ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস থ্রম্বোসিস কী, এর উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
  • ১৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৩ অক্টোবর, আজ বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস। জার্মান চিকিৎসক, রোগবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী এবং নৃতত্ত্ববিদ রুডলফ্‌ ভারচো, যিনি প্রথম ‘থ্রম্বোসিসে’র ধারণাটি নিয়ে কাজ করেন, প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর তার জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস পালন করা হয়। থ্রম্বোসিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে, ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস চালু করে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অন থ্রম্বোসিস এন্ড হেমোস্ট্যাটিস’।
থ্রম্বোসিস কী?
ধমনী বা শিরায় যখন রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তখন তাকে থ্রম্বোসিস বলে। পায়ের গভীরের শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধাকে ‘ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস’ (ডিভিটি) বলে। এর ফলে রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয় বা রক্ত চলাচলের গতি কমে যায়। যখন জমাটবদ্ধ রক্ত ফুসফুস রোধ করে, তখন তাকে ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ (পিই) বলে। ডিভিটি এবং পিই একত্রে ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম (ভিটিই) সৃষ্টি করে।

থ্রম্বোসিসের কারণে বিশ্বের চারজনের মধ্যে একজন মারা যান, কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। থ্রাম্বোসিসের কারণে হৃদপিন্ডেও রক্তজমাট বাধতে পারে। অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন, হৃদপিন্ডের ভালভে সমস্যা থাকলে, হৃদপিন্ডে ভালভ লাগানো থাকলে, ব্লকজনিত কারণে হৃদপিন্ডের দেওয়াল দুর্বল থাকলে রক্ত জমাট বাধতে পারে। এক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, থ্রম্বোএম্বোলিক স্ট্রোক এবং ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম হতে পারে।

লক্ষণ এবং উপসর্গ
পায়ের ডিমে বা থাইয়ে ব্যথা, পায়ের পাতা বা গোছ ফুলে যাওয়া, পায়ের রঙের লক্ষণীয় পরিবর্তন, পা ঠাণ্ডা বা অনুভূতিহীন হয়ে যেতে পারে। পালমোনারি এম্বোলিজম থাকলে শ্বাস গ্রহণে সমস্যা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, বুকে ব্যথা (গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে), দ্রুত হৃদসঞ্চালন, মাথা হালকা অনুভূত হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ঝুঁকির বিষয়
ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি- যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অস্ত্রোপচার হয়েছে, ক্যানসারে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন চলাফেরা করতে পারেন না, যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, ইস্ট্রোজেনযুক্ত ওষুধ ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা বা সদ্যোজাতের। ৬০ শতাংশ ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজমের ঘটনা দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর।

প্রতিরোধ কীভাবে
থ্রম্বোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে যে উন্নত ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তাতে থ্রম্বোসিস প্রতিরোধযোগ্য।

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন থেকে সাবধান হতে হবে। স্মোকিং থেকে দূরে থাকতে হবে। ডায়েট ঠিক রাখতে হবে। ভূষি আটা, পালিস না করা চাল, কার্বোহাইড্রেট, পরিস্রুত জল, সবুজ শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়া দরকার। প্রয়োজনে কোনো ডায়াটিশিয়ানকে দিয়ে খাবারের চার্ট বানিয়ে নেয়া যেতে পারে।

শরীরের ফিটনেস বজায় রাখার জন্য বি.এম.আই নর্মাল রাখতে হবে। কর্মক্ষম রাখতে হবে নিজেকে। এরোবিক্স এবং যোগার মাধ্যমে শরীরের ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। সব থেকে ভালো এক্সারসাইজ হল প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা। বর্তমান জীবনে প্রায় প্রতিটি মানুষ স্ট্রেস ও টেনশনে ভোগেন। স্ট্রেস ও টেনশন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মেডিটেশন ও প্রাণায়াম করা যেতে পারে। জীবনশৈলী ঠিক রাখতে হবে। আস্তে-আস্তে কথা বলা, চটজলদি রেগে না যাওয়া এ সবই লাইফ স্টাইলের মধ্যে পড়ে। কারো যদি থ্রম্বোসিসের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে অবশ্যই একজন নিউরো ডাক্তারের কাছে যান কিংবা এমন কোনো হসপিটালে যেখানে সবরকম চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস থ্রম্বোসিস কী, এর উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায়

আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৩ অক্টোবর, আজ বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস। জার্মান চিকিৎসক, রোগবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী এবং নৃতত্ত্ববিদ রুডলফ্‌ ভারচো, যিনি প্রথম ‘থ্রম্বোসিসে’র ধারণাটি নিয়ে কাজ করেন, প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর তার জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস পালন করা হয়। থ্রম্বোসিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে, ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস চালু করে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অন থ্রম্বোসিস এন্ড হেমোস্ট্যাটিস’।
থ্রম্বোসিস কী?
ধমনী বা শিরায় যখন রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তখন তাকে থ্রম্বোসিস বলে। পায়ের গভীরের শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধাকে ‘ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস’ (ডিভিটি) বলে। এর ফলে রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয় বা রক্ত চলাচলের গতি কমে যায়। যখন জমাটবদ্ধ রক্ত ফুসফুস রোধ করে, তখন তাকে ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ (পিই) বলে। ডিভিটি এবং পিই একত্রে ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম (ভিটিই) সৃষ্টি করে।

থ্রম্বোসিসের কারণে বিশ্বের চারজনের মধ্যে একজন মারা যান, কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। থ্রাম্বোসিসের কারণে হৃদপিন্ডেও রক্তজমাট বাধতে পারে। অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন, হৃদপিন্ডের ভালভে সমস্যা থাকলে, হৃদপিন্ডে ভালভ লাগানো থাকলে, ব্লকজনিত কারণে হৃদপিন্ডের দেওয়াল দুর্বল থাকলে রক্ত জমাট বাধতে পারে। এক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, থ্রম্বোএম্বোলিক স্ট্রোক এবং ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম হতে পারে।

লক্ষণ এবং উপসর্গ
পায়ের ডিমে বা থাইয়ে ব্যথা, পায়ের পাতা বা গোছ ফুলে যাওয়া, পায়ের রঙের লক্ষণীয় পরিবর্তন, পা ঠাণ্ডা বা অনুভূতিহীন হয়ে যেতে পারে। পালমোনারি এম্বোলিজম থাকলে শ্বাস গ্রহণে সমস্যা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, বুকে ব্যথা (গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে), দ্রুত হৃদসঞ্চালন, মাথা হালকা অনুভূত হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ঝুঁকির বিষয়
ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি- যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অস্ত্রোপচার হয়েছে, ক্যানসারে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন চলাফেরা করতে পারেন না, যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, ইস্ট্রোজেনযুক্ত ওষুধ ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা বা সদ্যোজাতের। ৬০ শতাংশ ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজমের ঘটনা দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর।

প্রতিরোধ কীভাবে
থ্রম্বোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে যে উন্নত ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তাতে থ্রম্বোসিস প্রতিরোধযোগ্য।

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন থেকে সাবধান হতে হবে। স্মোকিং থেকে দূরে থাকতে হবে। ডায়েট ঠিক রাখতে হবে। ভূষি আটা, পালিস না করা চাল, কার্বোহাইড্রেট, পরিস্রুত জল, সবুজ শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়া দরকার। প্রয়োজনে কোনো ডায়াটিশিয়ানকে দিয়ে খাবারের চার্ট বানিয়ে নেয়া যেতে পারে।

শরীরের ফিটনেস বজায় রাখার জন্য বি.এম.আই নর্মাল রাখতে হবে। কর্মক্ষম রাখতে হবে নিজেকে। এরোবিক্স এবং যোগার মাধ্যমে শরীরের ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। সব থেকে ভালো এক্সারসাইজ হল প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা। বর্তমান জীবনে প্রায় প্রতিটি মানুষ স্ট্রেস ও টেনশনে ভোগেন। স্ট্রেস ও টেনশন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মেডিটেশন ও প্রাণায়াম করা যেতে পারে। জীবনশৈলী ঠিক রাখতে হবে। আস্তে-আস্তে কথা বলা, চটজলদি রেগে না যাওয়া এ সবই লাইফ স্টাইলের মধ্যে পড়ে। কারো যদি থ্রম্বোসিসের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে অবশ্যই একজন নিউরো ডাক্তারের কাছে যান কিংবা এমন কোনো হসপিটালে যেখানে সবরকম চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে।