দেশীয় পরমাণু বিদ্যুতের ‘হৃৎপিণ্ড’ বসেছে, চালু হবে ২০২৩ সালে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজে বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের প্রধান যান্ত্রিক অবকাঠামো ভিভিইআর-১২০০ চুল্লিপাত্র বা নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করেছেন প্রকৌশলীরা। আগামীকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যু ৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটির নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে। এই ইউনিট প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে এতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। সমান সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট একই বছরের শেষ দিকে বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু করতে পারবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎেকেন্দ্রের প্রধান যান্ত্রিক অংশ হলো রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের হৃৎপিণ্ড বলা যেতে পারে। এটি ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে। এর আগে ভূমি-ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি যা কাজ রয়েছে তার প্রায় পুরোটাই যান্ত্রিক ও কারিগরি।

 

এ প্রসঙ্গে প্রারম্ভিক প্রকল্প পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, চলতি বছরের মধ্যে মোট কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট চালু করা যাবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বসানো হয়েছে। এরপর স্টিম জেনারেটর বসানো হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে কোল্ড টেস্ট, হট টেস্ট এবং সিস্টেম টেস্ট করা হবে। ধাপে ধাপে কাজগুলো শেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশলের দুই অধ্যাপক বলেন, অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিদ্যুতের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ একটি ভালো বিকল্প। এতে পরিবেশ দূষণও কম হয়। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কয়েকটি ঝুঁকি, ভীতি ও শঙ্কা রয়ে গেছে। এ ধরনের কেন্দ্রে দুর্ঘটনার ফলাফল মারাত্মক হয়।

সর্বশেষ জাপানের ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিদ্যুৎপান্দ্রে দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তার ফলাফলও ভীতিকর। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকন্দ্রও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করা যাবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেননা গ্রিড প্রস্তুত না হওয়ায় এক বছরেও ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা কেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করা যায়নি।

ড. শৌকত আকবর বলেন, বিদ্যুত্ কেন্দ্রটিতে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রে ১০০ বছরে যে পরিমাণ পানি লাগবে তা পদ্মা নদী থেকেই সংগ্রহ করা যাবে। কেন্দ্রটিতে একটির স্থানে দুটি কুলিং টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে। তাই পানি শীতল করে আবার উেস পাঠাতেও সমস্যা হবে না।

প্রকল্পে কর্মরত একজন প্রকৌশলী জানান, বাংলাদেশে কেন্দ্রটি নির্মাণে ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তির রি-অ্যাকটর ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের সর্বশেষ প্রযুক্তি। নতুন প্রযুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রে কোন কোন বিষয়ে সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনায় এনে এই প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। তার পরও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কোনো তেজস্ক্রিয়তা বাতাসে সহজে ছড়াবে না। এমনকি দুর্ঘটনা হলেও ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজেই তার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর্থিক বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সিংহ ভাগ খরচ (৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি) রাশিয়া সরকারের ঋণসহায়তা থেকে নির্বাহ করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর