ঢাকা ১০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন ভাবনা: উর্বর মস্তিষ্কের প্রসব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ২০২১
  • ২৩৮ বার
রফিকুল ইসলামঃ ‘জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চাই’ – নব গঠিত বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সা’ব দল ঘোষণার অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান। এতে ‘মুখে ফুলচন্দন পড়ুক’ বলা যাচ্ছে না।
তাতে কি, এটা দল ও মতের স্বাধীনতা। দাবির পক্ষেও নিশ্চয় রয়েছে বলিষ্ঠ যুক্তি। তবে, সব যুক্তিতে মুক্তি মিলে না। যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, গাভী দুধ দেয়। এর রয়েছে চারটি পা; অন্যদিকে টেবিলেরও রয়েছে চারটি পা। সুতরাং টেবিলেও দুধ দেয়।

কৈশোরে ছাত্রজীবনে উৎসুক্যে একবার হাউজি খেলায় অংশগ্রহণে বেশ মজা নিলাম। একটি ছাপা ছোট্ট কাগজে 1 হতে 100 পর্যন্ত সংখ্যাগুলো কৌশলে এলোমেলো বসানো। মঞ্চে রাখা বাক্স ঘুরানোতে যে সংখ্যা কর্তৃপক্ষের হাতে উঠে, তা ছদ্মাকারে প্রকাশ করা হয় সংখ্যাটি কাটার জন্য। মঞ্চ থেকে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলেন, উল্টা-পাল্টা 6 অ্যান্ড 9 – সিক্সটি নাইন। তারপর চিল্লাইয়া উঠলেন, মাথা খারাপ 4 অ্যান্ড 9 – ফোরটি নাইন। ইত্যাদি ইত্যাদি …

গণ অধিকার পরিষদের দাবিকৃত প্রস্তাব অতো সরলীকরণ মোটেও নয়। বরং, সচলীকরণে একরাশ  অন্তর্ঘাতের ফ্লেভারে ধোকাবাজি লেবেলে বাজারজাত।

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনায় হাওয়া ভবনের দাফন শেষে ‘হাওয়াযুগ’ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে এক রৌদ্রোজ্জ্বল উন্নয়নের ‘স্বর্ণযুগে’। উন্নত দেশ গড়তে ২০৪১ সাল নাগাদ দলটির রয়েছে রূপকল্পও – ভিশন ২০৪১।

দেশটি হালে সত্যসত্যিই উন্নয়নের মহাসড়কে, যা অনেকেরই গা-জ্বালার কারণ বেটে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্নকরণের পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সানাই বেজে উঠবে, যাকে সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সা’বের এ দাবি উর্বর মস্তিষ্ক থেকে প্রসবকৃত সাম্রাজ্যবাদী বাগদান ঠেকছে।

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেন সর্ববৃহৎ শারদীয় উৎসবে কুমিল্লাতে দূর্গার পাদদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঐশীগ্রন্থ কুরআন শরীফ রাখার ঘটনায় এপার ও ওপার বাংলায় চলছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্প্রসারণ। একই বৃত্তগন্ধিতে বাংলাদেশ সরকারে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সদস্য আরেক তাহের ঠাকুর ডাইলা মাথাওয়ালা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ঘোষণাতেও চিতার আগুনে পরেছে দেশ, যা বিগত দিনে অত্যুৎসাহীদের কুত্তার মাথায় টুপি পরানোর পরিণতিতে না গড়ায়।

বাংলাদেশে মূর্তির পাদদেশে হিন্দুরা পবিত্র কালামুল্লাহ রাখতে যাবে কোন্ আক্কেলে! এতে যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। বাংলাদেশের কিছুকিছু জায়গায় আর ভারতের ত্রিপুরাইবা জ্বলে উঠবে কেন? সে সঙ্গে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সাহেবরাই বা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনী মেকাপের প্রয়াস পায় কোন্ লসাগু-গসাগু’তে!  সাবোটাজ বা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা ছাড়া? বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার কাছে ভারত এখন টেক্কা-ইসকাপন। আর জাতিসংঘ তো সাম্রাজ্যবাদীদেরই ঔরশজাত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতে সাম্প্রতিক দাঙ্গা বাংলাদেশে না ঢেউ লাগে। এহেনাবস্থায় জাতিসংঘের অধীনে নির্বচনের দাবি ফন্দি, না পাবনার ভাবনা? তয়, ফন্দির পাল্লাই ভারি; নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিটা যেখানে জাতিসংঘ। কে না-জানে, আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ এ ফোরামটি যে উল্লা বা ঘরজামাই।

দাবা খেলায় ঘুটি চালে প্রতিপক্ষক ঘায়েলে কতক বদবাক্য রয়েছে – ‘ঘোড়ার চাল আড়াই ফাল, রাজা চেক মন্ত্রী কাটা।’

‘জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন’ দাবি ‘আন্দোলনের লুজমোশন, ডাইলা মাথা আর ড. রেজা কিবরিয়া সা’বরার স্যালইন’ বৈকি! সম্যক পরিস্থিতি বিনি সুতার মালা না হলেও একই সুতোয় গাঁথা গত্যন্তর দেখছি না আপাতত।

আকাশে উড়ছে শকুন, রেডি যদি না থাকে বাণ; রাজ্য হবে খানখান। অতএব, নেত্রী শেখ হাসিনা- সাবধান!

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন ভাবনা: উর্বর মস্তিষ্কের প্রসব

আপডেট টাইম : ০৬:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ২০২১
রফিকুল ইসলামঃ ‘জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চাই’ – নব গঠিত বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সা’ব দল ঘোষণার অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান। এতে ‘মুখে ফুলচন্দন পড়ুক’ বলা যাচ্ছে না।
তাতে কি, এটা দল ও মতের স্বাধীনতা। দাবির পক্ষেও নিশ্চয় রয়েছে বলিষ্ঠ যুক্তি। তবে, সব যুক্তিতে মুক্তি মিলে না। যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, গাভী দুধ দেয়। এর রয়েছে চারটি পা; অন্যদিকে টেবিলেরও রয়েছে চারটি পা। সুতরাং টেবিলেও দুধ দেয়।

কৈশোরে ছাত্রজীবনে উৎসুক্যে একবার হাউজি খেলায় অংশগ্রহণে বেশ মজা নিলাম। একটি ছাপা ছোট্ট কাগজে 1 হতে 100 পর্যন্ত সংখ্যাগুলো কৌশলে এলোমেলো বসানো। মঞ্চে রাখা বাক্স ঘুরানোতে যে সংখ্যা কর্তৃপক্ষের হাতে উঠে, তা ছদ্মাকারে প্রকাশ করা হয় সংখ্যাটি কাটার জন্য। মঞ্চ থেকে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলেন, উল্টা-পাল্টা 6 অ্যান্ড 9 – সিক্সটি নাইন। তারপর চিল্লাইয়া উঠলেন, মাথা খারাপ 4 অ্যান্ড 9 – ফোরটি নাইন। ইত্যাদি ইত্যাদি …

গণ অধিকার পরিষদের দাবিকৃত প্রস্তাব অতো সরলীকরণ মোটেও নয়। বরং, সচলীকরণে একরাশ  অন্তর্ঘাতের ফ্লেভারে ধোকাবাজি লেবেলে বাজারজাত।

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনায় হাওয়া ভবনের দাফন শেষে ‘হাওয়াযুগ’ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে এক রৌদ্রোজ্জ্বল উন্নয়নের ‘স্বর্ণযুগে’। উন্নত দেশ গড়তে ২০৪১ সাল নাগাদ দলটির রয়েছে রূপকল্পও – ভিশন ২০৪১।

দেশটি হালে সত্যসত্যিই উন্নয়নের মহাসড়কে, যা অনেকেরই গা-জ্বালার কারণ বেটে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্নকরণের পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সানাই বেজে উঠবে, যাকে সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সা’বের এ দাবি উর্বর মস্তিষ্ক থেকে প্রসবকৃত সাম্রাজ্যবাদী বাগদান ঠেকছে।

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেন সর্ববৃহৎ শারদীয় উৎসবে কুমিল্লাতে দূর্গার পাদদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঐশীগ্রন্থ কুরআন শরীফ রাখার ঘটনায় এপার ও ওপার বাংলায় চলছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্প্রসারণ। একই বৃত্তগন্ধিতে বাংলাদেশ সরকারে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সদস্য আরেক তাহের ঠাকুর ডাইলা মাথাওয়ালা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ঘোষণাতেও চিতার আগুনে পরেছে দেশ, যা বিগত দিনে অত্যুৎসাহীদের কুত্তার মাথায় টুপি পরানোর পরিণতিতে না গড়ায়।

বাংলাদেশে মূর্তির পাদদেশে হিন্দুরা পবিত্র কালামুল্লাহ রাখতে যাবে কোন্ আক্কেলে! এতে যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। বাংলাদেশের কিছুকিছু জায়গায় আর ভারতের ত্রিপুরাইবা জ্বলে উঠবে কেন? সে সঙ্গে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সাহেবরাই বা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনী মেকাপের প্রয়াস পায় কোন্ লসাগু-গসাগু’তে!  সাবোটাজ বা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা ছাড়া? বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার কাছে ভারত এখন টেক্কা-ইসকাপন। আর জাতিসংঘ তো সাম্রাজ্যবাদীদেরই ঔরশজাত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতে সাম্প্রতিক দাঙ্গা বাংলাদেশে না ঢেউ লাগে। এহেনাবস্থায় জাতিসংঘের অধীনে নির্বচনের দাবি ফন্দি, না পাবনার ভাবনা? তয়, ফন্দির পাল্লাই ভারি; নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিটা যেখানে জাতিসংঘ। কে না-জানে, আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ এ ফোরামটি যে উল্লা বা ঘরজামাই।

দাবা খেলায় ঘুটি চালে প্রতিপক্ষক ঘায়েলে কতক বদবাক্য রয়েছে – ‘ঘোড়ার চাল আড়াই ফাল, রাজা চেক মন্ত্রী কাটা।’

‘জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন’ দাবি ‘আন্দোলনের লুজমোশন, ডাইলা মাথা আর ড. রেজা কিবরিয়া সা’বরার স্যালইন’ বৈকি! সম্যক পরিস্থিতি বিনি সুতার মালা না হলেও একই সুতোয় গাঁথা গত্যন্তর দেখছি না আপাতত।

আকাশে উড়ছে শকুন, রেডি যদি না থাকে বাণ; রাজ্য হবে খানখান। অতএব, নেত্রী শেখ হাসিনা- সাবধান!

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।