়েছি।
তিনি জানান, একটা সময় একজন শিক্ষকের সহযোগিতায় মাদ্রাসার আবাসিক রুমে থাকতেন। কিন্তু চিন্তায় পড়লেন হাত খরচ ও বই খাতার টাকার। কালবিলম্ব না করে দু’জন ছাত্রকে পড়াতে লাগলেন। এভাবেই হুজুরদের সহায়তায় শেষ হলো আলিম (এইচএসসি-সমমান) জীবন। রেজাল্ট বের হলো, পেলেন জিপিএ-৪.৮৬। কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় চলে আসলেন ঢাকায়।
ভর্তি পরীক্ষায় কি কি করতে হয়, কেমনে দিতে হয় বুঝতেন না তখনো। বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাংলা প্রথমপত্র বই। কিন্তু ভুল ভাঙে দ্রুতই। বড় আপুর দেওয়া কিছু শিট দিয়েই যাত্রা শুরু করলেন। কিনতে পারেননি একটি বইও, কোচিং তো ছিল বিলাসিতা। আবেদন এবং কেন্দ্রে যাতায়াতের সমস্ত খরচ বহন করেছেন এক শুভাকাঙ্ক্ষী। যার নাম ছাড়া কিছুই জানেন না তিনি। আরও অবাক করা বিষয় হলো, তার ভর্তির খরচ যোগাতে চাঁদা তুলেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ, যাদের অনেককে চিনেনও না। এখন ঢাকায় থাকা-খাওয়ার ও পড়াশোনার খরচ আয়ের পথ খুঁজছেন আল-আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।