ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

মহানবমীর পরদিন বিদায় নেবেন ত্রি-নয়না, ত্রৈম্বক্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১
  • ১৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সন্ধি পূজা শেষ। চলে গেছে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীর দিন। মণ্ডপের দুয়ারে এখন নবমী তিথি। তিনদিনের জন্য আসা মাহামায়াকে বিদায় জানানোর ক্ষণ নিকটেই। তাই ভক্তের চোখে জল। আর মাত্র একটি দিন, কাল দেবীর বিসর্জন।

যেও না জননী, আজি লয়ে তারা দলে

গেলে তুমি দয়াময়ী এ পরাণ যাবে।

উদিলে নির্দয় রবি উদয়অচলে

নয়নের মণি নয়ন হারাবে।’ (মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কাল থেকে আবার অপেক্ষার শুরু। তাই, অষ্টমীর রাত থেকে মহানবমীর দিন মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড়। শেষ দিনের আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত বাঙালি। বাঙালি এমন ব্যস্ততার ইতিহাস নতুন নয়, অনেক কাল আগের।

শারদীয়া দুর্গাপূজা আর্য-অনার্য সংস্কৃতির বিনিময়ের ইতিহাস। নীলনদ থেকে সিন্ধুনদ পর্যন্ত এলাকা ছিল মাতৃকা পূজার ক্ষেত্র। মহেঞ্জাদারো হরপ্পায় পাওয়া নারী মূর্তি সেই ইতিহাস বহন করছে। প্রাচীন সেই শক্তিবাদ অনার্যদের প্রকাশ।

শক্তি সাধনায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে প্রভাবিত রূপ থেকেই এখনকার রূপ।

প্রাচীন সেই নারীমূর্তি বা মাতৃদেবীর বিভিন্ন দেবতার সমন্বয়ে আজকের তেজোদীপ্ত মহামায়া। দেবী রুদ্র শক্তির প্রতীক। তিনি দানব ঘাতিনী, অশুভনাশিনী। শিবের প্রতিরূপ অনুয়ায়ী মঙ্গলদাত্রী মহাশক্তির রূপ। সেই শক্তিরূপা মহামায়া আমাদের সামনে চলে আসেন উমা, চণ্ডী, ভবানী, পার্বতী, দুর্গা রূপে। আরেকটা পরিচয় তিনি কাত্যায়নী। আবার, দেবকীর পেটে আদ্যাশক্তি জন্মলাভ করেও ‘নন্দসূতা’ নামে পরিচিত। মানে, দুর্গার জন্ম ইতিহাসে আছে গোপজাতীয় শাস্ত্রীয় প্রয়োগের কথা। মোটকথা, আর্য কৃষ্টির দ্যোতক বলে পরিচিত দেবী দুর্গা অনার্য কৃষ্টির সয়ম্ভু। এভাবেই ঋষি কাত্যায়ন দেবীর ‘ধ্যানকল্প’ মূর্তি নির্মাণ করে দেবতাদের ঐক্যমন্ত্রে দীক্ষিত করেন।

এরপর কৃত্তিবাস ওঝা পঞ্চদশ শতকে ইতিহাসের সেই সত্যকে দুর্গাপূজার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ, আর্যরা মূর্তি তৈরি করতে পারতো না। সেই আর্য-কুলতিলক রামচন্দ্রের দুর্গাপূজা করেন অনার্য রক্ষকুলসম্ভুত রাবণ।

বৈদিকদের আচার ছিল যাগ-যজ্ঞমূলক। মূর্তি পূজার প্রচলন শুরু হয়েছে এর অনেক পরে।

মনে করা হয়, গুপ্তযুগেই পৌরাণিক দেবদেবী পূজার প্রসার। তাই বলা যায়, আর্য কৃষ্টিতে দুর্গাপূজা অনার্য কৃষ্টির দান। মনে রাখা দরকার, কৃষি সভ্যতা সৃষ্টি করেছিল অনার্যরা। তাই, পূজার নবপত্রিকাটি সভ্যতার কৃষিদেবী ‘শাকম্ভরী’ রূপে অনার্য-ঐতিহ্য বহন করছে।

ভক্তি আর উৎসব সব একাকার হয়ে যায় মহাষ্টমীর সন্ধ্যা বেলায়। এরপর এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চান না ভক্তরা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মহানবমীর পুষ্পাঞ্জলি। এরপরে মহানবমীর মহাভোজ। নবমীর ভোগ মানেই ঝুরঝুরে ভাতের সঙ্গে পাঁঠার কষা মাংস। সন্ধ্যা হতেই জনজোয়ারে ভাসবে মণ্ডপ। কারণ, রাত পোহালেই বিদায় জানানোর তোড়জোড়। থাক সে কথা, আপাতত নবমীর আনন্দ বয়ে যাক।

এদিকে হোমাগ্নিতে চলছে দেবীর স্তুতি। প্রথা মেনে নবমীর বিশেষ পুজা। কোথাও হোম আবার কোথাও বলি। জীব হত্যার বদলে মাসকালাই, সুপারি, চালকুমড়া, আখ, মণ্ডা, চিনি বলি দেওয়া হয়।

জীব হত্যার বদলে বেলপাতার খাঁড়ায় চিনি বলিদানের অভিনব পন্থার উদাহরণ বাঙালির জীবনেই সম্ভব। কেউ কেউ ছাগল উৎসর্গ করে ছেড়ে দেন। নবমীর মণ্ডপে মণ্ডপে চলবে আরতি প্রতিযোগিতা।

রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। দিনভর চলবে চণ্ডীপাঠ। চলবে কীর্তন আর বন্দনা। পূজা শুরুর সময় যেমন সংকল্প তেমনই পূজা শেষের প্রক্রিয়া দক্ষিণান্ত।

উপাচারে চলছে দেবীর আরাধনা।

মহানবমীর দিন দেবীদুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ।

অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এদিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরের দিনটি বিজয়া আর বিসর্জনের। হোমযজ্ঞের ব্যবস্থায় বৈদিক বিধি মেনে রীতি অনুযায়ি ঋগ্বেদি, সামবেদি ও যজুর্বেদি হোমের ব্যবস্থায় ব্যস্ত পুরোহিত মহাশয়। মন্ত্রের সাথে যজ্ঞের আগুনে হবে পূর্ণাহুতি। শেষ হবে যজ্ঞ।

নবমীর পরেই বিষাদে ‘বিদায়’ জানাবেন ভক্তের দল। বিদায় নেবেন ত্রি-নয়না বা ত্রৈম্বক্য’। যাঁর বাম চোখে বাসনা বা চন্দ্র। ডান চোখে কর্ম বা সূর্য আর কেন্দ্রীয় চোখটি জ্ঞান বা অগ্নির প্রতীক।

সবমিলিয়ে দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার দিন। কারণ কালই ভক্ত হৃদয় কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দেবী।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

মহানবমীর পরদিন বিদায় নেবেন ত্রি-নয়না, ত্রৈম্বক্য

আপডেট টাইম : ১২:০৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সন্ধি পূজা শেষ। চলে গেছে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীর দিন। মণ্ডপের দুয়ারে এখন নবমী তিথি। তিনদিনের জন্য আসা মাহামায়াকে বিদায় জানানোর ক্ষণ নিকটেই। তাই ভক্তের চোখে জল। আর মাত্র একটি দিন, কাল দেবীর বিসর্জন।

যেও না জননী, আজি লয়ে তারা দলে

গেলে তুমি দয়াময়ী এ পরাণ যাবে।

উদিলে নির্দয় রবি উদয়অচলে

নয়নের মণি নয়ন হারাবে।’ (মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কাল থেকে আবার অপেক্ষার শুরু। তাই, অষ্টমীর রাত থেকে মহানবমীর দিন মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড়। শেষ দিনের আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত বাঙালি। বাঙালি এমন ব্যস্ততার ইতিহাস নতুন নয়, অনেক কাল আগের।

শারদীয়া দুর্গাপূজা আর্য-অনার্য সংস্কৃতির বিনিময়ের ইতিহাস। নীলনদ থেকে সিন্ধুনদ পর্যন্ত এলাকা ছিল মাতৃকা পূজার ক্ষেত্র। মহেঞ্জাদারো হরপ্পায় পাওয়া নারী মূর্তি সেই ইতিহাস বহন করছে। প্রাচীন সেই শক্তিবাদ অনার্যদের প্রকাশ।

শক্তি সাধনায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে প্রভাবিত রূপ থেকেই এখনকার রূপ।

প্রাচীন সেই নারীমূর্তি বা মাতৃদেবীর বিভিন্ন দেবতার সমন্বয়ে আজকের তেজোদীপ্ত মহামায়া। দেবী রুদ্র শক্তির প্রতীক। তিনি দানব ঘাতিনী, অশুভনাশিনী। শিবের প্রতিরূপ অনুয়ায়ী মঙ্গলদাত্রী মহাশক্তির রূপ। সেই শক্তিরূপা মহামায়া আমাদের সামনে চলে আসেন উমা, চণ্ডী, ভবানী, পার্বতী, দুর্গা রূপে। আরেকটা পরিচয় তিনি কাত্যায়নী। আবার, দেবকীর পেটে আদ্যাশক্তি জন্মলাভ করেও ‘নন্দসূতা’ নামে পরিচিত। মানে, দুর্গার জন্ম ইতিহাসে আছে গোপজাতীয় শাস্ত্রীয় প্রয়োগের কথা। মোটকথা, আর্য কৃষ্টির দ্যোতক বলে পরিচিত দেবী দুর্গা অনার্য কৃষ্টির সয়ম্ভু। এভাবেই ঋষি কাত্যায়ন দেবীর ‘ধ্যানকল্প’ মূর্তি নির্মাণ করে দেবতাদের ঐক্যমন্ত্রে দীক্ষিত করেন।

এরপর কৃত্তিবাস ওঝা পঞ্চদশ শতকে ইতিহাসের সেই সত্যকে দুর্গাপূজার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ, আর্যরা মূর্তি তৈরি করতে পারতো না। সেই আর্য-কুলতিলক রামচন্দ্রের দুর্গাপূজা করেন অনার্য রক্ষকুলসম্ভুত রাবণ।

বৈদিকদের আচার ছিল যাগ-যজ্ঞমূলক। মূর্তি পূজার প্রচলন শুরু হয়েছে এর অনেক পরে।

মনে করা হয়, গুপ্তযুগেই পৌরাণিক দেবদেবী পূজার প্রসার। তাই বলা যায়, আর্য কৃষ্টিতে দুর্গাপূজা অনার্য কৃষ্টির দান। মনে রাখা দরকার, কৃষি সভ্যতা সৃষ্টি করেছিল অনার্যরা। তাই, পূজার নবপত্রিকাটি সভ্যতার কৃষিদেবী ‘শাকম্ভরী’ রূপে অনার্য-ঐতিহ্য বহন করছে।

ভক্তি আর উৎসব সব একাকার হয়ে যায় মহাষ্টমীর সন্ধ্যা বেলায়। এরপর এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চান না ভক্তরা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মহানবমীর পুষ্পাঞ্জলি। এরপরে মহানবমীর মহাভোজ। নবমীর ভোগ মানেই ঝুরঝুরে ভাতের সঙ্গে পাঁঠার কষা মাংস। সন্ধ্যা হতেই জনজোয়ারে ভাসবে মণ্ডপ। কারণ, রাত পোহালেই বিদায় জানানোর তোড়জোড়। থাক সে কথা, আপাতত নবমীর আনন্দ বয়ে যাক।

এদিকে হোমাগ্নিতে চলছে দেবীর স্তুতি। প্রথা মেনে নবমীর বিশেষ পুজা। কোথাও হোম আবার কোথাও বলি। জীব হত্যার বদলে মাসকালাই, সুপারি, চালকুমড়া, আখ, মণ্ডা, চিনি বলি দেওয়া হয়।

জীব হত্যার বদলে বেলপাতার খাঁড়ায় চিনি বলিদানের অভিনব পন্থার উদাহরণ বাঙালির জীবনেই সম্ভব। কেউ কেউ ছাগল উৎসর্গ করে ছেড়ে দেন। নবমীর মণ্ডপে মণ্ডপে চলবে আরতি প্রতিযোগিতা।

রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। দিনভর চলবে চণ্ডীপাঠ। চলবে কীর্তন আর বন্দনা। পূজা শুরুর সময় যেমন সংকল্প তেমনই পূজা শেষের প্রক্রিয়া দক্ষিণান্ত।

উপাচারে চলছে দেবীর আরাধনা।

মহানবমীর দিন দেবীদুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ।

অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এদিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরের দিনটি বিজয়া আর বিসর্জনের। হোমযজ্ঞের ব্যবস্থায় বৈদিক বিধি মেনে রীতি অনুযায়ি ঋগ্বেদি, সামবেদি ও যজুর্বেদি হোমের ব্যবস্থায় ব্যস্ত পুরোহিত মহাশয়। মন্ত্রের সাথে যজ্ঞের আগুনে হবে পূর্ণাহুতি। শেষ হবে যজ্ঞ।

নবমীর পরেই বিষাদে ‘বিদায়’ জানাবেন ভক্তের দল। বিদায় নেবেন ত্রি-নয়না বা ত্রৈম্বক্য’। যাঁর বাম চোখে বাসনা বা চন্দ্র। ডান চোখে কর্ম বা সূর্য আর কেন্দ্রীয় চোখটি জ্ঞান বা অগ্নির প্রতীক।

সবমিলিয়ে দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার দিন। কারণ কালই ভক্ত হৃদয় কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দেবী।