৪৫ বছর পর দুই বীরাঙ্গনার সন্ধান

দেশ স্বাধীনের প্রায় ৪৫বছর পর ভোলার তজুমদ্দিনে একই পরিবারের দুই বীরাঙ্গনার সন্ধান পাওয়া গেছে। এতোদিন তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আর প্রশাসন বলছে এখনো এ তথ্য জানে না তারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা বলছেন প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দ্বীপ জেলা ভোলা শহর থেকে অন্তত ৬৬কিলোমিটার দূরে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল শশীগঞ্জ গ্রাম। সেই গ্রামের আব্দুল মজিদ পাটোয়ারীর বাড়িতে বসবাস করছেন বীরাঙ্গনা দুই বোনের মধ্যে ছোট বোন মো. রেজাউল হকের স্ত্রী বিবি মালেকা। যুদ্ধের ওই সময় তার বয়স ছিলো ১৬বছর। অন্তঃসত্ত্বা বড় বোন বিবি ফাতেমার সেবা করতেই সেনাবাহিনীর হাবিলদার আব্দুল মান্নানের কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের বাসায় যান। তখনো বুঝতে পারেনি কি আছে তার জীবনে।
বিবি মালেকা বলেন, যুদ্ধ শুরুর পরের দিন ২৫বৈশাখ সকাল ৭টায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অভিযান চালায় তাদের ঘরে। খাটের নিচ আর বাথরুমে লুকিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সেনাবাহিনীর হাবিলদার আব্দুল মান্নানকে ঘরের বাহিরে নিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যার পর বাথরুমেই চলে দুই বোনের ওপর একসাথে অত্যাচার। সেখানেই শেষ নয়। ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা ইস্পাহানী কলেজে। সেখানে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে চলে ৯মাসের অত্যাচার আর নির্যাতন। পানি পর্যন্ত ঠিকমত খেতে দেয়া হত না। এক পর্যায়ে বড় বোন বিবি ফাতেমা জন্ম দিলো পুত্র সন্তান জাহাঙ্গীরকে। শেষ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হলে ৯মাস পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে উদ্ধার করে পাক বাহিনীর সেই নির্যাতনের সেল থেকে। পরে তাদের ৫শত টাকা দিলে তারা দেশের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিনে চলে আসেন।
এদিকে এখন সেই বীরাঙ্গনা দু্ই বোনের অবস্থা খুবই খারাপ। ছোট বোন অন্যের সহযোগিতায় হাঁটতে পারলেও বড় বোন ফাতেমা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। বেঁচে থাকার জন্য দুমুঠো ভাত জোটছে না ঠিক করে। তার ওপর শরীরে রয়েছে নানা ধরনের রোগ-বালাই। ভাতই জোটে না আবার ওষুধ। তাইতো চরম ক্ষোভ নিয়ে বিবি ফাতেমা বললেন, আমারা দেশের জন্য কিছুই কি করিনি। দেশের জন্য অত্যাচারিত হলাম। দেশ স্বাধীন হইলো আমগো খোঁজ কেউ নেয়নি। সরকার কোন কেয়ার নেয় না। আমার সন্তানরা খুব কষ্টে আছে। রক্ত আমরা দেই নেই ঠিক। কিন্তু যৌবন শেষ করেছিলাম। কি পাইছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি— টাকা চেয়েছে টাকা দিয়েছি। তার পরেও কোন সাহায্য পাইনি। স্বাধীনতার প্রায় ৪৫ বছর হলেও পাইনি কোন স্বীকৃতি।
এদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বীরাঙ্গনা বোন তজুমদ্দিনে আছে। এজন্য গর্ববোধ করি। দেশের স্বাধীনতার জন্য পাক হানাদার বাহিনী কাছে নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন। তাই আমরা যাতে দুই বোনকে স্বীকৃতি এনে দিতে পারি তার জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাজ করবে।
অপরদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, এটা সত্যি যে আমি এখনো শুনিনি। কয়েক জনের কাছ থেকে শুনলেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে তথ্য সঠিক হলে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি দেয়া ও পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতা করবো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর